1. মাগুরা

মাগুরার পূরাকীর্তিঃ

ভাতের ভিটা- মাগুরা সদর উপজেলার টিলা গ্রামে ভাতের ভিটা নামে ভিটার মত একটি পূরাকীর্তি রয়েছে। মাগুরা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। অনেকের মতে এখানে অলৌকিকভাবে এক রাতে একটি মসজিদ নির্মাণ হতে গিয়ে রাত্রি শেষে পাখি ডেকে উঠলে আর মসজিদটি তৈরী হয়নি। এখানে অনেক ভাত রান্না করে যে স্থানে রাখা হয়েছিল সেখানকার নাম হয় ভাতের ভিটা। হাড়ি-বাসন পরিস্কার করা আবর্জনা যেখানে ফেলা হয়েছিল সেখানে জিয়ার হালি খাল নামক খাল তৈরী হয়। মঘীর দক্ষিণ পাশে যেখানে হাড়ি পরিস্কার করার ঝিনুক ফেলা হয়েছিল সেখানে তৈরী হয় ঝিনেই হালি খাল। অনেকের অভিমত ভাতের ভিটাসহ এই নামগুলো শুধুই কাল্পনিক নাম। এই ভাতের ভিটাকে ঘিরে এলাকায় লোকবিশ্বাস তৈরী হয়। বলা হয় এটি ছিল জ্বীনদের কাজ। পরবর্তীতে এখানে অনেক জঙ্গল জন্ম নেয়। এই ভিটায় একটি বড় বরই গাছ ছিল। বরই গাছটির পাতা বা ডাল কেউ কাটতো না, কাটার সাহসও পেত না। যদি কেউ কাটতো তাহলে গলা দিয়ে রক্ত উঠে সে মারা যেত অথবা তাদের ছেলেপুলে মারা যেত। এই ভিটা কেউ খনন করার বা এর উপরে জুতা সেন্ডেল কেউ ওঠার সাহসও পেত না। এখানে অনেকে বিভিন্ন রোগ মুক্তির আশায় বিভিন্ন ধরনের মানত করতো, এখনও করে দূর-দূরান্তের অনেক মানুষ। হিন্দু মুসলমান সবাই এখানে কেউ ভাত রান্না করে নিয়ে আসে, কেউ বাতসা কিনে এখানে বিলি করে, কেউবা মোরগ-মুরগী এনে এখানে ছেড়ে দেয়। অনেক আগে এই ভিটার উপর একটি ছিদ্র ছিল। এই ছিদ্র দিয়ে কাঁচের বল ফেললে দুড়–ম করে শব্দ হতো। পাকিস্তান সরকার আমলে পাকিস্তানী সেনারা এই ভিটা খনন করতে এলে তারা এটি খুঁচতে সাহস পায়নি। অনেকে এখানে সেবা দিত, কেউ আবার এখানকার মাটি পবিত্র মনে করে খেত। বিষয়গুলো ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি হওয়ায় এলাকাবাসির উদ্যোগে পরবর্তীতে ফুরফুরা পীর সাহেব ফজলুল করিমকে এনে এটি খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি কোদাল দ্বারা কয়েক কোপ দিলে তার ২৫০ মুরিদ এখানকার জঙ্গল পরিস্কার করে এবং ভিটাটি খনন করতে শুরু করে। লোকজ বিশাস এই যে, পীরের মাধ্যমেই জ্বীনেরা এই স্থান ত্যাগ করে ও বিভিন্ন ক্ষতিকর উপসর্গ থেকে এলাকাবাসী মুক্তি পায়। এই খননের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন খনন কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে সরকারী উদ্যোগে এটি খনন করা হয়। এখানে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের সদৃশ কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। বিশষজ্ঞদের মতে এটি ২৩০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধদের একটি কীর্তি। এখানে বৌদ্ধ পুরোহিতগন কক্ষগুলোতে উপাসনা করতো। 

ভীমরাজার কুঠিবাড়ি ও শান বাঁধানো ঘাট- পুরাতন দলিল মারফত জানা যায় টিলা গ্রামের পূর্ব নাম ছিল ভ্রমরদাহ। ২৫০ বছর পূর্বে ভিমরাজা নামে এক রাজা এই গ্রামে বাস করতেন। তার নাম অনুসারেই এই গ্রামের নামকরণ করা হয় ভ্রমরদাহ। ভীমরাজা গ্রামের চার পাশে প্রতিরক্ষার জন্য গড় খনন করেন। গড়ের অপর পূর্ব পাশের গ্রাম ছিল টিলা। পরবর্তীতে ভাতের ভিটাটি টিলার মত অনেক উচু হওয়ার কারণে ভ্রমরদাহ গ্রামের নাম হয়ে যায় টিলা আর পূর্বের টিলা গ্রামটির নাম হয়ে যায় ছোট টিলা। এই টিলা গ্রামেই ভীমরাজার কুঠি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়। এখানে ফটকী নদীতে ভীম রাজার আমলের শান বাঁধানো ঘাট এখনও এই পূরাকীর্তির সত্যতা বহন করে চলেছে। 

[তথ্যঃ আব্দুস সামাদ শেখ (৬৫), পিতাঃ মৃত আলেক শেখ, টিলা, মাগুরা ও হাবিবুর রহমান, মঘী, মাগুরা।

মন্তব্য: