1. লোক

মাগুরা অঞ্চলের লোকজ খাবার

চিড়াঃ মাগুরা অঞ্চলে চিড়াকে চিড়ে বলা হয়। চিড়া ও আখের গুড় বেশ মজার খাবার গ্রাম এলাকায়। ম্যাশিনের মাধ্যমে বর্তমানে বেশ উন্নতমানের চিড়া তৈরী করা হয়। রোগীর পথ্য হিসাবেও ভেজানো চিড়া একটি প্রচলিত খাবার। 

মুড়িঃ গ্রামাঞ্চলে বালি, কড়াই ও ঝাজর এর মাধ্যমে মুড়ি ভাজা একটি পরিচিত দৃশ্য। সকালবেলা দাদা-দাদী ও নানা-নানী তাদের নাতি-নাতনিদেরকে নিয়ে গুড়-মুড়ি খাওয়ার দৃশ্য এখন অনেকটা কমে গেছে। গ্রাম ও শহর অঞ্চলে চিড়া-মুড়ি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হতো। কিন্তু রূপান্তর ধারায় সে স্থান দখল করে নিয়েছে বিস্কুট, চানাচুর, নুডলস প্রভৃতি আধুনিক খাবার।  

পাটালীঃ খেজুরের গুড় আর পাটালীর জন্য মাগুরা অঞ্চলের বেশ খ্যাতি রয়েছে। শীতের সময় মাটির চুলা ও কড়াইয়ে খেজুরের রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরী করা হয়। সেই গুড় থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরী করা হয় পাটালী। গ্রামাঞ্চলে চিড়া ও মুড়ির সাথে গুড় অথবা পাটালী একটি লোকজ খাবার। এই গুড় আর পাটালী বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। এছাড়া অন্যান্য জেলায়ও এসব গুড়-পাটালী রপ্তানী করা হয়। 

রসের খীরঃ মাগুরা অঞ্চলে খেজুরের রস থেকে রান্না করা হয় খীর। বিশেষ করে মসজিদ, দরগা, মন্দির, বটগাছ, পাকড়  গাছের নীচে লোকজ বিশ্বাস থেকে মানত করে রসের খীর রান্না করে শিরনি হিসাবে মানুষের মাঝে পরিবেশন করা হয়।     

পান্তা ভাতঃ বাঙালীর ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে পান্তা ভাত। খুব ভোরে কৃষক তার লাঙল-গরু নিয়ে মাঠে যান জমি চাষ করতে। এতটা সকালে ভাত খেয়ে মাঠে যাওয়া হয় না কৃষকের। কৃষকের মেয়ে বা বৌ গামছায় পেঁচিয়ে মাঠে নিয়ে যায় পান্তা ভাত। প্রায়ই তরকারী মেলে না এই পান্তা ভাতে। উপায় কি? কাঁচা মরিচতো আছেই, তার সাথে থাকে পেয়াজ। এই খাবারই কৃষক পরিবারের সকালের দৈনন্দিন খাবার গ্রাম বাংলার কৃষক পরিবারে। তবে কৃষকের লাঙল যেমন বিলীন হয়ে যাচ্ছে পাওয়ার টিলার এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে তেমনই হারিয়ে যাচ্ছে পান্তাভাত আর কাঁচা মরিচের পরিচিত স্বাদ। 

জাউঃ গ্রাম বাংলার অভাবী পরিবারে অনেক সময় তরকারী মেলে না। সে ক্ষেত্রে অসিদ্ধ চাউলের জাউ হতে পারে বিকল্প খাবার। বেশি পানি ও লবণ দিয়ে ভাত নরম করে জাউ রান্না করা হয়। এক সময় মাগুরায় ভুরোর জাউয়েরও প্রচলন ছিল। কিন্তু সেটা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

প্রসাদঃ মাগুরার লোক-সংস্কৃতির একটি অংশ প্রসাদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজা পার্বণে নরম খিচুড়ি, মিষ্টি কিংবা বিভিন্ন ফল হতে পারে সুস্বাদু প্রসাদ। 

মুয়া(মুড়ি/খই/চিড়া)ঃ মাগুরার বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুরের গুড় ও মুড়ি কিংবা খই কিংবা চিড়া দিয়ে তৈরী করা হয় মুয়া। এই মুড়া একটি সুস্বাদু লোকজ খাবার। তবে এসব মুয়া এখন বানিজ্যিকভাবেও বিক্রি করা হয় বিভিন্ন অঞ্চলে। 

খেজুর রসঃ শীতের সকালের মিষ্টি রোদে খেজুর গাছ থেকে নামানো মাটির কাড়ে থেকে গøাসে ঢালা রস আর মুড়ি খুবই লোভনীয় অনেকের কাছে। তবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে এ সংস্কৃতি অনেকটাই ¤øান হতে চলেছে।  

কুমড়ো বড়িঃ মাস কলাই ডাল আর কুমড়ো দিয়ে তৈরী বড়ি যখন তরকারীতে যোগ করা হয় তখন স্বাদের ক্ষেত্রে যোগ হয় নতুন মাত্রা। বড়ি বানিয়ে শাড়ীতে শুকাতে দেওয়া গ্রাম বাংলার একটি পরিচিত দৃশ্য। মাগুরাও তার বাইরে নয়।  

নাড়ুঃ নারিকেল আর চিনি দ্বারা তৈরী নাড়ু অনেকের কাছে বেশ লোভনীয় খাবার। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে বিভিন্ন পূজার সময় নাড়– তৈরী করা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির একটি অংশ। 

পিঠাঃ মাগুরা অঞ্চলের লোকজ খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পিঠা যাকে গ্রামাঞ্চলে বলা হয় পিঠে। নবান্ন উৎসব ও শীতের মৌসুমেই এসব পিঠা তৈরীর আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পিঠার মধ্যে ধূপি পিঠা, চিতোই পিঠা/কাঁিচ পোড়া পিঠা, রসে ভেজা পিঠা, ভাজা পিঠা, পাটি সাপটা পিঠা, কুলসি পিঠা, পাকান পিঠা, কলাবড়া, তালবড়া, ছই পিঠা/হাতে কাটা সেমাই, বিস্কুট পিঠা উল্লেখযোগ্য।

মন্তব্য: