জাহিদ রহমান

সত্তর-আশির দশকের মাঠ মাতানো ছন্দময় এক ফুটবলার সৈয়দ নাজমুল হাসান লোভন, আমাদের প্রিয় লোভন ভাই। খুব অল্প বয়সেই মাগুরা থেকে এসে ঢাকাতে ঝড় তুলেছিলেন। সেই ৭৬ সালে যশোর জেলা একাদশের হয়ে প্রথম তিনি আলো ছড়ান শেরেবাংলা কাপ ফুটবলে। সেবার এই কাপ মুঠোবন্দী করে যশোর জেলা একাদশ। পরেরবছরই ঢাকাতে কোনো লীগ না খেলেই জাতীয় যুবদলে চান্স পেয়ে বিস্ময়কর ঘটনার জন্ম দেন তিনি।
এরপর ঢাকা প্রথম বিভাগ লীগে আজাদ, ওয়ারী হয়ে শক্তিশালী বিজেএমজিতে পা রাখেন। সৌন্দর্যময় ফুটবল উপহার দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ওয়ারীর অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ৮০ সালে লোভন-আজমত-আসলাম-বাসু-কাওসাররা বিজেএমসিকে নিয়ে যায় লীগ চ্যাম্পিয়নশীপের দোরগোড়ায়। অপরাজিত রানার্স আপ হয় বিজেএমসি।
পরের বছর লীগের শুরুতেই সৈয়দ নাজমুল হাসান লোভন বিজেএমসির হয়ে লীগে ফুটবলের রঙ ছড়িয়ে এগুতে থাকলেও দুর্ভাগ্য এসে হানা দেয়। ওয়াপদার সাথে খেলায় মারাত্বক আহত হন। এরপর মাঠে ফিরে আসাটাই নাজমুল হাসান লোভনের জন্য ভীষণ দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। পঙ্গু হাসপাতালে পায়ের অপারেশন করেন। ৮২ সালে বিজেএমসিতে ফের চুক্তিবদ্ধ হলেও পা ঠিক না হওয়ার কারণে মাঠের বাইরেই থাকেন। ৮৩ তে খানিকটা ফিট হয়ে মাঠে নামেন। সাবধানে কয়েকটা ম্যাচ খেললেও ফের পায়ে ব্যথা পান। পরের বছর ৮৪ সালে যোগ দেন ব্রাদার্স ক্লাবে। নিয়মিত অনুশীলন করে ফিট হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভাগ্য বিমুখ হওয়ার কারণে হতাশ হয়ে পড়েন। সেই হতাশা, দুঃখ-বেদনা আর দুচোখ ভরা কান্না নিয়ে ঢাকার মাঠ থেকে তিনি বিদায় নেন নিরবে-নিভৃতে। জাতীয় যুব দল ছাড়া জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। ৮১ সালে সবুজ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
সৈয়দ নাজমুল হাসান লোভন ছিলেন ফুটবলের এক অমিত প্রতিভা। যেমনটি বলছিলেন সাবেক ফুটবলার আজমত, ‘লোভন আহত না হলে সেই হতো সেই সময়ের সেরা তারকা। এত স্কিলফুল ফুটবলার আমি আর দেখিনি।’ সাবেক তারকা ফুটবলার ইলিয়াস বলেন, ‘সৈয়দ নাজমুল হাসান লোভনের খেলায় যে সৌন্দর্য ছিল তা তুলনাহীন। আহত হওয়ার কারণেই তাঁর স্টাইলিশ খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ফুটবল প্রেমিকরা।’
সৈয়দ নাজমুল হাসান লোভন বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আশির দশকে ঢাকার কোনো সাংবাদিক লিখেছিলেন ফুটবলার লোভন রুপালি পর্দায় নায়ক হলেও পারতেন।
( ৭৮ বা ৭৯ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত শেরেবাংলা কাপে পটুয়াখালি জেলা একাদশকে যশোর জেলা ১১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল। লোভন ভাই ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিলেন। আমি খুলনায় স্টেডিয়ামে ছিলাম। )

মন্তব্য: