1. স্মরণীয় বরণীয়

ড. হাসান জামান (১৯২৮-১৯৮১)

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী মনীষী ডক্টর হাসান জামান এর পূর্ণনাম আবুল হাসান মুহাম্মদ নূরু জামান। তিনি ১৯২৮ সালের ১লা জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার কাচের কোল গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন তারা উজিয়াল গ্রামে।  তার পিতা মুহাম্মদ মুসা ছিলেন রেজিষ্ট্রার অব এ্যাসুরেন্সেস। হাসান জামান নড়াইল হাইস্কুল, যশাের জেলা স্কুল ও কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যয়ন করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৪৪ সালে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশান পাস করেন এবং প্রথম গ্রেডের বৃত্তি লাভ করেন।

১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম বিভাগে আই, এ পাস করেন এবং প্রথম গ্রেডের বৃত্তি লাভ করেন। কলেজের সেরা ছাত্র হিসেবে তিনি এ্যন্ডারসন গােল্ড মেড্যাল পুরস্কার পান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি,এ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে International – Retations -এ এম, এ ডিগ্রি লাভ করেন। রকফেলার ফাউন্ডেশন-এর ফেলাে হিসেবে (১৯৬১-৬৪) তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Rise of the muslim middle class as political factor in india and pakistan (1858-1947), শীর্ষক গবেষণামূলক সন্দর্ভ রচনা করে তিনি পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে ২২ শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে লেকচারার পদে যােগদান করে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৪ সালের ২১ শে জানুয়ারি তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার পদে যােগদান করে এবং ১৯৬৫ সালের ১০ই অক্টোবর রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৭ সালের ১০ই এপ্রিল থেকে ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ডেপুটেশনে তৎকালীন পাকিস্তান কাউন্সিলের ঢাকাস্থ অফিসেই ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৬৯ সালের ১২ই মে তৎকালীন জাতীয় পুনঃগঠন সংস্থার পরিচালক পদে যােগদান করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভিন্নমতাদর্শের জন্য তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে তিনি সৌদিআরব গমন করেন এবং জেদ্দায় অবস্থিত বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক’ বিভাগের পরিচালক পদে যােগদান করেন। ১৯৭৫ সালের দিকে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাসােসিয়েট মনােনীত হন এবং মাঝে মাঝে সেখানে গবেষণা কার্য উপলক্ষে যেতেন। ১৯৮১ সালে তিনি জেদ্দায় প্রত্যাবর্তন করার সময় লন্ডনে ২৪শে আগস্ট হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। ২৯ শে আগস্ট তাকে পবিত্র মক্কা শহরে দাফন করা হয়। 

তিনি কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। স্কুলজীবনেই তার সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময় তিনি “চিত্রা ও ‘কথিকা নামক দুটি পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলেন। দৈনিক জিন্দেগী ও ‘মিল্লাত’ পত্রিকার তিনি সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি পূবালী’ ‘সমাজ’ ও পাকিস্তান স্টাডিজ’ কারেন্ট নিউজ’ এবং জেদ্দা থেকে প্রকাশিত ‘ওয়াল্ড নিউজ ডাইজেনস্ট, পত্রিকাসমূহের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। পাকিস্তান রেডিও এবং টেলিভিশনে তিনি নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠানে যােগদান করতেন। তাঁর ইংরেজি ও বাংলাভাষায় রচিত বহু পুস্তক

প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযােগ্য পুস্তকের মধ্যে ‘কমিউনিস্ট শাসনে ইসলাম (১৯৭০); ইসলাম ও কমিউনিজম (১৯৬১); ইসলামের দৃষ্টিতে শান্তি ও যুদ্ধ, অনুবাদ (১৯৬০); সমাজ সংস্কৃতি সাহিত্য (১৯৭১); আমাদের সংস্কৃতি ও সাহিত্য (১৯৮০); তার সম্পাদিত বাংলা গ্রন্থ শতাব্দী পরিক্রমা(১৯৭১); অমর একুশ (১৯৭১); উল্লেখযােগ্য ইংরেজি গ্রন্থ : Human impact of Technological change in East Pakistan(1951); Political Science and islam (1952); Four teen points on islamic constitution(1953); The Secular state and islam (1954); Islamic Economics (1959); Bengall as a vehicle of Abstract Thought (1959); Basis of the Ideology of Pakistan (1961); Pakistan an Anthology Compila tion (1964); Arab discovery of America; (ed 1970); The menace of Farakka (1970); Produce of perish (ed 1971); এবং The concept of minority, (1981); এছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাঁর বহু প্রবন্ধ পঠিত হয়েছে। বাংলাভাষা আন্দোলনে তিনি তমদ্দুন মজলিশের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

 ড. হাসান জামান বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে কর্মুখর জীবন-যাপনের মাধ্যমে ইসলামের রাষ্ট্রনীতি এবং ইসলামী জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অধ্যয়ন ও চর্চা এবং এতদবিষয়ক রচনাবলীর মাধ্যমে ইসলামী জীবনাদর্শ ও সমাজব্যবস্থার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সংযােজন করেছেন।

মন্তব্য: