জাহিদ রহমান


১০১ ডিগ্রির উপরে জ্বর ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুলের।কিন্তু ৫ অক্টোবর মাগুরার শ্রীপুরবাহিনী তথা আকবর বাহিনীর বিনোদপুরে অপারেশনে যাওয়ার কথা শুনে গায়ে জ্বর থাকা অবস্থায়ও রাস্তায় এসে দাঁড়ান তিনি। খবর পেয়েছিলেন তাঁর প্রিয় অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়া সাহসী সুসংগঠিত আঞ্চলিক বাহিনী নিয়ে শ্রীপুর থেকে দক্ষিণে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মহম্মদপুর থানার বিনোদপুরে রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনে রওয়ানা হয়েছেন রাজাকার ক্যাম্প দখলের লক্ষ্য নিয়ে। মুকুলের পরিবার তথা মা ও ভাবী তখন তারাউজিয়াল গ্রামে এসে অবস্থান করছে। আমতৈল হয়ে তারাউজিয়াল পার হওয়ার পথে আকবর হোসেন দেখেন রাস্তায় সাহসী মুকুল দাঁড়িয়ে। অধিনায়ককে দেখে সালাম দেন মুকুল। বিনোদপুর অপারেশনে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। আকবর হোসেন বলেন, ‘তোমার গায়ে জ্বর, যাওয়ার দরকার নেই। তুমি বাড়িতেই থাকো। পরের কোনো অপারেশনে থাকবে’। মুকুল অনড়, যুদ্ধে যাবেই, যুদ্ধ ওকে বড় বেশি টানে। রাজাকার, পাকবাহিনী ওর দু চোখের শত্রু। এবার অধিনায়ক বলেন, ‘ তুমিতো নাছোড়, তাহলে মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসো। তোমার মা অনুমতি দিলেই কেবল যেতে পারবে।’
বাড়িতে মুকুলের মা, ভাবী তখন চাল কুটছিলেন শব ই বরাতের রুটি বানানোর জন্যে। মুকুল এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসেন।
এরপর সহাস্যে রওনা হন অধিনায়ক আকবর হোসেন সহযোদ্ধা জহুর চৌধুরী, কমান্ডার বদরুল, ফয়েজ খান, নওসের, খোন্দকার আবু হোসেনসহ অন্যদের সাথে… পেছনে মা জাহিদা খাতুন ছেলের জন্য দোয়া করতে থাকেন।


অধিনায়ক আকবর হোসেন তার বাহিনী নিয়ে বিনোদপুর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে কুলিপাড়া গ্রামে ডাক্তার বসন্ত মন্ডলের বাড়িতে অবস্থান নেন। ওখান থেকেই পরিকল্পনা করা হয় রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের। এই আক্রমণের লিঁয়াজো করেন হাফিজ মাস্টার। ৮ অক্টোবর ভোরে বিনোদপুরের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে মুকুল এবং অন্যান্যরা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। মুকুল রাইফেল হাতে গুলি করতে করতে ঘাট থেকে সবার সামনে এগিয়ে আসে। কাভারিং এ থাকেন আবু হোসেন, জহুর চৌধুরীসহ অন্যরা। কিন্ত নদীর অপর প্রান্ত থেকে ফায়ার দিতে থাকে পাকিস্তানের রেঞ্জার পুলিশ। অতঃপর পাকসেনাদের গুলিতে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জহুরুল আলম মুকুল। ‘শহীদ মুকুল’ নামেই যাঁর পরিচিতি এখন সর্বত্র। ৮ অক্টোবর বিনোদপুর যুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করে দেশপ্রেমের এক অনন্য উদাহরণ রেখে যান সাহসী এই মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ মুকুল রক্তে লেখা এক ইতিহাস। শ্রদ্ধা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য।

মন্তব্য: