1. স্মরণীয় বরণীয়

পৃথ্বীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য (১৯০৮ – ১৯৯০)

পৃথ্বীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯০৮ সালের ২৬ মার্চ, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন আমতৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এডভােকেট যদুনাথ ভট্টাচার্য ও মাতা শ্রীমতি অন্নপূর্ণা ভট্টাচার্য- এই আমতৈল গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মাগুরা শহরেই- পৃথবীশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের প্রাথমিক শিক্ষাজীবনশুরু হয়। ১২ বছর বয়সের সময় তিনি তাঁর পিতাকে হারিয়ে বিধবা মাতার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে শ্রীপুর এম.সি হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং উক্ত হাইস্কুল থেকে ১৯২৫ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন এবং উক্ত কলেজ থেকে ১৯২৭ সালে আই.এ পাস করেন। এরপর কলকাতা সিটি কলেজে ভর্তি হন এবং উক্ত কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে বি.এ পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে সাথে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ এবং ১৯৪১ সালে তিনি বি.টি পাস করেন। পিতৃধারানুযায়ী শিক্ষাজীবন শেষ করেই তিনি সাহিত্যসাধনায় ব্রতী হয়ে উঠেন। ‘কার্টুন’ তার লেখা প্রথম উপন্যাস। বইটি চিত্রায়িত হয় ১৯৪৮ সালে। শিক্ষকতা ছিল তার পেশা তিনি অনেকগুলাে হাইস্কুলে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। ভারতের দমদমের নিকট কাদিহাটি হাইস্কুলে তিন বছর,মাদারীপুর হাইুলে পাঁচ বছর (১৯৩৮ – ১৯৪৩) এবং শ্রীপুর মহেশচন্দ্র হাইস্কুলে

বহুদিন শিক্ষকতা করেন। এই স্কুলে তাঁর প্রিয় ছাত্র ছিলেন (মরহুম) অধ্যাপক মােল্লা এবাদত হােসেন, (মরহুম) অধ্যাপক ও কবি আজীজুল হক,  ড, শফিউদ্দিন জোয়ারদার ও সদর উদ্দিন সাহেব। দেশ ভাগের পর তিনি দেশ ত্যাগ করে কলকাতা শহরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। সবশেষে তিনি কলকাতা শহরতলীর বরা নগর বিদ্যা মন্দি হাইস্কুলে সুদীর্ঘ দিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সারাজীবনই তিনি ধর্মভীরু ছিলেন। পৃথবীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ২২ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় লরি পৃষ্ট হয়ে মারা যান। আবৃত্তি ও অভিনয়ে খুবই পারদর্শী ছিলেন তিনি। তার নাট্যজগতের সুযােগ্য শিষ্য বাবু ডা: মনীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (কানুবাবু)।

পৃথ্বীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ‘ভারত বর্ষ’, ‘মাসিক বসুমতী’, ‘প্রবাসী’, ‘নবযুগ’, ‘আত্মশক্তি’, ‘নবশক্তি, ‘বেতারজগত’ (পূজা সংখ্যা), ‘সােনার বাংলা’ (ঢাকা থেকে প্রকাশিত) প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন।

তার প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘কার্টুন’ (১৯৩৯), ‘পতিতা ধরিত্রী (১৯৪০), ‘মরানদী (১৯৪২), ‘বিবস্ত্র মানব’ (১৯৯৪৪), ‘দেহ ও দেহাতীত (১৯৪৫ ভারত বর্ষ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল); ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ (১৯৪৮); ‘যৌবনের অভিশাপ’, ‘অভিশপ্ত যৌবন’, ‘পৃথিবীর প্রেম’, ‘শিল্পী’, ‘সোনার পুতুল’ (১৯৫০), পতঙ্গ’ ১ম পর্ব (১৯৫১, প্রবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল); পতঙ্গ’ ২য় পর্ব (১৯৫৩); ‘ওরা কাজ করে’ (১৯৫২), ‘নিরুদ্দেশ’ (১৯৫৫,ভারতবর্ষ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল), ‘যোগিনীর মাঠ’, ‘আদিম পিপাসা’ (১৯৭৯), ‘সাহিত্যিক’ (১৯৫৪), ‘রূপসী নগরী (১৯৫৭), ‘অনেক আলাের অন্ধকারে (১৯৬০), ‘শ্বাস্বত যৌবন’ (১৯৬২), ‘বিশ্ব সাহিত্য শরৎচন্দ্র (১৯৬৫) ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘বিশ্ব সাহিত্য শরৎচন্দ্র’ গ্রন্থটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সহযােগী পুস্তক হিসেবে তৎকালীন সময়ে রাজশাহী, দিল্লী, বেনারস ও গােহাটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলােতে পড়ানাে হয়। তার সর্বশেষ লেখা ‘আদিম পিপাসা’ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক তথ্যপূর্ণ একটি উপন্যাস। এ গ্রন্থটি তৎকালীন সময়ে সুধীমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।

মন্তব্য: