1. স্মরণীয় বরণীয়

মাহবুবুল আলম গোরা (১৯৫৩-)

মাহবুবুল আলম গােরা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ সালে মাগুরা জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম শেখ সামসুজ্জোহা ও মাতার নাম মরহুমা হাসিনা খাতুন। মাহবুবুল আলম গােরা মাগুরা মডেল হাইস্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি মাগুরা কলেজে  ভর্তি হন এবং উক্ত কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯৭৪ সালে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এমএ এবং ১৯৭৭ সালে গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযােজক (অনুষ্ঠান) পদে যােগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এবং ওই বৎসরেই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযােজনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এ অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যের বিবিসি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে উন্নয়ন ও শিক্ষামূলক টেলিভিশন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক বিভাগের অধ্যক্ষ হিসাবে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত নাটক প্রযােজনা সংক্রান্ত ওয়ার্কশপে যােগদান করেন। ২০০২ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ডকুমেন্টারি এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৩ সালে ভুটান ও মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত সার্ক অডিও ভিজুয়াল এক্সচেঞ্জের সভায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক, সংগীত, বিতর্ক ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় প্রধান অর্থাৎ অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা); ২০০২ সালে উপ মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে দিগন্ত টেলিভিশনে অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান হিসেবে যােগদান করেন।

মাহবুবুল আলম গােরার শিক্ষা, তথ্য, বিনােদন সবধরনের অনুষ্ঠান প্রযােজনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার পরিকল্পিত ও প্রযােজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ‘দশ দিগন্ত’, দিন পনেরাে’, ‘অন্বেষা’, ‘অণু-পরমাণু’, ‘বহুরূপী’, ‘বিন্দু থেকে সিন্ধু’, ‘এক দুই তিন’, ‘হাজার বছর ধরে; উল্লেখযােগ্য।

প্রযােজিত অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে : আইন-আদালত, উপহার, শতাব্দীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে (১৪০০ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে বিশেষ ধারাবাহিক অনুষ্ঠান); ‘অগ্নিবীণা (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ধারাবাহিক অনুষ্ঠান) প্রভৃতি।

বিজ্ঞাপন ভিত্তিক অনুষ্ঠান অনু পরামাণুর প্রচার ১৯৮৫ থেকে অব্যাহত ও দর্শকনন্দিত। এছাড়া বেশ কয়েকটি ঈদের আনন্দ মেলা ও ৮টি ঈদের নাটক উল্লেখযােগ্য প্রযােজনা। মাহবুবুল আলম গােরা’র প্রযােজিত নাটকের মধ্যে নীল কণ্ঠ পাখি’, ‘আত্মজা’, মুনিয়া’, ‘চোখে দেখা’, ‘পেন্সিল’, ‘তারায় তারায় খচিত”, ‘সমাপ্তি”, ‘নীলু হায় হৃদয় খুঁজে, ‘রাজবন্দী, ‘জীনের বাদশা’, ‘হাতবদল’, ‘করােটি’, ‘বেঁধেছি আমার প্রাণ আমি কি হেরিলাম’, ‘চার অধ্যায়’, “সমান্তরাল”, ‘হাসিপুষ্পের হাসি’ বহে নিরন্তর’, ‘নগরবাসী’, ‘অন্যপৃষ্ঠা, ‘সন্দেহ’, ‘কলমীলতা’, ‘আত্মাহুতির পালা’, “গিফট”, অচিনপাখি’, ‘মায়াবী প্রাসাদ’, ‘দুঃখ সুখের স্বাদু ব্যঞ্জন’, ‘একটি কবিতা আত্মহননের আগে, কস্তুরী মৃগসম; ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মাহবুবুল আলম গােরা ২০০০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ্টুডিও প্লে প্রচলনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্টুডিও প্লের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর ‘সুড়ঙ্গ’ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর ও ‘গুর্গণ খাঁর হীরা, সাঈদ

আহমদের কালবেলা’ ও ‘প্রতিদিন একদিন’ ইত্যাদি।

তাঁর প্রযােজিত ধারাবাহিক নাটক : ‘দেয়াল’, ‘আমাদের গল্প’, ও ‘মায়াবিনী খাঁচা’, ইত্যাদি। তাঁর রচিত নাটক : ‘মায়াবী প্রাসাদ”, ‘দুঃখ সুখের স্বাদু ব্যঞ্জন ও ‘হায় মিডাস। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘জীনের বাদশা’ গল্প এবং রাজবন্দীর চিঠিকে ‘রাজবন্দী নামে নাট্যরূপ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি ‘হাত বদল ও ‘মাটির পুতুলকে নাট্যরূপ দিয়েছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘মায়াবী প্রাসাদ (নাটক); তাকদুমাদুম লিমেরিক সঙ, আকাশ আঁকি সাগর আঁকি (শিশুতােষ কবিতা ও ছড়া); হাতি (শিশুতােষ তথ্য); অমৃত দুঃখ অমৃত সুখ (কবিতা); ইত্যাদি। তার সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ : ১৯৯৫ সালে নাটকে ‘যায় যায় দিন পুরষ্কার’, নাটক রচনার জন্য ২০০২ সালে মধুসূদন একাডেমি পুরস্কার, নাট্যকার হিসাবে “জিয়া স্বর্ণপদক ২০০১’ ও নাটক প্রযােজনার জন্য ‘টেনাশিনাস পদক এবং ‘টেলিভিশন দর্শক ফোরাম পুরস্কার লাভ করেছেন।মাহবুবুল আলম গােরা বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। সদস্য, টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্য সংসদ। এছাড়াও তিনি বহু সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, সামাজিক-সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন।

মন্তব্য: