1. সদর

মাগুরা সদর উপজেলার প্রধান খাদ্যশস্য ও চাষাবাদ

মাগুরা জেলাধীন উপজেলাগুলোর মধ্যে সদর উপজেলাটির উত্তরাঞ্চল কিছুটা উচু এবং দক্ষিণ অঞ্চল কিছুটা নিচু হওয়ার কারণে এর খাদ্যশস্য ও চাষাবাদের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। কয়েক দশক আগেও যে সব ফসলের চাষ হতো অত্র অঞ্চলে তাদের মধ্যে বেশ কিছু ফসল বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিছু বিলুপ্তির পথে, আবার কিছু ফসল ধরে রেখেছে তাদের সমহিমা ও গুরুত্ব। 

মাগুরা সদর উপজেলার আঠারখাদা, হাজীপুর, কছুন্দি, বগিয়া, রাঘবদাইড়, জগদল, গোপালগ্রাম ইউনিয়নের গ্রামসমূহে ধান, পাট, সবজী, রবিশস্য। টেঙ্গাখালীর মরিচ এর দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া এই ইউনিয়নের কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এছাড়া রাঘবদাইড়, কাঞ্চনপুর, বেরোইল, পাটকেলবাড়িয়া, বালিয়াডাঙ্গা, মালঞ্চি, বৃত্তিপাড়া, সান্ধা লক্ষীপুর, বাসুদেরপুর গ্রাম সম‚হে তামাকের চাষ করে কৃষকেরা। হাজরাপুর ইউনিয়নব্যপি লিচু চাষে খ্যাতি রয়েছে। এখানকার লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। নন্দলালপুর, গৌরিচরণপুর, রাজারামপুর, গাঙগুলিয়া, নওয়াপাড়া, ইছাখাদা, মিঠাপুর, খালিমপুর, হাজরাপুর, উথলিয়া প্রর্ভতি গ্রাম লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত। কুশাবাড়িয়া, মহিষাডাঙ্গা, সত্যপুর, ছয়চার, বড়কড়ি, শেখপাড়া, মঘী, আড়–য়াকান্দি, আন্দোলবাড়িয়া, লস্করপুর,কামারপাড়া, দক্ষিণ নওয়াপাড়া, রাজিবের পাড়া, বুধোইরপাড়া, তিতারখা পাড়া, মাজগ্রাম, দাসনা, দক্ষিণ বীরপুর, খানাবাড়িয়া, কাপালীডাঙ্গা, নিধিপুর, বিষ্ণপুর, আঙ্গারদাহ, কেচুয়াডুবি, কৃষ্ণারামপুর, টিলা, ভাবনহাটি, কাপাশাটি ও উত্তর দরি লক্ষিপুর গ্রামসমূহে ধান, পাট,  রবিশস্য চাষ করা হয়। তবে এসব গ্রামগুলোর ধান চাষের জন্য বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া এসব গ্রামে বেল, আমড়া, কলা, নারকেল, পেয়ারার চাষ হয় এবং এসব ফল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। শিমুলিয়া, লস্করপুর, মাধবপুর, বিল আকছি, বেড় আকছি, নরশিংহাটি, জগদল, সৈয়দ রূপাটি, দমদমা, রূপাটি, আজমপুর, ছনপুর, খর্দ্দ ছনপুর, শেহলাডাঙ্গা, জাগলা, লক্ষিপুর প্রভৃতি গ্রামে ধান ও পাট চাষের পাশাপাশি আখ এর চাষ করা হয়। নিশ্চিন্তপুর, আরাজী শ্রীকুন্ডি, গলেশ্বরপুর, বাওড়ভাঙ্গা, ঘোড়ানাচ, গোবিন্দপুর, ধলহরা, আরাজী বারোইখালী, চাঁদপুর, শিরিজদিয়া, জয়েনদিয়া, বুজরুক শ্রীকুন্ডি, মালিকগ্রাম, গোয়ালখালী, শ্রীকুন্ডি, ঘোড়ামারা, বুচিতলা, চাউলিয়া ও সাজের কান্দি গ্রামগুলোতে সবজি চাষে খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া এই গ্রামগুলোতে ধান, পাট ও আখের চাষও করা হয়। শত্রæজিৎপুর, বারোইখালী, কালুপাড়া, ফাজিলা, রূপদাহ, সিংহডাঙ্গা, দুর্গাপুর, বনগ্রাম, ধর্মদাহ, বিষ্ণুপুর, পয়ারী ও ভাটপাড়া গ্রামে ধান, পাট, আখ ও সবজি চাষের পাশাপাশি প্রচুর পরিমান পান চাষ করা হয়। ভাটপাড়া ও পয়ারী গ্রামে প্রায় ৫০ টি পানের বরজ রয়েছে।  শত্রæজিৎপুরের আম বাগান জেলার বৃহৎ আম বাগান। এই বাগানের আম দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। নলো নগর, মনিরামপুর, সেনেরচর, দীঘলকান্দি, বাটাজোড়, ডাঙ্গা সিংহড়া, বেরোইল পলিতা, ডহর সিংড়া, বামনডাঙা, চেঙ্গারডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, চর বিজয়খালী, পার পলিতা, চাঁদপুর, সত্যবানপুর, ভাঙ্গুড়া ও জালিয়াভিটা ধান ও পাটের পাশাপাশি এই ইউনিয়নে নারকেল ও সুপারীর প্রাচুর্য রয়েছে। চাপড়া, বাটিকাবাড়ি, শ্রীকান্তপুর, বড়শলই, আসবা, উত্তর ধর্মসীমা, আমুড়িয়া, কুলি­য়া, কুচিয়ামোড়া, বাকা হরিশপুর, নাওখালি, গাংনি, পাটখালী ও দক্ষিণ শিমুলিয়া গ্রামগুলো বিল সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ধানই এখানকার প্রধান ফসল। তবে এক সময় গলদা চিংড়ি ও দেশজ মাছের জন্য এক সময় গ্রামগুলো বিখ্যাত ছিল। গোপালগ্রাম ইউনিয়ন এর গ্রামগুলোতে ধান, পাট ও পান চাষ করা হয়।  

মাগুরা সদর উপজেলায় বর্তমানে উৎপাদিত, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় অন্যান্য ফসলাদিঃ 

ধানঃ মাগুরা অঞ্চল ধান চাষে বিখ্যাত হলেও এ অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে আমান ও আউশ ধানের চাষ। যে পরাঙ্গী ধানের চাউলের ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু সেই পরাঙ্গী ধান বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিলুপ্ত হতে চলেছে মুড়ি তৈরীর ধান শিশুমতি ধান এবং চিড়া তৈরীর ধান গদাডাঙ্গা। এছাড়াও হাইব্রীড ধানের প্রাচুর্যে বিলুপ্ত হতে চলেছে ছোটমল্লিকে, আশ্বিনে, কাইহো ও গস্তা প্রজাতির ধান। বিলুপ্ত হয়ে গেছে যে সব ধান তার মধ্যে রয়েছে বেনামুতা ধান। ধানটি আমন প্রজাতির। অত্যন্ত চিকন চাউল হতো। ভাতের জন্য বেনামুতা ধানের চাউল খুবই চমৎকার। হলুদ বর্ণের মধুমালা ধানও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ধান খুব লম্বা। আমন প্রজাতির এ ধান ভাদ্র মাসে কাটা হতো। গৌর কাজল ধান দেখতে কালো। আমন প্রজাতির এ মোটা ধানও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও বিলুপ্ত আমন ধানের মধ্যে রয়েছে খুনে মটর, দেবমনি ও ছত্রভোগ ধান। 

মেস্তাঃ মাগুরার বিভিন্ন গ্রামে পাটের যথেষ্ঠ চাষ থাকলেও মেস্তার চাষ বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্তির পথে তুষা পাটের চাষও। ইন্ডিয়ান বীজের প্রাচুর্যে দেশী প্রজাতির পাট ও মেস্তা এখন বিলুপ্তপ্রায়। 

ভুরোঃ ভুরো নামক ফসলটি কয়েক দশক হলো মাগুরা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভুরোর বীজ আউশ ধানের জমিতে ছিটিয়ে দেওয়া হতো। আলাদা জমিতেও ভুরোর চাষ করা হতো। ভুরোর চাউল দিয়ে পায়েশ, ভাত, জাউ (খীর) রান্না করা হতো। আগেকার দিনে ভুরোর জাউ রোগীদের পথ্য হিসাবে ব্যবহার করা হতো। 

চিনেঃ দেখতে অনেকটা ভুরোর চাউলের মতো। কিন্তু ভুরোর তুলনায় আকৃতিতে ছোট। চিনের চাউল দ্বারা ভাত ও পায়েস রান্না করা যায়। ফসলটি মাগুরা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

কাউনঃ গোল গোল দানা সদৃশ ফসল। সরিষার মতো দেখতে অনেকটা। কাউন দিয়ে ভাত, জাউ, পায়েশ রান্না করা হতো। এ ফসলটিও মাগুরা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

যবঃ যব হলো গমের মতো দেখতে। তবে যবের গায়ে হুল আছে। যবের ছাতু একদা মাগুরা অঞ্চলে প্রচলিত খাবার হিসাবে খাওয়া হতো। যবের আটার রুটিও বানানো হয়। আখের গুড়ের সাথে যবের ছাতু একটি তৃপ্তিকর খাবার। এ ফসলটি বিলুপ্তপ্রায়। মাগুরা অঞ্চল থেকে। 

হুলে জাবা আখঃ আমাদের দেশজ এই আখের জাতটি মাগুরা অঞ্চলে এক সময় প্রচুর পরিমানে চাষ করা হতো। এই আখের গুড় ও পাটালি অত্যন্ত সুস্বাদু। বিলুপ্ত হতে চলেছে এই মিষ্টি আখের জাত।   

খেসাড়ীঃ খেসাড়ী হলো ডাউল প্রজাতির শস্য। সাধারণত বর্ষায় জমে থাকা অল্প পানিতে কিংবা স্যাঁতসেতে জায়গায় খেসাড়ী ডাউলের চাষ করা হয়। ধানের ভেতরও বোনা যায় ফসলটি। খেসাড়ী গাছ গরুর খাবার হিসাবেও বোনা হতো কয়েক দশক আগে। কিন্তু বর্ষা কমে যাওয়ার কারণে ফসলটির চাষ একেবারেই কমে গেছে মাগুরা অঞ্চলে। 

তিষি (মষনে)ঃ তিষি হলো এক প্রকার তৈলবীজ। ছোলা অথবা মসুরির খেতে তিষি বুনতে দেখা যায়। আবার আলাদাও চাষ করা যায় তিষি। তিষির তেল ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তিষির চাষ মাগুরা অঞ্চলে আগে প্রচুর হলেও বর্তমানে এর চাষ একেবারেই কমে গেছে।    

ছোলাঃ ডাউল প্রজাতির শস্য মাগুরার অন্যতম সেরা রবি শস্য হলেও এর চাষ অনেকটাই কমে গেছে অত্র অঞ্চল থেকে। এই ফসলটি এখন অনেকের কাছে তারুণ্যের স্মৃতি হয়ে আছে। কারণ শুকনো ছোলা মাঠ থেকে উঠিয়ে মাঠেই পুড়িয়ে ছোলাপোড়া খেয়ে তারুণ্যের উচ্ছ¡াসে মেতে উঠতো। সেইসব দিন অনেকের কাছে ¤øান হয়ে গেছে। 

মসুরীঃ মাগুরার বিভিন্ন গ্রামে মসুরী (ডাউল প্রজাতি) চাষ যথেষ্ঠ পরিমানে রয়েছে।  

মটরঃ মটর শাক ও মটর ডাউল সুস্বাদু খাদ্য। এই ডাউলের চাষ কমে গেছে মাগুরা অঞ্চল থেকে। 

মুগ ডাউলঃ মুগ ডাউলের চাষ এক সময় প্রচুর পরিমানে হতো মাগুরায়। বর্তমানে এর চাষ নেই বললেই চলে। মুগ ডাউলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ডাউল হলো সোনা মুগ। বীনা মুগের কারণে দেশী প্রজাতির মুগ ডাউল এর চাষ বিলুপ্ত হতে চলেছে। 

মাস কলাইঃ চালকুমড়ার থেকে খাবার বড়ি তৈরীর সময় মাস কলাইয়ের ডাউল ব্যবহার করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে ডাউল কুমড়োর বড়ি তৈরী করে শুকানোর দৃশ্য আমাদের গ্রাম্য ঐতিহ্যের একটি অংশ। মাস কলাই ও চাল কুমড়া থেকে তৈরীকৃত বড়ি তরকারীতে ব্যবহার করার ফলে এর স্বাদের মাত্রা কয়েকগুন বৃদ্ধি করে।  

মিষ্টি আলুঃ এক সময় নদীর পাড়, খালের পাড় দিয়ে এমনকি মাঠেও প্রচুর পরিমান মিষ্টি আলুর চাষ হতো মাগুরায়। কিন্তু এই আলুর চাষ অনেক কমে গেছে। বলা যায় বিলুপ্তির পথে। 

ভুট্টোঃ ভুট্টোর চাষের প্রচলন আগে মাগুরায় ছিল না। কিন্তু এখন মাগুরা জেলায় ভুট্টোর চাষ শুরু হয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে নয়।  

দেশী তরমুজঃ মাগুরার কুমার নদীর চরে, দুই পাড়ে এবং মাঠে এক সময় প্রচুর পরিমান দেশী তরমুজের চাষ হতো। দেশি তরমুজগুলো বেশ বড় আকৃতির হয়ে থাকে। এই তরমুজের চাষও অনেক কমে গেছে। 

বাঙ্গিঃ মাগুরার বিভিন্ন নদীর পাড়ে, চরে এবং মাঠে তরমুজের মতোই চাষ হতো বাঙ্গি। কিছু বাঙ্গি লম্বাটে আবার কিছু বাঙ্গি গোল আকৃতির হয়ে থাকে। কিছু বাঙ্গি বেলে প্রকৃতির, আর কিছু বাঙ্গি এঁটেল প্রকৃতির হয়ে থাকে।  

কালো জিরাঃ কালো জিরার রয়েছে অনেক ভেষজ গুন। কালো জিরা থেকে তেল উৎপাদন করা হয়। কালো জিরা তরকারী ও অন্যান্য খাবারের সাথেও ব্যবহার করা হয়। কালো জিরার ফুলের মধু অন্য যে কোন মধুর চেয়ে অনেক বেশি গুনাগুন সম্পন্ন। এক সময় কালো জিরার চাষ হতো মাগুরা অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে। কিন্তু এর চাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে এ অঞ্চলে। 

তিলঃ তিল হলো একটি তৈলবীজ। তবে তিল অন্যান্য খাবারের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তিলের তৈরী খাজার সুখ্যাতি রয়েছে মাগুরায় অনেক আগে থেকেই। কয়েক দশক পূর্বে তিলের চাষ মাগুরায় প্রচুর পরিমানে হলেও এর চাষ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তিন প্রকারের তিলের চাষ হয় মাগুরায়। কৃষ্ণ তিল দেখতে কালো, গা মসৃন। অন্যান্য দুই প্রজাতির তিল যথাক্রমে কালো ও খসখসে এবং বাদামী। 

গুয়ো মৌরিঃ নিরামিষ তরকারী ও ডাউল রান্নায় পাঁচ ফোড়ঙের সাথে এটি ব্যবহার করা হয়। গুয়ো মৌরির চাষ পূর্বে প্রচুর পরিমানে হলেও এর চাষ কমে এসেছে এই এলাকায়। 

অড়হরঃ অড়হর হলো ডাউল প্রজাতির বীজ। এই ফসলটি জমির আইলে প্রচুর পরিমানে জন্মানো হতো মাগুরায়। কিন্তু ফসলটি এখন বিলুপ্তির পথে।  

কলাঃ মাগুরা জেলায় বর্তমানে কলার চাষ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন প্রজাতির কলা চাষ করছে অত্র অঞ্চলের চাষিরা। কলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধুপি ফেসাড়ী, সবরি, চাঁপা সবরি, অমৃত সাগর, সাগর কলা, কাচ কলা, কানাই বাঁশি, বয়ার বোট, আনাচি, ইচে কাঁঠালে, পানিতারা, কাচ কলা প্রভৃতি কলার চাষ মাগুরায় প্রচলিত রয়েছে। তবে বিচি কলার উৎপাদন মাগুরা থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে।  

বেগুনঃ এক সময় মাগুরায় প্রচুর কাঁটা বেগুনের চাষ হতো প্রচুর পরিমানে। কিন্তু অত্যন্ত সুস্বাদু এই বেগুন বিলুপ্তির পথে শুধুমাত্র হাইব্রীড বেগুন এর প্রভাবে। তবে কালো সয়লা বেগুন, সবুজ সয়লা বেগুন, গোল লাফা বেগুন ছাড়াও বিভিন্ন হাইব্রীড প্রজাতির বেগুন চাষ হচ্ছে মাগুরায় প্রচুর পরিমানে। 

মরিচঃ বিভিন্ন মরিচের চাষ রয়েছে মাগুরায়। কিন্তু বিলুপ্ত হতে চলেছে উব্দে মরিচের প্রজাতি। এছাড়া চারখাদা মরিচও বিলুপ্তির পথে। আষাড়ে মরিচ ও জিয়া মরিচের চাষ বেড়ে গেছে মাগুরায়। 

ধনেঃ ধনের চাষ মাগুরায় পূর্বে তেমন হতো না। তবে বর্তমানে এর চাষ অনেকটা বেড়ে গেছে। কারণ মানুষ এখন ধনে তরকারীতে ব্যবহার করার পাশাপাশি এর পাতা সালাদ সহ অন্যান্য খাবারেও ব্যবহার করে। ধনে পাতার ঘ্রাণ অত্যন্ত মিষ্টি হওয়ার কারণেই এর ব্যবহার বেড়ে গেছে।      

টমেটোঃ টমেটোর চাষ মাগুরায় প্রচুর পরিমানে বেড়ে গেছে। দেশি টমেটোর পাশাপাশি, বিদেশী ও হাইব্রীড প্রজাতির টমেটোর চাষ হচ্ছে মাগুরায়। টমেটোর সালাদ মানুষের এখন অনেক লোভনীয় খাবার। 

উচ্ছেঃ ভেষজ গুনের কারণে মাগুরায় ক্রমে ক্রমে মাঠ উচ্ছে ও করল্লার চাষ বাড়ছে। আমাদের গ্রাম-পল্লীতে এই সবজিকে উস্তে বলা হয়। তবে বাড়িতে বাড়িতে টালে ও মাচায় যে উচ্ছের চাষ হতো সেটি অনেকটায় কমে গেছে।   

মিষ্টি কুমড়াঃ হাইব্রীড মিষ্টি কুমড়ার কোয়ালিটি ও উৎপাদনের পরিমান অত্যন্ত বেশি হওয়ার কারণে দেশী মিষ্টি কুমড়া বিলুপ্তির পথে।

চাল কুমড়াঃ পাকা চাল কুমড়া ডাউলের বড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা চালকুমড়া সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কুমড়ার এই দ্বিমুখী ব্যবহারের কারণে দেশি ও হাইব্রীড চাল কুমড়ার চাষ বেড়ে গেছে।  

চিনা আলু/কেশর/শাক আলুঃ এই আলু মাটির নীচে উৎপাদিত হয়। এই আলু দেখতে শাদা বর্ণের। আগে মাগুরা অঞ্চলে প্রচুর পরিমান চিনা আলুর উৎপাদন হলেও বর্তমানে এর চাষ তেমন হয় না। এই আলু কাঁচা খেতে হয়। 

মেটে আলুঃ মেটে আলু লতা জাতীয় গাছের শেকড়ের সাথে আবার কান্ডের সাথেও মেটে আলু ঝুলে থাকে। সবজি হিসাবে এই আলু রান্না করে খাওয়া হয়। মিষ্টি আলুর মতো এই আলু পুড়িয়েও খাওয়া যায়। 

শশাঃ বাড়িতে বাড়িতে টালে ও মাচায়  শশা ঝুলে থাকতো সেটা এখন বিলুপ্তির পথে। শশা এখন মাঠে বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এবং আমাদের দেশজ শশার স্থান অনেকটা দখল করে নিয়েছে খিরা। সালাদ হিসাবে শশা ও খিরার ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। 

পেপেঃ হাইব্রীড পেপের প্রভাবে আমাদের সেই সুস্বাদু দেশী পেপের চাষ কমে গেছে। অনেক জায়গায় এটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।  

পটলঃ হাইব্রীড পটল ও বিদেশী জাতের পটলের ভীড়ে দেশী পটলের বিলুপ্তি হতে চলেছে। 

চিচিংগা/উষিঃ এখন শুধু বাড়ির টালে বা গাছে গাছে নয়, মাঠে আবাদ হচ্ছে  চিচিংগা। 

ঝিংগাঃ উষির মতো ঝিংগারও চাষ হচ্ছে বানিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন মাঠে। 

ঢেঁড়শ/ভেন্ডিঃ পলক জাতের ভেন্ডির আগ্রাসনে দেশি জাতের ভেন্ডি বিলুপ্ত হতে চলেছে।

শাকঃ মাগুরায় চাষের আওতায় রয়েছে লাল শাক, ডাটা শাক, পুই শাক, কচু শাক, পালন শাক ও মুলার শাক। বিলুপ্ত হতে চলেছে আমুনে ডাটা, কাটোয়ার ডাটা ও বাঁশপাতা ডাটা।  

খেজুর গাছঃ খেজুরের রস ব্যবহার অনেক কমে গেছে। শীতের সকালে খেজুর রসে মুড়ি ভিজিয়ে বিভিন্ন বয়সী মানুষের গøাসে চুমুক দৃশ্য আমাদের গ্রামীন সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু ¤øান হয়ে যাচ্ছে সেই সংস্কৃতি। খেজুর গাছগুলো কেঁটে ইট-ভাটায় পোড়ানোর ফলে মাগুরায় খেজুর রসের উৎপাদন এবং গুড়-পাটালির উৎপাদন অনেক কমে গেছে। 

মাগুরায় উৎপাদিত প্রধান ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিছু, আমড়া, বরই, নারিকেল, বেল, তাল, খেজুর, পেয়ারা প্রভৃতি। এসব ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, বরই (হাইব্রীড) ফলগুলো বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মাগুরায়। 

তথ্যপ্রদানকারীঃ 

এটি এম আনিচুর রহমান 

বয়সঃ ৪৪ বছর

পিতাঃ মোঃ আতিয়ার রহমান

গ্রামঃ নান্দুয়ালী

উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বি এ (অনার্স) এম এ, এল এল বি

পেশাঃ শিক্ষকতা ও কৃষিকাজ

শুশান্ত কুমার বিশ্বাস

বয়সঃ ৫৬ বছর

পিতাঃ মৃত ভীষ্মদেব বিশ্বাস

গ্রামঃ গোপিনাথপুর 

উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ এইচ এস সি

পেশাঃ গ্রাম্য ডাক্তার ও কৃষি কাজ

আব্দুল জলিল বিশ্বাস

পিতাঃ মৃত আব্দুল গনি বিশ্বাস

বয়সঃ ৬২ বছর

গ্রামঃ মাজগ্রাম

উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।

মন্তব্য: