যদুনাথ ভট্টাচার্য আনুমানিক ১৮৫৬ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন আমতৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম স্বর্গীয় যজ্ঞেশ্বর ভট্টাচার্য। তিনি যশাের জেলা স্কুল থেকে ১৮৭৩ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন এবং কলকাতায় শােভা বাজার রাজবাড়ী থেকে পড়াশুনা করেন এবং এফ.এ, (আই.এ) পাস করেন। দ্বিতীয় কাবুলযুদ্ধের সময় তিনি হাবিলদার ক্লার্ক হিসেবে যােগদান করেন। যুদ্ধের সময় তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ, পরীক্ষা দিয়ে বি.এ পাস করেন। যুদ্ধের পরে কন্টকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু চাকরিতে যােগদানের পূর্বে টাইফয়েড রােগে আক্রান্ত হয়ে তিনি দুই চোখ হারান। অন্ধ অবস্থায় তিনি মাগুরা জেলার পলিতা নোহাটা হাইস্কুলে ও পরে নড়াইল জেলার কালিয়া হাই স্কুলে কিছকাল শিক্ষকতা করেন। ১৮৮৫ সালে তিনি আমতল গ্রামের বাবু কিরণ চন্দ্র ভট্টাচা্থের দ্বিতীয় কন্যা শ্রীমতি অন্নপুর্ণা ভট্টাচার্যকে বিবাহ কর়ে সংসারজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি অন্যের দ্বারা আইন বই পড়ায়ে শুনতেন এবং বিশেষ অনুমতিক্রমে লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি,এল (PL) পাস করেন এবং ওকালতি লাইসেন্স পান। পর়ে মাগুরায় ওকালতি আরম্ভ করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ও পরে দেশে দেশপ্রেম ও স্বদেশীকতায় জোয়ার আসে। সেই সময় তাঁর উদ্যোগে ও অর্থে মহম্মদপুরে রাজা সীতারাম রায় উৎসব হয় (১৯১১) এবং তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। এই সময় তিনি রাজা সীতারাম রায়’, ‘রাজা শত্রুজিৎ সিংহ’, ‘দেবল রায়’, ‘সােনার সংসার, নামক কয়েকখানি ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখেন। তাঁর লিখিত
উপন্যাসের সংখ্যা ২০/২১টি হবে। এই উপন্যাসগুলিতে স্বদেশ প্রীতি, ত্যাগ ও দেশ সেবার- আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি পরবর্তীকালে আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়েন এবং বইগুলি Copyright’ বসুমতী সাহিত্যমন্দিরের কাছে ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রয় করে দেন। বসুমতী সাহিত্যমন্দির থেকে তাঁর গ্রন্থাবলী “যদুনাথ’ গ্রন্থাবলী
নামে ১৯২১-২২ সালে প্রকাশিত হয়। এখানে বলা দরকার যে, সেই সময় দৈনিক বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘােষ। তখন ‘বসুমতীতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল ‘বাংলার মিল্টন অন্ধ উপন্যাসিক যদুনাথ ভট্টাচার্যের যুদনাথ গ্রন্থাবলী তিন খণ্ডে প্রকাশিত। ইংরেজ সরকার এসব বই-এর প্রচার বন্ধ করলে তাঁকে ‘রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করার প্রলােভন দেখায়, কিন্তু তিনি সরকারি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এডভােকেট যদুনাথ ভট্টাচার্য ১৯২১ সালের ১০ মার্চ পরলােক গমন করেন।