1. স্মরণীয় বরণীয়

কামরুল মােহাম্মদ মােশাররাফ হােসেন (১৯৩৭ -)

কামরুল মােহাম্মদ মােশাররাফ হােসেন ১৭ আগস্ট ১৯৩৭ সালে মাগুরা জেলার সদর উপজেলাধীন আরালিয়া নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ও মাতার নাম যথাক্রমে মােঃ জালাল উদ্দিন মােল্লা ও বেগম কুলসুম নেছা। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেপরােয়া সৈনিকের মতাে যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে একদা যারা সফলকাম হয়েছেন, কামরুল মােহাম্মদ মােশাররাফ হােসেন তাঁদের একজন।  ১৯৫৪ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা থাকলেও পারিবারিক বিপর্যয়ের দরুণ তাঁর সে আশা পূর্ণ হতে ১৯৬০ অবধি গড়ায়। মাগুরা মডেল (বর্তমানে মাগুরা সরকারি বালক বিদ্যালয়) হাইস্কুল থেকে তিনি সে বছর কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ১৯৬৩ ও ১৯৬৭ সালে যথাক্রমে আইএসসি ও বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর পরীক্ষা দুটি দেন যথাক্রমে এম.এম. কলেজ যশাের ও সলিমুল্লাহ কলেজ ঢাকা থেকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে। অতঃপর একযুগেরও অধিককাল বিরতির পর পুনরায় অধ্যয়নে মনােনিবেশ করেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে অর্থনীতিতে এম.এস.এস ও বাংলায় এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬০ মধ্যবর্তীকালে তিনি খুলনা মহেশ্বর পাশা ফাইন আর্টস স্কুলে পড়াশুনা করেন, তবে পরবর্তীকালে সাধারণ বিষয়ে পড়াশুনা ব্যাপৃত হয়ে পড়ায় ও কর্মজীবনে অনুপ্রবেশ করায় ভালাে ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি অংকনশিল্পকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে মােশাররাফ হােসেন সরকারি চাকরি গ্রহণ করলেও ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি তদানিন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে যাগদান করেন এবং এই সূত্রে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অফিসে ও বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে একজন দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। তিনি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে উক্ত ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মােশাররাফ হােসেন বাহান্নোর ভাষাআন্দোলনের এক কিশােরকর্মী ছিলেন এবং তখন থেকেই গল্প, কবিতা রচনায় হাত দেন। তাঁর প্রথম গল্প বঞ্চিতের ব্যথা’ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। পাকিস্তান দ্বিতীয় জাতীয় স্কাউট জাম্বুরীতে অংশগ্রহণকারী মােশাররাফ হােসেন পঞ্চাশ দশকের শেষদিকে স্কাউটের মুখপত্র মাসিক ‘অগ্রদূতে’ নিয়মিত লিখতেন। এই মাসিকটিতে তাঁর অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছেন। অতঃপর দেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিকসহ অসংখ্য নিয়মিত অনিয়মিত সাময়িকীতে তাঁর গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, আলােচনা প্রভৃতি নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে থাকে। তিনি একজন পরিশ্রমীও অধ্যবসায়ী লেখক এবং লেখায় বৈচিত্র্য আসায়ই তাঁর লক্ষ্য। মােশাররাফ হােসেনের প্রথম গ্রন্থ ফুলকলি প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে যশােরের কবি মােহাম্মদ আজহার উদ্দীনের সাথে যুগ্মভাবে। গ্রন্থটি মূলত কিশোর-কিশোরীদের জন্য রচিত। তাঁর “মিন্টু মামার ডায়েরি’ তৎকালে বৃহত্তর যশােরে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস “ত্রিভূজ’। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথমদিকের রচিত কতিপয় ছােটগল্পের সংকলন ‘ভালােবাসার নিছনি’ এবং বাংলাগদ্যের পাঁচজন দিকপালের জীবন ও রচনার ওপর জ্ঞানগর্ভ আলােচনা গ্রন্থ ‘বাংলাগদ্যের পঞ্চপ্রতিভা। স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে ১৯৭২ সালে তিনি সর্বপ্রথম উপন্যাস রচনা করেন, যার কিয়ংদশ তাঁরই সম্পাদিত অনিয়মিত মাসিক সাহিত্যপত্রিকা মেঘদূত’-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় আশির দশকে। উপন্যাসটি বৃহদায়তনের বলে খণ্ডাকারে লিখিত এবং অর্থাভাবে ও প্রকাশকদের অনীহার কারণে তা আজও সূর্যের মুখ দর্শন করেনি। এছাড়াও তাঁর অনেক উপন্যাস এবং দুই শতাধিক উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প এখনও প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুবাদকর্মেও মােশাররাফ হােসেন সমান পারদর্শী। তিনি আমেরিকান কবি পার্সিবিসি শেলীর জীবন ও সমগ্র রচনাবলীর ওপর বিশদ আলােচনা গ্রন্থও প্রণয়ন করেছেন। চর্যাপদসমূহের অনুবাদ এবং এ সাহিত্যের রচয়িতা ও রচনাসমূহের উপর আলােচনাসহ মধ্যযুগীয় সাহিত্যের উপর লেখা তাঁর বেশ কিছু রচনা প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

সংস্কৃত সাহিত্যের অমর কবি কালিদাসের ‘মেঘদূত ও ঋতু সংহার’ কাব্যানুবাদতাে তিনি ১৯৬১ সালে যশাের এম.এম কলেজে পড়ার সময়ই করেন। যার আংশিক প্রকাশিত হয় একই বছরের কলেজ ম্যাগাজিনে। কাব্য দুটি আশির দশকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ‘আমি’ তাঁর প্রকাশিতব্য আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।

লেখক এক সময় সমীক্ষা লেখকগােষ্ঠী আধুনিক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ঢাকা), জে.সিজ বাংলাদেশ, সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও নবীন সাহিত্য পরিষদ মাগুরার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

মন্তব্য: