1. স্মরণীয় বরণীয়

মােল্লা এবাদত হােসেন (১৯৩০ – ২০০২)

মােল্লা এবাদত হােসেন ১৯৩০ সালের ১ মার্চ, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন সারঙ্গদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এয়ার উদ্দীন মােল্লা ও মাতার নাম বড়ু বিবি। এবাদত হােসেন প্রথমে কাজলী নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃত্তি লাভের পর হাটদ্বারিয়াপুর উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওখান থেকে বৃত্তি লাভের পর তৎকালীন আমতৈল মাইনর স্কুলে (বর্তমান আমতৈল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ভর্তি হন। মাইনর স্কলারশিপ লাভের পর শ্রীপুর মহেশ চন্দ্র উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। উক্ত স্কুল থেকে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে তিনি বাগেরহাট প্রফুল্ল চন্দ্র (পি.সি) কলেজে ভর্তি হন। উক্ত কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে আই.এ এবং ১৯৫১ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৫১ সালেই তিন রাজশাহী জেলার গােদাগাড়ী হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন এবং কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৫২ সালে অধ্যাপক মশাররফ হােসেনের (তৎকালীন বাগেরহাট কলেজের অধ্যাপক) অনুরােধে তিনি কচুয়া করনেশন সােবহান হাই স্কুলে যােগদান করেন এবং এই স্কুলে বছর খানিক থাকার পর তিনি তাঁর নিজের স্কুল শ্রীপুর মহেশ চন্দ্র হাইস্কুলে যােগদান করেন। এরপর আমতৈল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুখ্যাত শিক্ষক জনাব ইব্রাহিম বিশ্বাসের অনুরােধে তিনি শ্ৰীপুর হাইস্কুল ত্যাগ করেন এবং আমতৈল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। উক্ত স্কুলে সুদীর্ঘ পাঁচ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে এম.এ পাস করার পর তিনি দৌলতপুর বি.এল কলেজে চাকরি পেয়ে যােগদান করতে যাবার পথে তৎকালীন মাগুরা হােসেন শহীদ সােহরাওয়াদী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলতামাসুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব মৌলানা মােখলেছুর রহমান সাহেব তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুরােধ করেন তাঁর কলেজের বাংলা বিভাগের শূন্যপদে যােগদান করতে। পরবর্তীতে তিনি দৌলতপুর বি.এল কলেজে যােগদান না করে মাগুরা হােসেন শহীদ সােহরাওয়াদী কলেজে বাংলা বিভাগে বাংলার

অধ্যাপক হিসেবে যােগদান করেন। মাগুরা কলেজে অধ্যাপনার পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যােগদান করেন। তিনি সুদীর্ঘ ত্রিশ (৩০) বছর যাবৎ অধ্যাপনায় রত ছিলেন। নিষ্ঠুর নিয়তির অমােঘ পরিহাসের শিকার হয়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর জীবনে আসার আগেই তিনি প্রথমে দুরারােগ্য কিডনি রােগে আক্রান্ত হন এবং পরে পায়ে গ্যাংরিন হয়ে সারাজীবনের মতাে পঙ্গু হয়ে যান। এহেন পরিস্থিতিতে গ্রামের নিজবাড়িতে আসা তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। সুদীর্ঘ দশ বছর পঙ্গু অবস্থায় ঘরে বন্দি জীবন-যাপন করে ২০০২ ইং সালের ৪ মার্চ, তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বিধবা স্ত্রী ড. মাজেদা খাতুন তিনি দীর্ঘদিন শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনিও গর্বিত স্বামীকে অনুসরণ করে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখেন।

তিনিও মাগুরাজেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের একমাত্র পুত্র সন্তান ড. ইমন গর্বিত পিতাকে অনুসরণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।

তিনি তাঁর দাদীআম্মার কাছেই লালিত-পালিত হয়েছিলেন। এই দাদীআম্মাকে নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলােচনা করেছেন তাঁর ‘আপনার চেয়ে আপন যেজন’ গ্রন্থে। মােল্লা এবাদত হােসেন শৈশবজীবন থেকেই সাহিত্যের প্রতি মনােযােগী ছিলেন। সেই সময় থেকে তাঁর লেখার অভ্যাস ছিল। স্কুলজীবনেই তাঁর প্রথম প্রবন্ধ সাহিত্য ও সাহিত্যিক মন তৎকালীন বিখ্যাত পত্রিকা সওগাতে প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন বাংলাসহিত্যের একজন বলিষ্ঠ গবেষণামূলক প্রবন্ধকার। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় ‘সওগাত’ ‘মাহেনও’, ‘দিলরুবা’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পত্রিকা ‘সাহিত্যিকী’তে আরাে অনেক দৈনিক পত্র-পত্রিকায়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘ডাঃ লুৎফর রহমান’, ‘পদাবলী সমীক্ষা’ ও ‘চর্যা পরিচিতি স্মৃতিকথা’, ‘রবীন্দ্র কাব্যপারঠের ভূমিকা’, ‘আপনার চেয়ে আপন যে জন’ ইত্যাদি। তাঁর অপ্রকাশিত গ্রন্থ ‘কে দিয়েছে হেন শাপ (গল্পগ্রন্থ)।

মন্তব্য: