1. সদর

মাগুরা সদর উপজেলার আশ্রম ও ঐতিহাসিক মন্দির সমূহ

ঐতিহাসিক সাতদোহা আশ্রম, ন্যাংটা বাবা ও অনুষ্ঠানসমূহঃ নবগঙ্গা নদী তীরস্থ সাতদোহা আশ্রমটি চাউলা বাসস্ট্যান্ডের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি উন্নয়ন বোর্ডের মসজিদের বামপার্শ্বের রাস্তা দিয়ে মাঝিপাড়ার ভিতর দিয়ে পারলা গ্রামের অভিমুখে গ্রামের শুরুতেই সাতদোহা পাড়ার সাতদোহা মহশ্মশানে অবস্থিত। এই শ্মশানের পাশেই ইংরেজদের নীলকুঠি ছিল। এখানে নীল চাষও হতো। পরবর্তীতে ইংরেজরা দেশ ছেড়ে গেলে বন জঙ্গলে ভরে যায় এই শ্মশান। পরবর্তীতে ন্যাংটা বাবা এই শ্মশানে ধ্যানমগ্ন হলে তার সংস্পর্শে আসেন এই এলাকারই ফটিক চন্দ্র বিশ্বাস (মাঝি)। ফটিক মাঝি নিজ ভ‚মি দান করে জঙ্গল কেটে ন্যাংটা বাবার আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এই শ্মশানে ন্যাংটা বাবার সমাধি মন্দিরসহ নাটমন্দির প্রতিষ্ঠিত। পাশেই কালা সাধক নামে এক সাধকের সমাধিসহ আরো কয়েকটি শবের সমাধি মন্দির রয়েছে। প্রতিবছর এখানে নির্দিষ্ট সময়ে হরিনাম সংকীর্তন জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলাতে বিভিন্ন লোকজ সামগ্রীর সমাগম ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। শ্রী শ্রী কৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উৎসবেও হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে। এছাড়া এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় সভা হয়ে থাকে। এখানে বছরে দুইবার নামযজ্ঞ হয়। মাঘী পূর্ণিমাতে নামযজ্ঞ হয় তিন দিন এবং বৈশাখ মাসের ২৬ তারিখে অধিবাস হয়, ৩০ তারিখে ভোগ হয় এবং নামযজ্ঞ হয় তিন দিন। এছাড়া এখানে কালী পূজা, গঙ্গা পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সভা হয়ে থাকে। গঙ্গাস্নান এর জন্য এখানে তৈরী করা হয়েছে দর্শনীয় পাকা ঘাট। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে এখানে দূর্গপূজাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে প্রতি সপ্তাহে রবিবার পাড়ার লোকেরা কীর্তন সংগীত গেয়ে থাকে। এই শ্মশানে একটি পাকড় গাছ ও একটি বট গাছ জমজ ভাইয়ের মতো দাড়িয়ে আছে। ন্যাংটা বাবার নির্দেশে নদীর ধারে গাছ দুইটি রোপন করেন ফটিক চন্দ্র বিশ্বাস।  

ন্যাংটা বাবা ১৯২৫ সালে নড়াইল জেলার ভবানীপুুর গ্রামে বারেন্দ্র শ্রেনীর ব্রাম্মন পরিবারে ভাদ্র মাসে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম শ্রী বেণীমাধব চক্রবর্তী, মায়ের নাম পূর্ণ সুন্দরী দেবী। ন্যাংটা বাবার পূর্ব নাম ছিল সদানন্দ চক্রবর্তী। দ্বিমত আছে তার নাম নিয়ে। অনেকের মতে তার নাম ছিল জীতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ন্যাংটা বাবার জীবনী রূপকথার মতো। জন্মের পরই তার পিতামাতা কিছু অলৌকিক লক্ষন দেখতে পান। সংসারে আয় উন্নতি বাড়তে থাকে বিভিন্নভাবে। জনশ্রæতি আছে ভবানীপুর গ্রামে একবার কলেরার প্রদুর্ভাব হলে গ্রামবাসীরা ন্যাংটা বাবার সরণাপন্ন হন। তিনি জল পড়ে গ্রামে ছিটিয়ে দিলে কলেরা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ছিলেন সিদ্ধ সাধক। মুখ দিয়ে তিনি যা বলতেন তাই সঠিকভাবে ফলে যেতো। তার কাছে লোকজনের আসা যাওয়া বেড়ে যায়। অতঃপর তিনি বার বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। 

তারপর তিনি মাগুরা জেলার সাধুহাটি গ্রামে ধ্যানমগ্ন হন। কিন্ত তার পায়ের ধূলো নেওয়ার জন্য এখানেও উপচে পড়ে জন মানুষের ভীড়।এখানে তিনি ধ্যানমগ্ন হয়ে বসুদেবের দর্শণ পেয়ে ধন্য হলেন। এখানে তিনি মায়ার জালে আবদ্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তিনি নবগঙ্গায় ঝাপ দিয়ে অদৃশ্য হন। পরদিন একদল জেলে শবদেহ ভাসছে দেখে সন্যাসীকে উদ্ধার করেন। জেলেরা তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখে পোশাকে আচ্ছাদিত করতে চায়লেও কোন বস্ত্র তার গায়ে থাকেনি। এভাবেই উলঙ্গ অবস্থাতেই তিনি পদ্মাশন হয়ে পূনরায় ধ্যানমগ্ন হন। এরপর বালক সন্যাসীর সাথে পাগলা কানাইয়ের আলাপ হয় তিন দিন ধ্যানমগ্ন থাকার পর। আর এখান থেকেই তার নাম হয় ন্যাংটা বাবা। 

ন্যংটা বাবার যশ ছড়িয়ে পড়লে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক তৎকালীন জমিদার করাণী চরণ বাবুর নিকট জানালো, ন্যাংটা বাবা শিষ্যদের নিয়ে গাঁজার আসর বসিয়েছে। একথা শুনে জমিদার সদলবলে সন্যাসীর বাবাকে তাড়াতে আশ্রমে এলে তিনি দেখেতে পান জ্যোতির্ময় বালক সন্যাস ধ্যাসমগ্ন ভক্তজনরা চারপাশে সমবেত হয়ে আছে সাধকের আশির্বাদের প্রতীক্ষায়। এই অবস্থায় জমিদার অবিভ‚ত হয়ে ন্যাংটা বাবার কাছে দীক্ষা গ্রহন করে বাবার শীষ্য হয়ে যান। এরপর একদিন সন্যাসী নিরুদ্দেশ হয়ে যান সাধুহাটি থেকে। সাধনায় ব্রতী হন মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গাংনালিয়া বাজারের পাশে কুমার নদের তীরস্থ গভীর জঙ্গলে। এখানে আমার পর অসামাজিক ব্যক্তিবর্গের দ্বারা কয়েকবার বাধাপ্রাপ্ত হন। লোক শ্রæতি আছে কিছু দুষ্টু লোক সন্যাসীকে ফেলে দেয় গভীর শ্রোতের মাঝে কিন্তু নৌকা ঘাটে পৌছার পর দেখা গেল সাধু তার আখড়ায় ধ্যানে মগ্ন। এ অবস্থার কথা দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। অল্পদিনের মধ্যে এই সাধক সর্বশ্রেনীর মানুষের দৃষ্টি কাড়েন। এখানে থাকাকালীন জনৈক শতীষ চন্দ্র বিশ্বাস ও প্রেমানন্দ বিশ্বাস এই সাধকের সঙ্গী হন। গাংনালীয়া থাকা অবস্থায় মাগুরার বর্তমান ন্যাংটার আশ্রমের পাশে বসবাসকারী ফটিক বিশ্বাস (মাঝি সম্প্রদায়) ন্যাংটার সংস্পর্শে আসেন এবং ন্যাংটার ভক্ত হন। ফটিক মাঝি নিজ জমি ন্যাংটার আশ্রমে দান করে সাতদোয়া আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় চন্দ্রভ‚ষণ দত্ত ও কালা বুড়ি নামে জনৈক মহিলা ন্যাংটার ভক্ত হন।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ন্যাংটা বাবার এই বর্তমান আশ্রম প্রতিষ্ঠা করার পরে এই স্থানটি চিল সাতটি জলধারার উৎসমুখ। গভীর জঙ্গলে বেষ্টিত নীলকর সাহেবদের আস্তানা। এই জায়গাটির মালিক ছিল ডাঃ বীরেন্দ্রনাথ এবং কীরণ চন্দ্র সিংহ। এদের কাছ থেকে ফটিক মাঝি জমিটি ক্রয় করেন আর সাতটি ঝর্ণার উৎসমুখ বলে এলাকাটির নাম হয় সাতদোয়া। 

সাতদোয়া আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর ন্যাংটা বাবা তৎকালীন মাগুরা কালীবাড়ির পুরোহিত আশুতোষ ভট্রাচার্যের নিকট থেকে বৈদিক মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করেন।  ক্রমে ক্রমে ন্যাংটা বাবার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এ সময় ফটিক মাঝির অজান্তে জন্মস্থান নড়াইল থেকে লোকজন এসে ন্যাংটা বাবাকে নিয়ে যায়। এ খবর শোনা মাত্রই ফটিক মাঝি, চন্দ্রভ‚ষণ দত্ত ও কালা বুড়ি নড়াইল থেকে তাকে ফিরিয়ে আনেন। একদিন পাগলা কানাই স্বপ্নে ন্যাংটা বাবাকে বললেন, এবার মাঘী পূর্ণিমায় নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই থেকেই ন্যাংটা বাবার আশ্রমে নামযজ্ঞ শুরু হয়।

কথিত আছে ন্যাংটা বাবা নামযজ্ঞ শুরু হতেই ১ সের চাল ও ১ পোয়া ডাল মিশ্রিত করে শিষ্য সনাতনকে রান্না করতে বলেন এবং তাকে না জানিয়ে কাউকে দিতে নিষেধ করেন। রান্না শেষ হলে একজন ক্ষুধার্ত ব্রাম্মনকে সনাতন সেবা দেন ন্যাংটাকে না জানিয়ে। ন্যাংটা বাবা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলে পাগলা কানাই ন্যাংটা বাবার দর্শন দিয়ে অদৃশ্য হন। এরপর অবশিষ্ট প্রসাদ নিয়ে সনাতন বাবার হাতে দিলে তিনি আশ্রমের আঙ্গিনায় ৩টি কুকুর নাম সংকীর্তন শুনছিল তাদের ডেকে প্রসাদ খেতে দিয়ে সনাতনকে বলেন, আমাকে স্পর্শ কর, এবার দেখ এরা কারা…। সনাতন দেখল স্বয়ং ব্রম্ম, বিষ্ণু ও শিব আহার করছেন। সনাতন মূর্ছা গেল। আহার শেষে তিনজন অন্তর্ধান হলেন। 

এরপর শুরু হয় মজার ব্যাপারÑ অলৌকিক অবস্থা। নবগঙ্গা নদীপথে নৌকা বোঝায় বস্তা বস্তা চাল, ডাল, তেল, লবণ, তরকারীসহ অগনিত ভক্ত আসতে লাগলো, ৭২ ঘন্টার নামযজ্ঞ পক্ষকালেও শেষ হতে চায় না। সেই থেকে মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে ৭২ ঘন্টার নামযজ্ঞের সংকীর্তন শুরু হয়।

এরই মধ্যে ন্যাংটা বাবার সাথে আরও কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ভক্তের আগমন ঘটে। তারা হলেন কাঙ্গালী গোসাই, মানিক বিশ্বাস, নরেন বিশ্বাস, জুড়ন ঠাকুর প্রমুখ। অবশেষে, এই বসনভ‚ষণবিহীন সিদ্ধ সাধক বাংলা ১৩৭০ সালের ৩১ বৈশাখ আশ্রম প্রাঙ্গনে কথা বলতে বলতেই ইহলোক ত্যাগ করেন। ফটিক মাঝির ছেলে ধীরেন সাধু সস্ত্রীক দীনাতীতভাবে বর্তমান ন্যাংটা বাবার প্রধান সেবাইত। আজও ভক্তজনেরা ন্যাংটা বাবার কৃপা লাভের আশায় সাতদোয়া মহাশ্মশানে আসেন বাবাকে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে। 

        তথ্যঃ ধীরেন সাধু, পুরোহিত, ন্যাংটা বাবার আশ্রম এবং স্বরূপ দে, বটতলা, মাগুরা।                       

সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম মঠঃ মাগুরার শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী মঠ শহর হতে দেড় মাইল দূরে আঠারোখাদা গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে। সুপ্রাচীনকালে মঠস্থল কালিকাপুর শ্মশানতলা নামে খ্যাত ছিল। গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই স্থানটি ছিলো সন্ন্যাসীদের তপস্যাস্থল। প্রাক সপ্তদশ শতক হতে পূণ্যাতœা ব্যাক্তিরা তীর্থে যেতেন এখান থেকে নবগঙ্গা ধরে। সে কারণে ঐ স্থানটিতে সাধজনদের সমাগম ঘটতো প্রচুর। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘আনন্দমঠ’ এ এই শ্মশানের নিখুঁত চিত্র চিত্রায়িত আছে। মঠটি নলডাঙ্গা রাজবংশের একটি অবিশ্বরণীয় কীর্ত্তি। মঠটি মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত। রাজা মানসিংহ স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে এই মঠটি স্থাপন করেন। প্রতি অমাবশ্যায় এখানে বিশেষ পূজা হয়। প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয় পূজার সময়। এখানে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা দেওয়া হয়। ভক্তরা এখানে পাঠা বলির মানত করে থাকে। এখানে পঞ্চমুন্ডের আসনও রয়েছে। নবশিখা বেলগাছ আছে যার নয়টি শাখা রয়েছে। 

    তথ্যঃ শুশান্ত ব্যানার্জী (৬০), পিতাঃ কার্ত্তিক চন্দ্র ব্যানার্জী, পুরোহিতঃ সিদ্ধেশ্বরী মঠ।

নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রমঃ নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত নিজনান্দুয়ালীর এই আশ্রমটি বাংলা ১৪০১ সালের ৩০ আষাঢ় প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশ্রমটি পরিচালিত হয় মাগুরা কালী বটতলা সমিতির দ্বারা। সন্ন্যাসী ও ব্রম্মচারীরা এখানে বাস করে। বাংলা ৫ চৈত্র থেকে ৯ চৈত্র পর্যন্ত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব স্মরণে নামযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। এই আশ্রমে কাত্তায়ানী পূজা, নববর্ষ অনুষ্ঠান, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমি, রাধাষ্টমি, দোলযাত্রা, ঝুলনযাত্রাসহ হিন্দু ধর্মের যাবতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই আশ্রমে আশ্রিতদেরকে ধর্মীয় শিক্ষাসহ সবধরনের আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন একশ জন ভক্তের প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয় এই আশ্রমে। পয়ারী গ্রামেও একটি আশ্রম রয়েছে। 

            তথ্যঃ চিন্ময়ানন্দ দাস চঞ্চল, অধ্যক্ষ, নিতাই গৌর গোপাল সেবা আশ্রম

শ্যামা কালী মন্দিরঃ নিজনান্দুয়ালী গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির। এটি বাংলা ১৩৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রতি বছর লক্ষী পূজার পর কার্ত্তিক মাসে এখানে কালী পূজা করা হয়। এলাকার লোকজনের সমাগম হয় এখানে।

            তথ্যঃ মাধবী রাণী রুদ্র, স্বামীঃ নিমাই চন্দ্র রুদ্র, নিজনান্দুয়ালী, মাগুরা।

জগদ্ধাত্রী মন্ডপঃ এই মন্দিরটিও নিজনান্দুয়ালীতে অবস্থিত। এটি বাংলা ১৩৩০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে জগদ্ধাত্রী মায়ের পূজা দেওয়া হয়। নান্দুয়ালী গ্রামের স্বর্গীয় লোহারাম দত্ত স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে মন্দিরটি স্থাপন করেন।  দূর্গা পূজার এক মাস পরে জগদ্ধাত্রী দেবীর পূজা দেওয়া হয়।  

    তথ্যঃ সবিতা বসু (৫৬), স্বামীঃ জীবন দত্ত, নিজনান্দুয়ালী, মাগুরা। পেশাঃ শিক্ষকতা।

মাগুরা সদরের চন্দনপ্রতাপ গ্রামের সন্যাসীতলায় একটি মন্দির আশ্রম রয়েছে। এখানে বিভিন্ন পূজাপার্বণ সংক্রান্ত উৎসব উৎযাপিত হয়ে থাকে। এছাড়া গোপিনাথপুর গ্রামে দুইটি আশ্রম রয়েছে। মালন্দ গ্রামের পঞ্চবটিতে রামকৃষ্ণ মন্দির এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়ের জন্য একটি পরম ধর্মীয় উৎসবের স্থান। বাগডাঙ্গা গ্রামেও একটি মন্দির রয়েছে। কছুন্দি ইউনিয়নের শৈলডুবি গ্রামে একটি আশ্রম রয়েছে।    

        তথ্যঃ শ্রীচরণ বিশ্বাস (৫৫), কৃষিকাজ ও ব্যবসা, ঐক্যপাড়া, মালন্দ, মাগুরা।

মদনমোহন মন্দির (ঠাকুরবাড়ি কালী মন্দির)ঃ শত্রাজিৎ সিংহ শত্রæজিৎপুর এসে জঙগল কেটে এখানে বসতি স্থাপন করে একটি মন্দির স্থাপন করেন। মন্দিরের নাম মদনমোহন দেব বিগ্রহ। পাশেই ছিল সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার মন্দির।     মন্দিরটি ভেঙ্গে গেছে। এখন     এর সংস্কার চলছে। মন্দিরের পুরোহিত হিসাবে ফরিদপুরের কোটালিপড়া থেকে আনা হয় সত্যেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্যকে । তিনিসহ তার পরবর্তী বংশও কালী পূজার আরাধনা করে আসছেন এবং মন্দিরের পুরোহিত হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। পরবর্তীতে এই মন্দির ঠাকুরবাড়ি কালীমন্দির হিসাবেই পরিচিতি লাভ করে।। এখানে শুধু কালী পূজাই করা হয়। সকালে দুপুরে ও রাত্রে এখানে পূজা করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তদের আগমন ঘটে এখানে।

শত্রæজিৎপুর শ্মশান আশ্রমঃ শত্রাজিৎ সিংহের দৌহিত্র মোহিতলাল সিংহ  শ্মশান আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এই শ্মশান আশ্রমে সম্প্রতি তৈরী করা হয়েছে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিব মূর্তি । এর পাশে একটি সুবিশাল কালী ম‚র্তিও রয়েছে। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে লোকনাথ মন্দির। লোকনাথ মন্দিরটি করেছেন অধ্যাপক পরিমল সাহা।  

পঞ্চমুন্ডের কালীবাড়ি ঃ এটি শত্রæজিৎপুরের দক্ষিণপাড়ায় অবস্থিত। এখানে একটি বিরাট বটগাছ রয়েছে। এই     বটগাছের নীচে পঞ্চ মুন্ডের কালীবাড়ি। গ্রামে বসতি স্থাপনের পূর্বেই মন্দিরটি স্থাপিত। তখন এটি খড় পাতার মন্দির ছিল। বটগাছের নীচে ডাকাতরা বাস করতো।  এই ডাকাতরা এখানে মানুষ ধরে এনে নরবলি দিত। এই মন্দিরে নরমুন্ডের বেদী     করা ছল। অতঃপর রায়রা এসে মন্দিরের সংস্কার করেন এবং বেদীটি পাকা করেন। এই বেদীতে পাঁচটি নরমুন্ড থাকার কারণে এবং এর পাশেই কালী মায়ের মুর্তির কারণেই এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে পঞ্চমুন্ডের কালীবাড়ি মন্দির।

তথ্যঃ স্বপন ভট্রাচার্য, পুরোহিত, শত্রæজিৎপুর শ্মশান আশ্রম, মদনমোহন মন্দির ও পঞ্চমুন্ডের কালী বাড়ি মন্দির।

ঐতিহাসিক ছানার বটতলাঃ একসময় নবগঙ্গা নদী ছিল বেশ খরস্রোতা। মাগুরা দরিমাগুরা এলাকায় একটি বিরাট বটগাছ রয়েছে। শতাধিক বছর আগে এখানেই ছিল স্বতিশ চন্দ্র দে পরিবারের বাস। খুব নিরিবিলি এই জায়গায় বটগাছের নীচে ছিল বেতের বাগান। বসতির জন্য দে পরিবার বেতের বাগান পুড়িয়ে দেয়। এই বাগানে ছিল কালী দেবীর আসন। জনশ্রæতি আছে বাগান পোড়ানোর সময় কালী মায়ের শরীরে আগুনের আঁচ লাগে। ফলে অভিশপ্ত হয় দে পরিবার। তাতে গোষ্ঠির অনেক লোক মারা যায়। অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বেতের বাগান কেটে ওখানে দেবী কালীর বেদী তৈরী করে দেন স্বতীশ বাবুর বোন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বটতলায় কালী মায়ের পূজা দিয়ে শুরু হয় পূজাপর্ব। এখানে পরবর্তীতে দূর্গাপূজার প্রতিষ্ঠা করেন স্বতীশ বাবুর ছেলে মনিন্দ্রনাথ দে ও তার চাচাতো ভাই নারায়ন চন্দ্র দে। মনিন্দ্রনাথ দের ডাক নাম ছানা বাবু। ছানা বাবু এখানকার অধিকাংশ জায়গা দান করার কারণে তার নামানুসারেই এই জায়গার নাম ছানাবাবুর বটতলা। এখন এখানে দেশের প্রশিদ্ধ কাত্তায়ানী পূজাও অনুষ্ঠিত হয়্ । ছানাবাবুর ছেলে অনিল দে মনি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দোল উৎসব। এই স্থানে লোকনাথ পূজার প্রতিষ্ঠা করে এলাকার যুব সম্প্রদায়।  

তথ্য অনলি দে মনি, বয়স ৫৫ বছর, পিতাঃ মনিন্দ্রনাথ দে (ছানাবাবু), ছানাবটতলা, দরিমাগুরা, মাগুরা।

মন্তব্য: