1. স্মরণীয় বরণীয়

প্রফেসর ড. রশীদুল আলম (১৯৩৫- )

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক প্রফেসর ড. রশীদুল আলম, এম,এ, ট্রিপল পি, এইচ, ডি ১৯৩৫ সালের ২৭শে জানুয়ারি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন ধৌয়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মােল্লা মােহাম্মদ আরমান উল্লাহ ও মাতার নাম মােছাঃ তছিরন নেসা। রশীদুল আলম বড়রিয়া মাদারাসার অন্তর্গত মকতবে প্রথমে পাঠ শুরু করেন। এখানে তিনি প্রাথমিক শ্রেণীর পাঠ সমাপ্ত করেন।  ১৯৪৩ সালে তাঁকে মহম্মদপুর আর, কে, এইচ, ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করা হয়। উক্ত হাইস্কুল থেকে ১৯৫০ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ১৯৫১ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে উক্ত কলেজ থেকে তিনি প্রথম বিভাগে আই.এ পাস করেন। দৌলতপুর বি,অন কলেজে বি,এ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে ৫ম স্থান অধিকার করে বি,এ পাস করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম, এ (দর্শন) প্রিলিমিনারি শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫৬ সালে উত্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,এ শেষ বর্ষ পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে মৌলভীবাজার কলেজে যােগদান করেন। ১৯৬১ সালে নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে দর্শনের প্রভাষক হিসেবে যােগদান করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় বিভাগে এম.এ পাস করেন এবং ১৯৭० সালে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম, এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি নিকেতনে পি.এইচ.ডি করার উদ্দেশ্যে তাকে পত্র লেখে। সেখান থেকে তাকে বাংলাভাষায় ‘রবীন্দ্রকাব্যে আমির ক্রমবিকাশ’ বিষয়ের উপর পি.এইচ.ডি করার সুযােগ প্রদান করা হয়। ১৯৫৭ সালে তিনি মানিকগঞ্জের মােহাম্মদ নবির উদ্দিন আহমেদ ও জাহেদা খাতুন এর কন্যা লুৎ্ফন আরা বেগমকে বিবাহ করেন। ১৯৮১ সালের নভেম্বর মাসের দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় “রবীন্দ্রকাব্যের আমির ক্রমবিকাশ” থিসিসের উপর পি.এইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করে। তিনি ভাষা দার্শনিক “ব্যাট্রান্ড রাসেলস লজিক্যাল এটমিজম” এর উপর গবেষণা এবং ১৯৮৪ সালেতে তিনি কলকাতা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি. লিটের থিসিস হিসেবে জমার উদ্যোগ নেন এবং ১৯৮৬ সালে তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন।

শৈববকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি প্রশংসনীয় ফলাফল লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করার পরে ৬ই মার্চ ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মে যােগদান করেন। পরে তিনি সহযােগী সহকারি অধ্যাপক পদে উন্নিত হন। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ১৫টি এম ফিল ও পি.এইচ.ডি গবেষণা পরিচালনা করেন। এই গবেষণার বাইরেও তিনি আর কিছু সংখ্যক গবেষণা পরিচালনা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেন। এই সময় থেকে তিনি গ্রন্থ লেখেন এবং নওগাঁ থেকেই প্রকাশ করেন।  তার প্রকাশিত গ্রন্থ মুসলিম দর্শনের অমি (১৯৬৯); দর্শনের ভূমিকা (১৯৭২); ‘কোরানের দর্শন (১৯৮৬); ‘সমাজ দর্শনের ভূমিকা (১৯৮৬); সুফি সাধনার ভূমিকা (১৯৮৬); ‘ইতিহাস কথা কয় (কাব্নােঙ্গর বিহীন (কাব্য বাং-১৩৯৬); ডিগ্রি ক্লাসের পাঠ্যপুস্তক সহজ যুক্তিবিদ্যা পরিচয় (১ম খণ্ড) অবরােহ এবং সহজ যুক্তিবিদ্যা : পরিচয় (২য়খণ্ড) আরােহ। এই দুই খণ্ড বই এবং সহজ মনােবিজ্ঞান পরিচয় ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে ঢাকার দিদার পাবলিশিং হাউস থেকে বের হয়। অতঃপর তাঁর নীতিশাস্ত্র পরিচয় (১৯৬৮) আমির চিন্তাধারার ক্রমবিকাশ (Bartand Russell’s Logical Atomism) (১৯৯০); স্যার সৈয়দ আমীর আলী দ্য স্পিরিট অব ইসলাম (জুলাই ২০০২, অনুবাদগ্রন্থ) এবং রবীন্দ্রকাব্যের আমির ক্রমবিকাশ, পি.এইচ.ডি থিসিস’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত। ‘শহীদ জিয়া দর্শন; আমি (কাব্যগ্রন্থ); দার্শনিক প্রবন্ধাবলী; ও কোরানের বুদ্ধির মুক্তি ইত্যাদি। তিনি এ পর্যন্ত দর্শন বিষয়ের উপর প্রায় ২০টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

দৈনিক বাংলাদেশ, ‘রাজশাহী বার্তা; দৈনিক বার্তা, প্রতীতি মিযান, ‘নবারুণ, নবদিগন্ত, চেতনা, বাংলাদেশ দর্শন, পত্রিকা, অনেষণ, মনন, ডিটেকটিভ, গােধুলী মন, সাহিত্যিক, প্রভৃতি পত্র পত্রিকায় তার কবিতা প্রবন্ধাবলী প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বন্দে আলী মিয়া শ্মারক গ্রন্থ ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৮৪ ইত্যাদিতে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

প্রফেসর রশীদুল আলম প্রায় অর্ধ-শতাধিক গ্রন্থের জনক। পাশাপাশি অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম ও সমাজ জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি লিখে থাকেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ও প্রবন্ধাবলীর মধ্যে জীবন জগৎ সমাজ, ধর্ম সম্পর্কে তার নিজস্ব দৃষ্টি এবং উপলক্ধি ব্যক্ত করেছেন বলে অভিমত পােষণ করেন। প্রফেসর ড. রশীদুল আলম গবেষণায় মনীষা ও পাণ্ডিত্যের জন্য রাজশাহী উত্তরা সাহিত্য মজলিশ কর্তৃক ১৯৮৭ সালে পুরস্কৃত হয়েছেন। 

মন্তব্য: