1. লোক

মাগুরার মেলা ও লোকজ উৎসবসমূহ

বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিহ্য লালন করতে এবং এর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে মাগুরা জেলাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মেলা ও লোকজ উৎসব। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক লোকজ উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এ জেলায়। 

বৈশাখী মেলাঃ বৈশাখ মাস বাংলা সনের প্রথম মাস হওয়ায় বর্ষবরণের জন্য দেশব্যাপী এই অনুষ্ঠান উদযাপনের অংশ হিসাবে মাগুরা জেলা শহরসহ  বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয় বর্ষবরণ উৎসব। এরই অংশ হিসাবে পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। কোথাও কোথাও দুই-তিন ব্যাপী মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। 

বৈশাখ মাসে মাগুরার বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মাগুরা সদর উপজেলার চন্দনপ্রতাপ ও গাংনালিয়া বাজারে বৈশাখী মেলার আয়োজন করে এলাকাবাসী। এছাড়া বৈশাখ মাসের প্রথম সোমবার আড়াইশত গ্রামে বৈশাখী মেলা বসে। বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয় বেরোইল পলিতা স্কুল মাঠে।

এসব মেলা উপলক্ষ্যে বাঙালী পোষাকী সজ্জায় মেতে ওঠে জেলার সবস্তরের মানুষ। পূর্বেকার তুলনায় এ জেলার মানুষ অনেকটা উৎসবপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাইতো পুরুষরা পরিধান করে বাঙালী সংসকৃতির আলপনা সমৃদ্ধ পাজামা ও পাঞ্জাবী। কিশোরী, বালিকা ও মধ্যবয়সী নারীরা পরিধান করে বাংলাভাষি নারীদের জাতীয় পোষাক শাড়ী-বøাউজ। লাল পেড়ে সাদা শাড়িতে রমনীরা প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের উপকরণ হয়ে হঠে। বৈশাখী মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় লোকজ গানের আসর। এসব গানের মধ্যে থাকে কবিগান, ভাবগান, জারিগান ও পালাগান। শহরকেন্দ্রিক অনুষ্ঠিত বাংলা গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও মেলায় অনুষ্ঠিত হয় ঘৌড়দৌড়, হাডুডু খেলা ও নৌাকা বাইচ।  এসব অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, পল্লীগীতি ও লালনগীতি। এছাড়া বৈশাখী মেলা উৎসবে প্রদর্শিত হয় যন্ত্রচালিত যানবহনের প্রাচুর্যে বিলুপ্ত হতে যাওয়া ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি প্রদর্শনী। বিলুপ্তপ্রায় পালকীর প্রদর্শনী হয় এসব বৈশাখী মেলায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত যন্ত্রাদির মধ্যে থাকে বাঙালী সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ঠ যন্ত্রপাতি যেমন একতারা, দোতরা ও ডুগি-তবলা, ঢাক, ঢোল, বায়া, হারমোনিয়াম ইত্যাদি। বৈশাখী মেলার অংশ হিসাবে মেলায় প্রদর্শিত হয় বাঙালীদের প্রিয় পিঠা সমূহ। মাগুরা জেলার খেজুর গুড় ও পাটালী দ্বারা তৈরীকৃত পিঠাসমূহ যার প্রধান আকর্ষণ। বৈশাখী মেলা উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে বাঙালী পোশোকে সজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠিত হয় শোভাযাত্রা।  

এতসব আড়ম্বর সত্ত্বেও বৈশাখী মেলার পুরনো জৌলুষ হারাতে বসেছে। নাড়ির টানে নয় বরং মানুষের উসব আমেজেও কৃত্রিমতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হারাতে বসেছে আমাদের পুরনো ঐতিহ্য সব। শহরময় আধুনিক যানবহনে মহড়া দেওয়া বর্তমান সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যা বাঙালী সংস্কৃতি ও মানসিকতার অন্তরায়। 

বৈশাখ মাসের ২৪ তারিখে মাগুরা শহরস্থ কালীবাড়ি মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে অত্রপ্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ঠ বাড়িসমূহ। আত্মীয় স্বজনের ভীড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে বাড়িগুলো। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর ভক্তবৃন্দের উপস্থিতি দেখা যায়। হাজার হাজার লোকের প্রসাদ বিতরণ করা হয় হয় এই অনুষ্ঠানে। 

গঙ্গাস্নান মেলা ঃ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠানটি মাগুরা জেলার নবগঙ্গা নদীর তীরস্থ শালীখা উপজেলাধীন গঙ্গারামপুর আশ্রম, সদর উপজেলার আলমখালী বাজার ও সাতদোয়া আশ্রম,ও শত্রæজিৎপুর আশ্রমে ব্যাপক জাকজমপূর্ণভাবে  সম্পন্ন হয়। গঙ্গাস্নান উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয় লোকজ মেলা। এছাড়াও জেলার অন্যান্য স্থানেও অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গারামপুরের ৯১তম মেলায় গেলে লোকজ অনেক উপাদানের সন্ধান মেলে এই মেলায়। গঙ্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রী রাজকুমার বিশ্বাস (৫৭), পিতা মৃত দেবেন্দ্র নাথ বিশাসকে দেখা গেল পুজার্ঘ্যসহ প্রসাদ বিক্রি করতে। শিব ঠাকুর ও গঙ্গাদেবীর পুজার্ঘ্য  ও প্রসাদের মধ্যে রয়েছে তুলসী পাতা, বেল পাতা, জবা ফুল, বেলী ফুল ও অন্যান্য ফুল ও চিনি বাতাসা দিয়ে প্রসাদ তৈরী করা হয়। একই গ্রামের বিনোদ মুখার্জী (৫৬), পিতা ঈশ্বর হরিপদ মুখার্জী বলেন ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে গঙ্গাস্নান হয়ে আসছে। 

কাত্যায়নী পূজার মেলাঃ অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল স্বাক্ষর মাগুরার ঐতিহাসিক কাত্যায়নি পূজা। মাগুরা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সাতদোহা পাড়া ও মাঝি পাড়া, ৭ নং ওয়ার্ডের আঠারখাদা, ৮ নং ওয়ার্ডের  দরি মাগুরা, নতুন বাজার, বেদ্যবাড়ি ও সাহা পাড়া এবং ৯ নং ওয়ার্ডের জামরুল তলা এলাকায় নয়নাভিরাম তোরণ, শেল্পিক নিদর্শন ও মঞ্চ তৈরী করে এ পূজাকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করা হয়। এ পূজাকে কেন্দ্র করে মাগুরা শহর নতুন সাজে সজ্জিত হয়। হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মিলন মেলার সেতু বন্ধনে পরিনত হয় এই মেলা। এশিয়ার বৃহত্তম এই কাত্তায়নী পূজা প্রতিবছর শারদীয় দূর্গা পূজার ঠিক এক মাস পরে আয়োজিত হয়। পাঁচ দিন ব্যাপি এই মেলাটি প্রায় ৮০ বছর বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ পূজা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে মাগুরা শহরে। পাশবর্তী দেশ ভারত থেকেও এই মেলা দর্শন করতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আগমন ঘটে। ঐতিহ্যবাহী এই কাত্যায়নী পূজা ১৯৩০ সাল থেকে হয়ে আসছে। পারনান্দুয়ালী গ্রামের সতীশ মাঝি এই সর্বপ্রথম এই পূজা শুরু করেন বলে এলাকাবাসীর অভিমত। তারপর ১৯৮০ সাল থেকে মাগুরায় সাড়ম্বরে এই পূজা অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পূজা শেষ হলেও এ পূজার মেলা চলতে থাকে মাসব্যাপি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরণের আসবাবপত্র নিয়ে আসে। নানা ধরণের কারুকার্যময় পালঙ খাট, গৃহস্থালির নানা ধরণের পণ্য, মাটির পণ্য সামগ্রী, তরুণ-তরুনীদের জন্য পুঁথির মালা, কসমেটিক্স সামগ্রী, গৃহসজ্জার নানা ধরণের সামগ্রী, কাঁচের সামগ্রী, শিশুদের খেলনা, নানা প্রকার মিষ্টি ও ফলের সমাহার দেখা যায় এ মেলায়। প্রতি বাড়িতেই অগনিত আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘটে। উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সর্বত্র। এলাকার গন্যমান্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পৃষ্টপোষকতায় এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন জেলার ডেকোরেটরদের মধ্যে একরকম প্রতিযোগিতা দেখা যায় মেলার তোরণ ও মঞ্চকে সুন্দর করে তুলতে। এ মেলায় বিনোদনের পাশাপাশি অনেকের জন্য আয়ের উৎসেও পরিনত হয় মেলা চলাকালীন মাসটি। এছাড়া মাগুরা সদরের মাধবপুর গ্রামে কাত্তেয়ানী মেলা অনুষ্ঠিত     হয়।

রথযাত্রার মেলাঃ মাগুরা শহরের সাতদোহার ল্যাংটা বাবার আশ্রমে, দরি মাগুরার ছানাবাবুর বটতলায় অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রার মেলা। মাগুরা সদরের কৃষ্ণপুর ও রামনগর গ্রামেও রথযাত্রার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

দুর্গাপূজার মেলাঃ কৃষ্ণপুর ও রামনগর গ্রামে দুর্গপূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জাগলা গ্রামে জাকজমকভাবে দুর্গাপূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আলোকদিয়া গ্রামে দুর্গাপূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

অষ্টমী মেলাঃ ভাঙ্গার খাল নামক স্থানে ১৪ গ্রামের সমন্বয়ে একটি অশোকা অষ্টমি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর চৈত্র মাসে এই মেলা বসে।

ঘোড়দৌড় মেলাঃ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রাম্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় মাগুরা সদরের পুখরিয়া গ্রামে। 

প্রতিবছর ফালগুন মাসে ধনপাড়া গ্রামে ঘেড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে এখানে লোকজ মেলা বসে। দেখা যায় বিভিন্ন লোকজ সামগ্রির সমাহার। 

বাংলা সনের প্রতি অগ্রহায়ন মাসের ২৮ তারিখে মঘী গ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে এখানে বসে লোকজ মেলা। আতœীয়-স্বজনের ভীড়ে তখন এলাকাটি হয়ে ওঠে মুখরিত। এই ইউনয়নের ছয়চার গ্রামের মকবুল হোসেন প্রতিবছর ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। এছাড়া জেলার অন্যান্য গ্রাম ও অন্যান্য জেলা থেকেও প্রতিযোগীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। 

প্রতি বছর ধলহরা গ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২৯ পৌষ বড় শলই গ্রামে, ২০ পৌষ আমুড়িয়া গ্রামে, ১৪ ফাল্গুন গাংনি গ্রামে এবং অনির্ধরিত সময়ে কুল্লিয়া গ্রামে লোকজ মেলা অুনষ্ঠিত হয়। এই মেলাগুলোতে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এসবমেলায় ভাবগানের আয়োজন করা হয়। 

২৮ পৌষ বাহারবাগ গ্রামে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় ও ঘোড়দৌড়ের মেলা। ভাবগানের আয়োজন করা হয় হয় এই মেলায়। ফাল্গুন মাস যাওয়ার দিন বাহারবাগ দক্ষিণ পাড়ায় ঘোড়দৌড় ও ভাবগান অনুষ্ঠিত হয়। পহেলা পৌষ বাহারবাগ পশ্চিমপাড়ায় ঘোড়দৌড় ও কবিগানের আয়োজন করা হয়। 

জগদল ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামে শীতকালে ঘোড়দৌড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় বিভিন্ন ধরণের লোকজ সরঞ্জামাদি বিক্রি করা হয়। তাছাড়, ছনপুর ও খর্দ্দছনপুর গ্রামে যৌথভাবে ঘোড়দৌড়

লিচুমেলা- ইছাখাদা গ্রামের  পুরাতন বাজারে লিচুমেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ের লিচু চাষীরা স্টল দিয়ে তারা তাদের চাষকৃত লিচুর প্রদর্শন ও বিক্রি করেন। এসব চাষীরা বিভিন্ন জাতের লিচু প্রদর্শন করেন এই মেলায়। এসব লিচুর মধ্যে মোজাফ্ফর, চাইনা-৩, বোম্বাই এবং দেশীয় জাতের লিচু উল্লেখযোগ্য। এসব চাষীরা খুচরা ও চালান ভিত্তিতে তাদের  লিচু বিক্রি করে। এই মেলা উপলক্ষ্যে আতœীয় স্বজনের ভীড়ে এলাকাটি অতিথি সেবা আশ্রমে পরিনত হয়। 

নবান্ন উৎসব ও গ্রাম্য মেলাঃ প্রতিবছর হেমন্তের নবান্নের উৎসবে ইছাখাদা ও হাজরাপুর গ্রামে লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় গ্রাম্য মেলা।

ঘুড়িমেলাÑ প্রতি বছর শীত মৌসুমে ধান কাটা শেষ হলে ইছাখাদা ছোটব্রীজ এলাকায় দিনব্যাপি ঘুড়িমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় বিভিন্ন প্রকারের ঘুড়ি ঘুড়ির সমাগমসহ ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় পতেঙ্গা, চিলে, ঢাউট, ঢোল ঘুড়ি, জের ঘুড়ি, সাপ ঘুড়ি, মানুষ ঘুড়ি, জাহাজ ঘুড়ি ইত্যাদি ঘুড়ির সমাহার দেখা যায়। স্থানীয় পর্যায়ের গন্যমান্য ব্যাক্তির আর্থিক পৃষ্টপোষকতায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় বিভিন্ন লোকজ সামগ্রি বিক্রি করা হয়। হাতে তৈরী খেলনাসহ বিভিন্ন প্রকার খেলনা, গ্রামীন ব্যবহৃত পন্য সামগ্রী, বাঁশ ও বেতের তেরী বিভিন্ন সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির সমাহার ঘটে এই মেলায়। এই মেলা উপলক্ষ্যে সারারাত লোকজ সংগীতসহ সাংস্কৃতিক     অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শিবপূজার মেলাঃ বেরোইল গ্রামে শিবপূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমার শেষে শিব রাত্রে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা উপলক্ষ্যে এলাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সমাগম ঘটে।  এছাড়া এই গ্রামে কালী পূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়।  

চৈত্র সংক্রান্তি মেলাঃ চৈত্র সংক্রান্তি মেলা অনষ্ঠিত হয় মাগুরা সদর উপজেলার তাড়োরা গ্রামে। চৈত্র মাসের ১৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টক গান অনুষ্ঠিত হয় চৈত্রসংক্রান্তি মেলায়।

লাঠিখেলার মেলাঃ শীত মৌসুমে বেরোইল গ্রামে চারদিনব্যপি লোকজ মেলা বসে। এই মেলা উপলক্ষ্যে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়। এই খেলায় মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলার লাঠি খেলোয়াড় অংশগ্রহন করে। আরো প্রদর্শিত হয় ঝাপান খেলা। এই খেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাপুড়িয়াগন উপস্থিত করে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। তারা উপস্থাপন করে সাপের বিভিন্নরকম খেলা। 

আরবি সনের প্রতি মর্হরম মাসে ১১ তারিখে মঘী গ্রামে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়। এই লাঠিখেলায় অংশগ্রহনকারী শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়কে পুরস্কারে ভ‚ষিত করা হয়। এই লাঠিখেলা উপলক্ষে এই গ্রামে লোকজ মেলা বসে। 

চাঁদপুর গ্রামে লাঠিখেলা ও গ্রামীন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আশ্বিন মাসের প্রথম দিনগত রাতে ভাবগান অনুষ্ঠিত হয়। কার্ত্তিক মাসের প্রথম দিন লঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রতিবছর কার্তিক মাসে শত্রæজিৎপুরের কুটি মিয়ার বাড়িতে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর ২৯ পৌষ কুল্লিয়া গ্রামে লাঠিখেলা ও গ্রাম্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

চাটাম মেলাঃ দক্ষিণ মির্জাপুর বাজারে নিকট অতীতে চাটাম প্রতিযোগিতার আসর বসতো। আর এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হতো গ্রাম্য মেলা। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সম্প্রতি কয়েক বছর এই প্রতিযোগিতার আসর বসেনি। ১৯৯০ সাল থেকে থেকে শুরু হয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটানা চাটাম প্রতিযোগিতা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় এলাকার সুনামধন্য চাটামকারী বাসুদেবপুর গ্রামের ইসলাম, কুশাবাড়িয়া গ্রামের মোকাদ্দেস ও দক্ষিণ মির্জাপুর গ্রামের ছিদ্দিক বিশ্বাস মেলাটি মাতিয়ে তুলতেন রকমারী চাটামে। অন্যান্য অঞ্চল থেকেও চাটাম প্রতিযোগিরা এই মেলায় অংশগ্রহন করতো।

পালাই মেলাঃ জগদল গ্রামের দমদমা গ্রামে মাঝেমধ্যে পালাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষ্যে এখানে নছিমন যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়।

পৌষ মেলাঃ জগদল ইউনিয়নের রূপাটি গ্রামে পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হতো কিন্তু বিগত ১০ বছর যাবৎ এখানে আর মেলা হয় না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এই মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

লোকজ মেলাঃ ২৯ পৌষ বড় শলই গ্রামে, ২০ পৌষ আমুড়িয়া গ্রামে, ১৪ ফাল্গুন গাংনি গ্রামে এবং অনির্ধারিত সময়ে কুলি­য়া     গ্রামে লোকজ মেলা অুনষ্ঠিত হয়। এই মেলাগুলোতে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়। লাঠিখেলা হয় কুল্লিয়া মেলায়।এছাড়া এসবমেলায় ভাবগানের আয়োজন করা হয়। আমুড়িয়া গ্রামে তেশারত বয়াতী নামে এক শিল্পী ছিলেন যিনি দেশের     বিভিন্ন অঞ্চলে ভাবগান গাইতেন। ২০১০ সালে এই শিল্পীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে আমুড়িয়া গ্রামের নায়েব বয়াতী ভাবগানের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।  

বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসে এই গঙ্গাস্নান মেলায়। গঙ্গারামপুর গ্রামের হাজারী কর্মকার (৫০), পিতা মাধব কর্মকার এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন তার ৬ টি কামারশালা আছে। ৩০ বছর যবাৎ তিনি লোহা নির্মিত দেশজ যন্ত্রপাতি তৈরী করেন এবং মাগুরার বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করেন। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে দা, কাঁচি, বটি, হাসো, খড়কাটা বটি, কোদাল, কুড়াল, জাতি, শাবল, খুন্তা, খুন্তি, পাশি, নিড়ানি, লাঙলের ফলা, ইত্যাদি। এছাড়া কুরানী, লাঙলের ফলা, হাতা, বটির আছাড়ী, শেকল, কামার তালা, প্যারাক ইত্যাদিও মেলায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ইত্যাদি। রতন কুমার পাল (৫৬), পিতা বিশ্বনাথ পাল, জানান , তিনি মাটির চাড়ি, কোলা, কলস তৈরী করে এসব মেলায় বিক্রির পাশাপাশি খুলনা, বাগেরহাট, যশোর জেলায় পাঠিয়ে থাকেন। মাটির তৈরী বিভিন্ন জিনিষ যেমন ছোট ফুলের টব, ব্যাংক, ফুলদানি, মাটির চুরি, মাটির ল্যাম্প, কয়েল দানি বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করেন বিভিন্ন জেলার মেলাগুলোতে। মাটির তৈরী খেলনাসমূহ বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে জানান, গীতা পাল (৪৫), স্বামী খোকন পাল, গঙ্গারামপুর। এসব মেলায় বেতের তৈরী ধামা, কাঠা, শের, দাড়িপাল্লা, মোড়া বিক্রি হয়। স্থানীয়ভাবে তৈরীকৃত বিভিন্ন ধরনের নকশাকৃত পাটিও বিক্রি করা হয় এসব মেলায়। বিক্রি করা হয় তাল পাখা ও নাড়া পাখা। আসবা গ্রামের অপূর্ব বিশ্বাস (৩৫), পিতা রসময় বিশ্বাস জানান, তিনি মাগুরার বিভিন্ন মেলায় ৫২টি উপাদান ব্যবহার করে সুস্বাদু পানের খিলি তৈরী করে বিক্রি করেন। একটি পানে তিনি ৭/৮ ধরনের উপাদান একবারে ব্যবহার করেন। বরই গ্রামের বিনোদ পাল জানান, তিনি মাটির তৈরী রুটির তাওয়া, মাছ ধোওয়ার মালসা, হাড়ি, পিঠা তৈরীর ছাচ বিভিন্ন মেলায় ও বাজারে বিক্রি করেন। এছাড়া মেলাগুলোতে বিক্রি হয় নানান পিঠা ও মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের লোকজ খাবার। সমারোহ ঘটে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের খেলার সামগ্রী, লোকজ পোশাক ও সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রি। এসব মেলায় পুতুল নাচ, নাগরদোলা, সাপখেলা বিশেষ আকর্ষণ বয়ে আনে। কোন কোন মেলায় আয়োজন করা হয় ভাবগান ও কবিগান।

তথ্যপ্রদানকারীঃ    

লিয়াকত আলী মুন্সী, চেয়ারম্যান, গোপালগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ 

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, চেয়ারম্যান, কুচিয়ামোড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মাগুরা 

খন্দকার মহব্বত আলী,  চেয়ারম্যান, বেরোইল পলিতা ইউনিয়ন পরিষদ, মাগুরা

স্বপন ভট্রাচার্য, পুরোহিত, শত্রæজিৎপুর শ্মশান আশ্রম, মদনমোহন মন্দির ও পঞ্চমুন্ডের কালী বাড়ি মন্দির

মোঃ.কেছমত আলী ও মোঃ ছেকেন্দার আলী, সদস্য চাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ

মোঃ অলিয়ার রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, জগদল ইউনিয়ন পরিষদ ও গোলাম নবী কাজল (আজমপুর)

আঃ লতিফ বিশ্বাস চেয়ারম্যান, মঘী ইউনিয়ন পরিষদ

মোঃ বকুল মুন্সী (৬০), দক্ষিণ মির্জাপুর, গ্রামপুলিশ

মোঃ রেজাউল করিম, প্রাক্তন ইউপি মেম্বর, হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ

মোঃ খবির আহমেদ, সচিব, কচুন্দি ইউনিয়ন পরিষদ

প্রফেসর মুন্সি আজীজুল হক (অব), হাজীপুর, মাগুরা

মন্তব্য: