1. লোক

মাগুরার আঞ্চলিক গান

খাজর গাছের নস বারইছে

চাল কুটে বানা পিঠে

কাঁচি খুঁচা চিতেই পিঠে

আরো ভিজেনে।

ঠান্ডা জাড়ের পিঠের মজা

চলে যাবেনে

তোর ভাইরা দাওয়াত কল্লোনা

যাব আর কনে

তাড়াতাড়ি চাল ভিজেয়ে

গুছায় গাছায় নে।

টাকা আনেদে হাটে যায়ে

পাটালি কিনে আনি

ধুপি পিঠে বানায় দিসেনে

গরম গরম খাবানে

আরো কিছু ছই পিঠে

বানায় থুসেনে।

-গীতিকার সুরকারঃ শুকুর আল মামুন

দুই

খিদের জ্বালায় প্যাট পুরতিছে

নান্দা হলো না

কনে গিছিলি এতকোন তুই

কথা কোসনে ক্যা ?

কওনে ধরে ডাকতিছি তোর

কানে যাচ্ছে না

ঠেলা খায়ে বেড়ান বুঝি

অব্বেস গেল না

চায়ে দেখছিস ঝিপুতপালার দিক

হাটতি পারতিছেনা।

আবার যদি দেহি কোনদিন

পাড়ার মান্সিগের সাথে

বাড়ীর কাম-কাজ ফেলায় থয়ে

গল্পে নইছিস মজে

জম্মের গল্প অরায় দিবানে

তোরে দিলাম আজ মানা।

    -গীতিকার সুরকারঃ শুকুর আল মামুন

মাগুরা অঞ্চলের জারিগান

জারীগান গাইতে গেলে জারীগানের প্রতিটি শিল্পীই বন্দনা গান গেয়ে থাকেন। জারী গানের বয়াতী আলমগীর হোসেন এর সাথে আলাপকালে এমনই একটি বন্দনা গান গেয়ে শোনান। যে গানটি তিনি এবং তার ওস্তাদ বয়াতী জামাল হোসেন যৌথভাবে রচনা করেছেন। গানটি অবশ্য উর্দু ভাষায় রচিতঃ

রহমান ইয়ে তোমহারি শান ইয়ে তোমহারি দান

তুনে পহেলা নম্বর দোসরা নবী সরোয়ার

তেসরা ফেরেস্তা সরদার চৌঠা এলেম আল্লার…ঐ

দোসরা তুনে ফয়দা কিয়া পহেলা নাম্বার

মহব্বত কী মাসগুল তেরা কবহগা দিদার

হায় হায় কবহগা দিদার

দিদার তুনে খোদমা কানি হাম হায় বেকারার

এসকে তিনা হামবা এরা রাহি এন্তেজার

আয়গা দোস্ত হামরা খুশি হুর ফেরেস্তারা ২

হোগা মাকান হামরা এসকো খোসবুতে গুলজার…ঐ

দিন দুনিয়ার এতিম নবী শাহী মেহমান

তেষট্টি উমর জিনদা রাহে জায়সা হায় ইনসান

হায় হায় জায়সা হায় ইনসান ২

তেরে নুরে পয়দা হয়ে আঠারো আলম

হুর পরী সব পয়দা হুয়ে লহু কলম ২

সরেন্দা পরেন্দা ও তোমার নুরে হয় জিন্দা ২

খোদার হুকুমে বান্দা তেমার নূরে হয় তৈয়ার…।ঐ

তোমার নূরে সব পয়দা নবী দেওয়ানা

আগার তোনা পয়দা হতো কুচ পয়দা হতো না

আবার জামাল কয় তামাসা তেরা ওগো জাল্লে শান 

জিন্দা তুমি জবতাগ দুনিয়া না হোগা পয়মাল ২

পাগল আলমগীর তোমার শাফায়াত চাহে একবার ২

আমি বড় গোনাগার আমি আছি বেকারার… ঐ 

    Ñগীতিকারঃ জামাল বৈয়াতী, শালিখা, মাগুরা ও  আলমগীর বয়াতী, বিজয়খালী, মাগুরা

দুই

ধন্য আমার সোনার বাংলা ২

সুন্দর এদেশ ভাই

জারী গাইবো কি রে ভাই

ও ভাইরে এমন দেশ আর নাই…ঐ

এ দেশের বয়াতী যত 

গান গেয়ে যায় অবিরত

কতজনার ভাগ্য হত 

সমাদর তার নাই 

নারী বেড়ায় জারী গেয়ে 

বেপর্দায় তার মুখ দেখায়ে

লজ্জ্বার মাথা ফেলছে খেয়ে ২

ভাইরে মাথায় গোমটা নাই 

জারী গাইব কিরে ভাই…ঐ

আগে এই সব দেশের বুকে 

গান গাইতো জ্ঞানী লোকে 

লোক আসিত ঝাকে ঝাকে

গান শুনিতে ভাই

মোসলেম মিয়া মরে গেছে

ওরে বিজয় বাবু বিদায় নেছে

কেবর মিয়া গান ছেড়েছে ২

দেখেন আব্দুল গনি নাই…ঐ

আকরাম কাদের বায়না নিয়ে

বেড়াইতো তারা জারী গেয়ে

গিরি কেসমত কামরুল শেষে

মুস্তাইনকে পাই

ও ভাই রওশন মিয়ার কাব্যের চোটে

ওরে মুখ দিয়ে গেজা ওঠে

কতজনার পরান ফাটে আমরা

যদি তাকে পাই…ঐ

আকবর নবাব কপাল মন্দ

পেয়েছিল তারা গানের গন্ধ

দিতে পারতো সুর আর ছন্দ

কিন্তু জোড়া নাই

তাই আছালতের যক্ষা হয়ে 

ভাইরে জীবন গেছে মাটি হয়ে

গায়না সে গান বায়না নিয়ে

দুঃখের সীমা নাই…ঐ

রিনা বেবী গায় জারী গান

ডলি, নাজমা, হাসিনা খান

কাজল রেখা গায় জারী গান

নিলুফা শুনতে পায়

ও ভাইরে রাশিদা শুনতে পায়

আর এরা নাচে খাটে উঠে

কত যুবক মরছে পরান ফেটে ২

কত যুবক আসে জুটে আমরা

বায়না নিতে চাই…ঐ

জারী কবি আর চলে না 

যে দেশে মানে না বেনা

বিধান আছে পঞ্চ বেনা 

মানে নারে ভাই

তাই সাইফুল দিদার গাইছে ভালো

আবার জামালের তাই কপাল পুড়িল

আলমগীর কয় এ কি হলো ২

আমি বসে ভাবি তাই …ঐ

তিন

আল্লার নামে নৌকা খানি

রাসুল নামে পাল খাটাও

জয় বাংলা জয় বাংলা বলে

কুলের তরী খুলে দাও

মুজিবকে করো কান্ডারী 

গোনের জোয়ার বেয়ে যাও…

    Ñগীতিকারঃ অশ্বিনি সরকার

চার

হায় পঁচিশে মার্চ মাসে এল দেশে রাজাকার

সোনার মুজিব পড়লো ধরা কান্দে জনতা

তাইতো দেশে দলাদলি 

কামান বারুদের গোলাগুলি, মলো মানুষ অযথা

সোনার বাংলা শ্মশান করলো 

সই কলো মোর বিধাতা

মোদের জন্মভ‚মি হলো শ্মশান

উড়িয়ে খেলা খেলছে বিশ্ব করতা

হায়রে ব্যাপার দুঃখের কারবার 

চোর ডাকাতে ভয়ংকর

ফাঁকি জুকি ধোকাবাজি সাজলো রাজাকার

নিল কত লুটপাট করে বুকে পিঠি ছোরা মেরে

জ্বালায় দিল বাড়ি-ঘর

কত কোলের ছেলে টানদে ফেলে

অস্ত্র মারে বুকের পর

নারীর বসন করে নেয় হরণ 

উলঙ্গ কামকে আব্রæ ঢাকিবার

কেউ বাড়ি ছেড়ে মলো পড়ে

ছেলে স্ত্রী পুত্র সন্তান

ডোবা খানায় পলো ঝাপাই বাঁচাইতে প্রাণ

কেউ হারালো সহায় সম্বল

পুটলি বানলো গায়ের কম্বল

চললো সবাই হিন্দুস্থান

দলে দলে যাই সকলে মিলে হিন্দু মুসলমান

কত গর্ভ-নারী হচ্ছে ডেলিভারী

রাস্তায় পড়ে কানছে হে ভগবান

সেই দৃশ্য দেখে কবি দুঃখে বুকে ভাসায় আখিলোর

হায়রে বাংলা সোনার মানুষ শোকে শোকাতর

পেটে নাই তাদের সোনাদানা

পরনে শুধু ছেড়া তেনা

কান্নাই একি হলো গোর 

বালক বৃদ্ধ নারী-কিশোর কেন্দে কেন্দে করে শোর

ক্যাম্পে যাহারায় মেশে 

মাঝে মাঝে ধরলো কলেরার বিমোর

সে যে সব শরনার্থী আশ্রয়প্রার্থী 

ভর্তি হলো ভারত মাঝার

বাস্তুহারা জ্যন্তমরা বুকে তাদের হাহাকার

সেই দেশে কবি অশ্বিনি মলো

কর্ম দোষেই আমার সব হারালো

গেল সাধের বাড়ি-ঘর

দ্বারা পুত্র পরিবার কতো রইলো বেসুমার

পরবাসে ময়লা বেশে 

দেশে যাবো সেজে মুক্তিযোদ্ধার

তাছাড়া ছিলনা আমাগের উদ্ধার

    Ñগীতকার ও সুরকারঃ অশ্বিনি সরকার

[বিঃদ্রঃ ভারতের বনগ্রাম হেলাঞ্চর বাজারে কবি অশ্বিনি সরকার উপরোক্ত জারিগানটি গেয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। এই গান গাওয়ার সুবাদেই কবি ভারতের অনেক স্থানে নির্বিবাদে ঘোরার অনুমতি পেয়েছিলেন। ]

পাঁচ

ওরে আমি ঘুরিরে পথে রাজাকারের জ্বালাতে

ঢাপের তলে মাথা রেখে বাঁচি এক রাতেÑ২

ওরে একদিন ভাত খাইতে বসিয়াছিলাম ঘরের দুয়ারে

শুনি রাজাকাররা আসিয়াছে রাস্তার ওপারে

শেষে থাল হাতে নিয়া বসি বাঁশতলাতে গিয়া

আমি দৌড়াই যায়ে বাঁচি চাচির আঁচলের তলে 

আমি ঘুরিরে পথে… 

ও ভাইরে রাইতের বেলায় ঘুম আসে না 

রাইফেল গুলির জ্বালায়

ভয়ে ভয়ে গেরস্থের বউ থাকে ঘরের কোণায়

শেষে দৌড়ের জ্বালাতে পরান বরই পাতাদে

ভাইরে পায়খানা করে পানি জোটে না হাতে

আমি ঘুরিরে পথে…

শেষে দুঃখ পেয়ে 

ও শেষে দুঃখ পেয়ে ভারতে গিয়ে অস্ত্র হাতে নিয়া

যুদ্ধ করি এই দেশেতে স্বাধীনও লাগিয়া

শেষে আম গাছের তলে ঘিরলো রাজাকারের দলে২

কত পাকসেনারা মরলো কত মুক্তিযোদ্ধার হাতে

আমি ঘুরিরে পথে…

আর আমরা আনসা আমরা বীর আমরা দেশের বীর

ওরে আল্লা ছাড়া কারো কাছে নোওয়াইকো শির

আব্দুল লতিফ বলে ভাই হাজার সালাম জানাইÑ২

আরে এই দেশটা স্বাধীন হলো মুক্তিযোদ্ধার হাতে

আমি ঘুরিরে পথে…   

Ñগীতিকার ও সুরকার বয়াতীআব্দুল লতিফ

ছয়

ওরে বাংলাদেশের চাষী ভাই হাল কান্ধে মাঠে যায়

মই দিয়ে আবাদ করা চাই

ওরে বাংলাদেশের চাষী ভাই হাল কান্ধে মাঠে যায়

বলদ জুড়ে আবাদ করা চাই

ওরে বাংলাদেশের চাষীভাই হাল কান্ধে মাঠে যায়

মই দিয়ে আবাদ করা চাই

ওরে মিয়া ভাই মই দিয়ে আবাদ করা চাই

আরে ফসফেট ইউরিয়া দিলে

জমিতে ফসল বাড়িবে পটাস সার কিছু দেওয়া চাই

আই…বাংলাদেশের চাষী ভাই হাল কান্ধে মাঠে যায়

বলদ দিয়ে আবাদ করা চাই, ওরে বাংলাদেশের চাষী ভাই আই…

আরে রুয়া আমন ধান লাগাইয়া আগাছা দাও ফেলিয়াÑ২

দিনে একবার জমি দেখা চাই 

ও মিয়া ভাই দিনে একবার জমি দেখা চাই…

আরে লাগাইবে পটল বাঙ্গি ঝিংগে ঊষি মুগ মসুরি

আখ লাগাইলে ভাতের অভাব নাইÑ২

ওরে বাংলাদেশের চাষী ভাই….

হায়রে বাংলাদেশের সরকার যিনি মোদের সাথে আছেন তিনিÑ২

লোন দিবে হাজারে হাজার

ও ভাই আমার লোন দিবে হাজারে হাজার

আরে লাগাও উস্তে তরি তরকারী রসুন পেয়াজ আর খেসারী

আম কাঁঠালের বাগান করা চাই..আই…

বাংলাদেশের চাষী ভাই হাল …আই

লাগাও কচু লাল আলু লাও তরকারী বোম্বাই মুলোÑ২

কিছু করো আনারসের বাগান

ওরে চাচাজান কিছু করো আনারসের বাগান

আরে লাগাইবে কলা পান সুপারিতে বেশী দাম

বেশি পয়সা ছোলা শস্য রাইÑ২

আই…বাংলাদেশের চাষী ভাই হাল… আই

আমরা চাষীর দল থাকবো মোরা শৃঙ্খল

সোনার বাংলা করিব উজ্জল

ওরে চাষীর দাল সোনার বাংলা করিব উজ্জল

ওরে আব্দুল লতিফ বলে ভাই ফলন দ্বিগুন করা চাই

মোদের কষ্ট দূরে ফেলা চাইÑ২

আই বাংলাদেশের চাষী ভাই হাল কান্ধে মাঠে যায়

বলদ জুড়ে আবাদ করা চাই…বাংলাদেশের চাষী ভাই..

          -গীতিকার ও সুরকার বয়াতী আব্দুল লতিফ

সাত

ওরে ইঁদুর হলো দেশের শত্রæ

জাতির শত্রæ জানিবে জানিবে

কিছু কথা বলবো আজ এই সভাতে আমি 

কিছু কথা বলবো আমি আজ এই সভাতে

ইঁদুর হলো দেশের শত্রæ 

জাতির শত্রæ জানিবে জানিবে

সত্য কথা বলবো কিছু আজ এই সভাতে…

ইঁদুর জব্দ করবো বলে দিলাম মাটির ঘর ছেড়ে

লক্ষ টাকা খরচ করে ইট দিলাম ঘরে

আবার অন্ধকারে ঝাপাঝাপি

ইঁদুর করে ঝাপাঝাপি

ঘুম আসে না রাতেতে রাতেতে

কিছু কথা বলবো আমি আজ এই সভাতে…

বাঁশের চুঙা কাটিয়ে তাতে তীর ধনুক জুড়ে

ঘিয়ে ভাজা কই মাছখানা রাখলাম ঘরটিতে

এবার হরতাল ডাকে ইঁদুরগনে

হরতাল ডাকে ইঁদুরগনে

ফসল রাখবো না আর ক্ষেতেতে ক্ষেতেতে

সত্য কথা বলবো কিছু আজ এই সভাতে… 

আমার গিন্নী বলেছে

মনের দুঃখ আমি বলবো কার কাছে

ইঁদুর মারা ওষুধ আনবা আজকে হাটেততে

আমার তোলা শাড়ী তুষ করেছে

তোলা শাড়ী তুষ করেছে

গয়না হামলা দিতেছে দিতেছে

কিছু কথা বলবো আমি আজ এই সভাতে…ঐ

-গীতিকার ও সুরকারঃ সুধীর বয়াতী, বেঙ্গা, মাগুরা।

আট

যৌতুকে ধরা না পড়ে ওরে মিয়া ভাই

মাসের হিসাব ঠিক রাখো কষে ২

ওরে যৌতুকের হাত থেকে বাঁচতে হলে

সরকারের আইন মেনে চলতে হবে

যৌতুকে ধরা না পড়ে ওরে মিয়া ভাই

মাসের হিসাব ঠিক রাখো কষে ২

সরকার ঘোষণা দিছে জানেন সবে ভাই

যৌতুকমুক্ত দেশ সমাজ গড়তে হবে তাই

রেডিও টিভি ক্যাসেট ভিসিআর মাইক টেলিফোনে

অফিস আদালত কোর্টকাচারী পরিবার অফিসে

দু’টি সন্তান জন্মরে দিতে ও সরকার জানাচ্ছে দেশের কাছে

যৌতুকে ধরা না পড়ে…ঐ

তারপরের ঘটনা আমি বলি সবার কাছে

যৌতুক ছাড়া ছেলে মেয়ে বিয়ের উপায় কি আছে

ঘোটক গেল ছেলের বাড়ি আর মেয়ের বাড়ি

যৌতুকের কথা কিছু আলাপ হয় তখনি

ঘোটক বলে হাজারে পঞ্চাশ, 

ও টাকা আমায় দিতে হবেরে

যৌতুকে ধরা না পড়ে…ঐ

আর লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে আনলো মডার্ন মেয়ে

হাতে ঘড়ি চোখে চশমা বিছনায় থাকে শুয়ে

খাবার নিয়ে শাশুড়ি যখন বৌমাকে ডাকিল

রেগে আগুন বৌমা তখন কথা না কহিল

ও আমার ঘুমের ডিষ্টার্ব হয়েরে গেল,

ও আমার সুখ নাই অন্তরেতে

যৌতুকে ধরা না পড়ে…ঐ

যৌতুক লোভে গনি মিয়া ছেলে বিয়ে দেয়

মেয়ের বয়স পঁচিশ ছাব্বিশ, ছেলের কুড়ি পোরে নাই

কয় মাস পরে ছেলে যখন রোগে পড়ে যায়

ছেলে নিয়ে যায় তখনই ডাক্তারের চেম্বাই

ও ডাক্তার দেখে শুনে দেয় নারে ঔষধ

বলে বিটারবৌ পাঠাও বাপের বাড়িতে

যৌতুকে ধরা না পড়ে…ঐ

কয়দিন পরে শশুর, বৌমাকে জিজ্ঞাসা করিলো

কাজ কর্ম না করে শুয়ে থাকো কেন বলো

কাজ কর্ম করবো কি তাই এসেছি এখানে

লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়ে আপনার ছেলে নিছি কিনে

ও আমার যেথায় খুশি সেথায়রে যাবো

ও শশুর আপনার ছেলে না নিয়ে

যৌতুকে ধরা না পড়ে…ঐ

         Ñগীতিকার ও সুরকারঃ সুধীর বয়াতী, বেঙ্গা, মাগুরা।

নয়

দেশ বাঁচবে জাতীয় সমাজ বাঁচবে

গাছ লাগাও সব মিলে, ও ভাই ক্ষেতে খামারে

সরকারের ঘোষণা আছে গাছ লাগোতে হবে

দেশের সম্পদ জাতির সম্পদ নিজের ভবিষ্যতে

গাছ লাগাও সব মিলে ও ভাই ক্ষেতে খামারে

বাংলাদেশে কত লেঅকে ভুল করে জীবনে

তিনটে চারটে মেয়ে ঘরে বিয়ে দিতে হবে

গাছ লাগানো থাকতো যদি দুঃখ পেত না জীবনে

ও ভাই গাছ লাগাও সব মিলে ক্ষেতে খামারে

বিয়ের পরে গাছ লাগাবে প্রতি পরিবারে

ছেলেমেয়ে বড় হবে গাছ যে বড় হবে

যাবতীয় খরচ বহন করবে গাছ থাকলে ক্ষেতে

ও ভাই গাছ লাগাও সব মিলে ক্ষেতে খামারে

আমা জাম লিচু কাঁঠাল কত মিষ্টি ফল

শাল সেগুন মেহগনী আরো লাগাও তাল

আমলকী হরিতকী লাগাও কানছি কোনাতে

গাছ লাগাও সব মিলে ও ভাই ক্ষেতে খামারে

সুধীরের তাই এই মিনতি জানাই দেশের কাছে

বৃদ্ধ বয়সের শেষ সম্বল গাছেতেই হইবে

পরিবেশদূষণ মুক্ত রাখবে গাছ থাকিলে ক্ষেতে

গাছ লাগাও সব মিলে ও ভাই ক্ষেতে খামারে…ঐ   

-গীতিকার ও সুরকারঃ সুধীর বয়াতী, বেঙ্গা, মাগুরা।

দশ

মাগুরাতে বসত করি আমরা বড় সুখে বড় সুখেরে

নবগঙ্গার কোলে কাল কাটাই

টাউনেতে যেয়ে দেখি মধুমতি হলে

কি আলামত লাগেছে তাই সকাল বিকালে

কত নরনারী দলে দলে এসে ভিড় জমায়

শান্তি মনে বেঁচা-কেনা লাভের আশা নাই

ওয়ারলেসে বাতাস ধরে দুরের খবর দেয় কানে

কানের কাছে ফোন ধরিয়া সমাচার জানাই

দেশ বিদেশের কুশল জানাই কেমন আছো ভাই

কবি বলে আপন খবরটা আগে জানা চাই

সোনালী রূপালী ব্যাংক পোস্ট অফিস থানা

গোডাউনে মাল ভরা পার্ক হলো ভয়না

কয়েদি যায় জেলখানা যার ভাগ্যে যা পাই

পাম্পে গেলে ডিজেল মেলে পেট্রোলের অভাব নাই

কোর্ট কাচারী সারি সারি ফৌজদারী আদালত

ঘরে ঘরে বিজলী বাতি করছে লাগলো আলামত

গান বান্ধে আমরা করছি বসত ঢাকা রোডে যাই

সুইজ গেটে কপাট আটা কোন দেশে নাই

মেছো বাজার কত মজার পাশে খেয়াঘাট

নদীর কুলে গুদম তুলা বোঝাই থাকতি পাট

তার পাশে লঞ্চঘাট শ্রীপুরেতে যাই

পাড় ঘাটেতে বসে বসে প্রেমের সারি গাই

হাইস্কুল একাডেমী আইএ বিএ কলেজ

গার্লস স্কুলে পাশ করে মেয়ের বাড়ে নলেজ

যোগাযোগে খাদ্য রবে মিতালিতে কত পাই

সব রকমের ঔষুধ পাবা গেলে দাদা ভাই

একদরে বেঁচে কোনে শরীফ বিল্ডিং এ যান

খেয়ে ভুলি পানের খিলি বাবু মিয়ার পান

চৌরঙ্গীতে কেনো সাবান ভালো মন্দ কত পাই

পাম্পে গেলে করাত কলে গাছ ফাঁড়ে মাস্টারী পিটিআই

সারতে গেলে সাধনায় যাও পাশে কুন্ডেশ্বরী

শান্তিলয়ে ঔষধ নেই দুঃখে কেবল মরি

মমিন নগর কেন শাড়ী ধুতি লুঙ্গি কত পাই

সব রকমের ঔষধ পাবা গেলে আমজেদিয়া দাদাভাই

নুলাতলায় রসের মেলা ত্রিবিনের গান

হাস ছেড়ে কাল মুসড়ে ধরে দেয়না রমনী

না চিনিলে ঔ গলি পরকাল খোয়াই

সাধু সঙ্ঘ করো রঙ্গ সাতদোয়াতে যাই

কে দিয়েছে এত সোহাগ ক্ষুদ্র মাগুরায়

ভালোবাসা দিয়ে কি সে গোপনেতে রয়

কবি অশ্বিনি কয় এ মাগুরায় শেষ আশা মিটাই

এই মাটিতে জন্মেছি যেন এই মাটিটা পাই।

 -গীতিকার ও সুরকারঃ চারণ কবি অশ্বিনী সরকার, সত্যপুর, মাগুরা

এগার

মঘি গায়ে বসত করি আমরা বড় সুখে বড় সুখেরে

সত্য মায়ের কোলে কাল কাটাই

সবুজ এ বনানী ঘেরা শ্যামল মায়ের কোলে

বার মাসে গাচ্ছে চাষী বাজায়ে মাদল

কুসুমা দেয় শুষমাদল যখন খুশি গাই

কাক কোকিলে কণ্ঠসুরে পূর্ণ জীবন পাই

ক্ষেতে ক্ষেতে ফসল ফলাই মাঠ ভরা কত আখ

তাল তেঁতুলের মিতা পাতায় মেশাই শাখের শাখ

কোন আদরে দিতেছে ডাক মাথা ঘুরি নিমাই

সব করেছে আপনছাড়া, আপনছাড়াতো কেউ নাই

ছোট বড় নাই ভেদাভেদ এক মায়ের সন্তান

আত্মায় আত্মায় মিলে থাকি আমরা হিন্দু মুসলমান

মসজিদেতে দিচ্ছে মুধুর আযান মন্দিরে বাঁজে ঘন্টা সানাই

মিলির মালা গলায় দিয়ে সুন্নতি গান গাই

কে দিয়েছে এত সোহাগ এই ক্ষুদ্র পল্লী গায়

ভালোবাসা দিয়ে কি সে গোপনেতে রয়

পাগল অশ্বিনী কয় এই মঘী গায় আমি যেন শেষ আশা মিটাই

এই মাটিতে জন্মেছি আমি যেন এই মাটিটা পাই…

           -গীতিকার ও সুরকারঃ চারণ কবি অশ্বিনী সরকার, সত্যপুর, মাগুরা

বার

বিপ্লবে বাংলা স্বাধীন আমরা পাই

ঘিরেছিল রাহুজনে সব মিলে দুশমন তাড়াই

দুষ্কিৃতি দুরাচারে শোষণ করে গেছে এই বাংলারে

বাংলা নিয়ে দ্ব›দ্ব করে দুঃখে দুঃখে কাল কাটাই

সুজলা সুফলা দেশ শোষনে করেছে শেষ

তাইতো ইষ্ট মরমেশ ঘুচাইবে বাংলার বালাই

দেশে এল শেখ মুজিবর দেখতে যেন বেঙ্গল টাইগার

মাউথ ইজ লায়ন আকার ভয়েজ ইস্রাফিল সানাই

ধর্মে কর্মে পরিপূর্ণ দয়াল যেন দাতা কর্ম

ক্ষুধিরামের মতোই কর্ম শুভাসচন্দ্রের সে জোড়ের ভাই

দেশে করো মাল আমদানী বিদেশে না করো রপ্তানী

খেয়াল রেখো ধনীজনি মণিমুক্তা আমরা যেন না হারাই

অশ্বিনী কয় কোমল কণ্ঠে প্রাণ দেবো রেজিমেন্টে

বিশ্ববাসী এক্য কণ্ঠে এ বাংলাদেশের গুণ গাই

বিপ্লবে বাংলা স্বাধীন আমরা পাই…

মাগুরা অঞ্চলের ভাব গান

এক

গেলাম মলাম চুবনি খালাম তবু লজ্জা হয় না

আমার এ জ্বালা সয় না।

বিষয় সম্পত্তি পেয়ে আপন ধন পরকে দিয়ে

তবু তার মন পাই না

খাতি দিলাম পরতি দিলাম দিলাম কাপড় গয়না

এটটুতি আর এটটু হলি আরতো কথা কয় না

আমার এ জ্বালা সয়না।

এ জ্বালা মিটাইতে যাবো আমি কোনবা দেশেতে

দীন মহিন্দ্র ভেবে ভেবে কোন উপায় পায় না

আমার এ জ্বালা সয় না।

-গীতকার ঃ মহিন্দ্র গোসাই, গোয়ালখালী, শালিখা, মাগুরা   

দুই

কেমন করে চড়বো বলো দুই চাকার এক বাইছিকলে

আমি যখন হুকুম করি মনে বলে উড়ো শাড়ি

হাত পা ভেঙে আছড়ে মরি হাসে নারি বুড়োর ছেলে

কেমন করে চড়বো বলো…

দেখে গাড়ির রঙ চেহারা পাম করে হয় আতœহারা

গোসাই মহিন্দ্র কয় দুঃখে সারা বুক ভেসে যায় নয়ন জলে

কেমন করে চড়বো বলো …

 -গীতকারঃ মহিন্দ্র গোসাই

তিন

খোঁজো যারে অতি দূরে

সে যে তোমার হৃদমাঝারে

ওরে দেহের দরজায় দিলে চাবিরে

ওরে মনি, যাবি সেও ঢাকা চরে

সে যে তোমার হৃদ মাঝারে

খোঁজো যারে…

    Ñগীতকারঃ বাউল আঃ লতিফ

চার

সাধে কিরে আমি পাগল

পাগল দেখি বিশ্ব ভরা

আয়কে পাগল হবি তোরা ২

তোর দিনের নবী পাগলের গোড়া

চরাইতো খোদেজার ভেড়া

ও তোর তোর দিনের নবী পাগলের গোড়া

চরাইতো খোদেজার ভেড়া

ওগো মেঘে এসে ছায়া দিত তার 

গায়ে লাগতো না বৃষ্টি খরা

হায় হায় মেঘে এসে ছায়া দিত তার 

গায়ে লাগতো না বৃষ্টি খরা

আয় কে পাগল হবি তোরা ২

গোলের পাগল ওয়াজ করনী

বিল্লালের গান দিল দিল আনি

হায় হায় গোলের পাগল ওয়াজ করনী

বিল্লালের গান দিল দিল আনি

তাতে খুশি হয়ে রব্ব গনি

পাগলের কথায় বাঁচায় মরা

হায় হায় খুশি হয়ে রব্ব গনি

পাগলের কথায় বাঁচায় মরা

আয় কে পাগল হবি তোরা ২

আর এক পাগল পাগলা ভোলা

অঙ্গেতে মাখাইতো ধূলা

হায়রে আর এক পাগল পাগলা ভোলা

অঙ্গেতে মাখাইতো ধূলা

ও তার ভেদের ঘরে দিয়ে তালা

শ্মশানে রয় গৃহছাড়া

ও সে ভেদের ঘরে দিয়ে তালা

শ্মশানে রয় গৃহছাড়া

আয় কে পাগল হবি তোরা ২

গোসাই অশ্বিনি বলে চতে পাগল

বকে বেড়াস আবোল তাবোল ২

ও তোর ভেদের ঘরে দিয়ে বেধেছে গোল

বাউল নিজামউদ্দিন বিবেক ছাড়া ২

আয় কে পাগল হবি তোরা ২

    Ñ গীতিকারঃ বাউল নিজাম উদ্দিন লালনী 

পাঁচ

পুরুষ পর্ব

পুরুষের গুনের কথা বলে যাই

ভাইরে ভাই পুরুষের গুনের কথা বলে যাই

প্রথম পুরুষ নূর নবীজী ২

তাহার আগে সৃষ্টি নাই

আমার প্রথম পুরুষ নূর নবীজী

তাহার আগে সৃষ্টি নাই

আল্লাহ নিজ গুন প্রকাশিতে 

আপনার শক্তি হতে

এ বিশ্বকে সৃজন করতে 

নূরের তৈয়ার করলেন সাই

ওরে সেই নূর হলো মোহাম্মদী নূর ২

দলিলেতে প্রমাণ পাই…ঐ

তাই দুনিয়ায় যত নবী যত রসুল

গাউস কুতুব আউলিয়া কুল

সৃষ্টি করছেন মালেকুল তাহার 

মধ্যে নারী নাই ২

আবার ইমামতী করে পুরুষে 

নারীদের অধিকার নাই…ঐ

আর পুরুষের রূপ দেখিয়া

নারী গেল বেহুশ হইয়া

অবাক হইয়া রইল চাইয়া

মুখেতে আর জবাব নাই ২

ওরে লেবু কাটতে আঙ্গুল কাটিল

ওই রূপের তুলনা নাই ২…ঐ

আর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ জাতি

এই পুরুষ হয় নারীদের পতি

পুরুষের পায়ে কর ভক্তি

পুরুষ ছাড়া রক্ষা নাই

আলমগীর কয় নারী জাতি

বড়াই কর কোন কথায় ২…ঐ

নারী পর্ব

ওরে নারী ছাড়া পুরুষের অস্তিত্ব নাই

ভাইরে ভাই নারী ছাড়া পুরুষের অস্তিত্ব নাই

নারী হয় সৃষ্টির মূলে হিসেব করে দেখেন তাই…ঐ

আল্লাপাকের ইচ্ছা জাগে

আপনার আশেকের বেগে

এ দুনিয়া সৃষ্টির আগে

মায়ার সৃজন করলেন সাই

সেই মায়া হলো ছায়াবতী

ধরে সে নারীর আকৃতি

দুনিয়ার সকল প্রকৃতি তারই

অংশ দেখতে পাই…ঐ

নারী হয় শক্তির মূলাধার

দেবের দেব আপনি মহেশ্বর

নারীর পদতলে পড়ে এবার

জীবক‚লকে মুক্তি দেয়

নারীর পায়ে দিলে ভক্তি

বিপদে সে পাবে মুক্তি

বাড়িবে তার দ্বিগুন শক্তি

ভক্তি ছাড়া মুক্তি নাই…ঐ

ভাই হযরত বিল্লাল যেজন ছিল

নারীর গুনে আয়ু পেল

নারীর সম্মান রাসুল দিল 

হাদিসে তার প্রমান পাই

ওরে নারী যদি দেয় স্বীকৃতি

হতে পারে সমাজ পতি

নারী হলো গুনবতী

সংসারে অশান্তি নাই…ঐ

এবার নারীর গুনে পুরুষ ধন্য

পীর আউলিয়া নারীর জন্য

কেউ যদি করে অমান্য

তার জীবন বিফলে যায়

আলমগীর কয় পুরুষ জাতি

নারী তোমার থাকলে সাথী

সমাজে পাইবে খ্যাতি

এই নারীর তুলনা নাই…ঐ 

গীতিকারঃ বয়াতী আলমগীর হোসেন, বিজয়খালী, মাগুরা।

ভজনগীতি

এসো মাগো বীণাপানি

কণ্ঠে ছন্দ যোগাও তুমি

এসোগো মা বীণাপানি

কণ্ঠে ছন্দ যোগাও তুমি

মাগো তোমারই সন্তানে ডাকে

কাতর হয়ে দিন রজনী

এসোগো মা বীণাপানি…

ত্রিনয়নে শিবেরই জায়া মা…

ত্রিনয়নে শিবেরই জায়া

তুমি মহাশক্তি মহামায়া

হৃদয় শক্তি যোগাও তুমি

এসোগে মা বীণাপানি…

বিদ্যাবুদ্ধি রাগ রাগিনী

মাগো তোমার সৃজিত বাণী

বিদ্যাবুদ্ধি রাগ রাগিনী

সবই তোমার সৃজিত বাণী

আমার হৃদ আসনে পদ্মাসনে

এসে বসো মাগো ভবানী

এসোগো মা বীণাপানি

সাধু গুরুর চরণাশে 

ঘুরে বেড়াই দেশ বিদেশে ২

দুখ সাগরে সন্তোষ ভাসে

দাও মা তুমি অভয় বাণী

এসোগো মা বীণাপানি…ঐ 

    Ñগীতিকার ঃ সন্তোষ বিশ্বাস, বেঙ্গা, মাগুরা

দেহতত্ত্ব

এক

মাটির দেহ এই মাটিতে 

যাবে মিশিয়া

থাকবে পড়ে বাদশাইগিরি

সব যাবে ফুরাইয়া।

বিষয় বিত্ত অর্থ সম্পদ

কি বা জমিদারী

থাকবে না কারো চিরদিন

মাত্র দিন দুই চারি

সব হবে মিছে ঝাকমারী

দেখ একবার ভাবিয়া

কোটি টাকার দালঅন কোঠা

বান্ধা স্বপ্নপুরি

পরের সাথে করলি বসত

আপনকে পর করি।

আল মামুন তাই সব ছাড়িয়া

চাইল ভালবাসা

ক্ষনিকের এই ভোগ বিলাসের

না করল আশা

হায়রে মানুষ হয় যে বেহুস

ভুলের বেসাত লইয়া।

-গীতিকার ঃ শুকুর আল মামুন

দুই

পোকায় খেল বোকার হাড়ি

চুরি গেল ঘরের মাল

হইলা না সামাল রে মন 

হইলা না সামাল।

বেসুমার মাল বোঝাই করে

দেখাদেখি সার

আসলে তোর নাইরে কিছুই

সব মিছে কারবার

ফাকা ঘরে একা বসে

শুকনা জমির কাটছো খাল।

পরের ঘরে বসত করে

করছো বাহাদুরি

আয়ু বেলা শেষের পথে

মাত্র দিন দুই চারি

অধিন…শুকুর খেলছে আড়ি

ব্যাংগের মত দিয়া ফাল।

-গীতিকার ঃ শুকুর আল মামুন

তিন

ও আমি ঘরে বেন্ধে ভাঙন ক‚লে 

বান্ধা বাড়ি ভাঙলো ভাঙনে

ওরে ঘরের বেসাত ধসে গেল গো ও ও ও

ওরে দয়াল পাগলা নদীর তুফানে

দয়াল পাগলা নদীর তুফানে

বান্ধা বাড়ি ভাঙলো তুফানে

মোর কূলেতে ভাঙন লেগে ঐ কূল পলো চর

মন করি ঐ চরে যাবো আমার কেউ করে না পার

ও কেউ বলে দেয়না পারের সমাচারগো ও ও ও

দয়াল বসে কান্দি নির্জনে, আমি বসে কান্দি নির্জনে

বান্ধা বাড়ি ভাঙলো তুফানে।

কূল ভাঙা এই নদীর ক‚লে বসে দিন রজনী

সর্বশ্ব হারায়ে কেবল আমি ঢেউয়ের মালা গুনি

নদীর তুফান দেখে ঠোট দু’খানি গো ও ও ও

নদীর তুফান দেখে ঠোট দু’খানি গো ও ও ও

দয়াল শুকায় যায় মন বিলিনে দয়াল 

শুকায় যায় মন বিলিনে

বান্ধা বাড়ি ভাঙলো তুফানে। 

যে গেরামে বশত করি মানুষ ষোল জন

সবাই হলো জ্যন্ত মরা ওগো পেয়ে জ্বালাতন

তারা পর লোভ লালসা করে গো ও ও ও

তারা পর লোভ লালসা করে গো ও ও ও

দয়াল নিল দলের ছয় জনে, তারা নিল দলের ছয়জনে

বান্ধা বাড়ি ভাঙলো তুফানে

বসত বাড়ি ভাঙলো ধূলায় গ্রাম বেড়ে জল

সে জন্য কালো কুমীর এলে বংশ করিল পয়মাল

বাউল নিজামের তাই ভাঙা কপাল গো ও ও ও 

বাউল নিজামের তাই ভাঙা কপাল গো ও ও ও 

দয়াল ভুল করে মূল সাধনে, আমি ভুল করে মূল সাধনে

বান্ধা বাড়ি ভাঙলো তুফানে। ঐ

-গীতিকার ঃ বাউল নিজাম উদ্দিন লালনী

চার

ঘর ভাঙ্গা এক মানুষ আমি 

কেমনে ঘরে রই

ঘরের বস্ত নাই ঘরে মোর 

দুঃখ কারে কই

বাইরে বেড়া আটা কুটা

ভিতর বাড়ি ফাঁকা

কেমন করে বন্ধুর সাথে

হবে আমার দেখা

প্রাণ বন্ধু বিহনে কথা

কারবা সাথে কই।

ঘরের আশায় ঘর বান্ধিলাম

থাকব বন্ধুর সাথে

সব হারাইয়া রইলাম পড়ে

অজানা এক পথে

পথের আশায় পথ খুঁজিতে

দিশে হারা হই।

-গীতিকার ঃ শুকুর আল মামুন

পাঁচ

ভবের খেলা সাংগ হবে

থাকবে সবই পড়ে…

ভবে একবার মনরে আমার

নয় সেদিন দুরে।

আতœ সুখের অহংকার আর

সাধের জমিদারী…

কেউ রবে না সঙ্গি সাথী

হবে দীন ভিখারী…২ (সেদিন)

কিসের বড়াই কর মিছে

যম রাজের দুয়ারে…

লাভের স্বার্থে পরকে ঠকাও

করে ছলচাতুরী

নিজেই ঠকলা ষোল আনা

দেখ হিসাব করি… রে মন ২

মিছে আশায় যোগের খাতায়

বিয়োগ নিলা করে।

-গীতিকার: শুকুর আল মামুন

ঋতু পর্বের গান

বৈশাখী গান

উপস্থিত সূধিজন করি আমি নিবেদন

নববর্ষে রইল সাদর সম্ভাষণ ২

বৎসরের প্রথমেতে সপথ করি একই সাথে

মিলে মিশে থাকব মোরা হয়ে আপনজন ঐ

বছরের প্রথম বৈশাখ মাস হয় কত যে বৈচিত্রময়

আর কত শত ফলের সমাস এ সোনার বাংলায় ২

আম জাম লিচু কাঁঠাল বাঙ্গি তরমুজ রসাল ফল

মনের সুখে আমরা সবাই করিব আপন ঐ

তাপিত দুপুরবেলা ছেলেরা করে খেলা

আর কৃষক ভাইরা হাল ছাড়িয়া ঝিমোয় গাছতলায় 

পাখপাখালি গাছে গাছে কত মধুর সুর তুইলাছে

আর মনের সুখে সবাই মিলে করি এ মাতম ঐ

শুরু হয় সাঝের বেলা কালবৈশাখীর নিত্য খেলা

আর ঝড় বৃষ্টি তুফান শিলা বৃষ্টি আরো সাইক্লোন

অধিন সোহরাব বলে দয়াময় এসব মোদের নাহি সয় ২

তোমা হতে পাই যেন দয়াল রহমতের বর্ষণ ঐ

– গীতিকারঃ সোহরাব হোসেন, হরেকেষ্টপুর, মহম্মদপুর, মাগুরা

সুরকারঃ ছমির বাউল, বুজরুক শ্রীকুন্ডি, মাগুরা

বর্ষাবরণ গান

সর্বনাইশা আষাঢ় মাইসারে

বৃষ্টি ঝরা দিন

নানান কথা উদয় মনে 

ভাবিয়া রঙ্গিন… বন্ধু

আইলা না একদিন।

ঝি ঝি ডাকা নিঝুম রাইতে

ঠান্ডা ঠান্ডা বায়

দুরু দুরু কাপে অন্তর

না জানি কি হয়

আমি কার বা কাছে

কই কেমনে

মনে জাগে করুণ বীণ।

আষাঢ় শ্রাবণ নতুন পানি 

কলকলাইয়া যায়…

সেই পানিতে মন যে আমার

সাঁতার কাটতে চায়

সেই আশা বুকে নিরাতে

হইয়া গেল ক্ষী। (বন্ধু)

-গীতিকার সুরকারঃ শুকুর আল মামুন

গুরুপদি গান

আছে অজনি সজনি মানুষ, অজনি সজনি মানুষ

দেখি যে ভেদ বিচারে ২ 

কোন মানুষে ভজবে তুমি তাই বলো মোরে ২

স্থুলের ঘরে আছে এক মানুষ

তার রূপের ছটা দেখে যেন হসনেরে বেহুস

তার সিং দরজায় মরণের ভয়, সিং দরজায় মরণের ভয়

আছে জ্যন্ত কালী হা করে, আছে জ্যন্ত কালী হা করে

কোন মাসুষে ভজবে তুমি তাই বলো মোরে ২

প্রমত্তের ঘরে এক মানুষ করে বাস 

উল্টা কলে উল্টা চলে খেলে নবরস

সেই খেলায় পড়ে হবি, সেই খেলায় পড়ে হবি

বেড়াচ্ছে দ্বারে দ্বারে, ও সে বেড়াচ্ছে দ্বারে দ্বারে

কোন মানুষে ভজবে তুমি তাই বলো মোরে ২

ও তাই বলছে ওস্তাদ মহেন্দ্রনাথ বিশ্বাস

সত্যবাদী হও নিজামুদ্দিন, ইন্দ্র কর বশ ২

এতো ছেলের হাতের মোয়া নয়গো ২

নিলাম খালাম টপ করে, নিলাম খালাম টপ করে

কোন মানুষে ভজবে তুমি তাই বলো মোরে ২ ঐ

-গীতিকার ও সুরকারঃ বাউল নিজাম উদ্দিন লালনী

শিষ্যপদি গান

আমার মাঝে কেবা আমি

চিনব কেমন করে (গুরু)২

শুনি তারে, না চিনিলে জ্যন্তমরণ,

মরে রয় সে, ভবের পরে।

কেবা চালায় কেবা চলে

কে কথা কয় শুনি…

কে চলে যায় বন্ধ করে

সাধের দেহখানি

অনড় হয়ে রয় পড়িয়া

নড়তে না আর পারে।

কোথা হতে এলঅম কোথায়

কি হলে হবে পরে…

বাসনা জেগেছে মনে

জানার ইচ্ছা ধরে গুরু ২

সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে

আল মামুনকে নাও ত্বরে।

-গীতিকার সুরকারঃ শুকুর আল মামুন

ধুয়া গান

মাগুরায় এক সময় ধুয়া গানের খুব প্রচলন ছিল। ধুয়া গানের প্রচুর শিল্পীও ছিল বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু বিলুপ্ত হতে চলেছে এসব গানের অস্তিত্ব। কারণ এগানগুলো সংগৃহিত নেই কারো কাছে। প্রবীন শিল্পী দু’একজন যারা জীবিত আছেন তারা অত্্যন্ত ক্ষীন অবস্থায় বাঁচিয়ে রেখেছেন এসব গান। কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজনও নেই এসব গানের। আগেকার দিনে ধুয়া গানের আসর বসতো বিভিন্ন শিল্পীর বাড়ি। মাঝে মাঝে মঞ্চে, মাঠে গাতার গান হিসাবেও গাওয়া হতো ধুয়া গান। ধুয়া গানে সাধারণত দেহতত্ত ও ধর্মতত্তে¡র বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে। যেমন হযরত হাসানের বিষপানে মৃত্যু বরণ, হযরত হোসেন পানি বিহনে মৃত্যুবরণ ফুঠে উঠেছে এসব ধুয়া গানে। এছাড়াও ইসলাম ধর্মের আরো অনেক বিরোচিত কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক ধুয়া গান। এসব গানে রচয়িতার নাম থেকে যায় গানের শেষের দিকে। তাতেই আমরা বুঝে নিতে পারি সেই নামে একজন বয়াতির অস্তিত্ব ছিল। 

এক

শোন বলি অবুঝ মনা

দেহের সন্ধান করলে না

এবার গুরুর চরণ করলে স্মরণ

সকল তত্ত¡ যায় জানা

আগে মনে প্রাণে লক্ষ্য হলো

ওরে মন, কর যে গুরুর ভজনা

আছে লাভ মোকামে মনের গুরু

দিল কানা চেয়ে দেখোনা

আর দুই লতিফা দেহের মাঝে

বলে যাই তোমার কাছে

আবার পহেলালো কৃপা বলো কল্পালো ধরেছে

আবার পিস্তানের ওই দমের ক্ষেতে

ওরে মন তাহার মোকাম রয়েছে

তাহারই ঐ মোকাম রয়েছে

আছে দুই লতিফা রুহু নামটিগো তাহার 

মোকাম দুগ্ধেরই নীচে

আছে তিন লতিফা চব্বি নাম যার

রয়েছে দেহের মাঝার

আবার চার লতিফা ময়েজ নাম যার

জ্ঞানিকজন করে বিচার

আবার পঞ্চম লতিফা কঠি নাম যার

ওরে মন সিজদা তালু মোকাম তার

রয়েছে এই দেহেরই মাঝার

আবার ছয় লতিফা এক খোপাগো 

বলে যাই ইস্রাফিল খোদার…

আর চার পেয়ালা চার জননী কবুল করেতেছে

আছে রাহুত, মাছুৎ, মালকুদ, জবরুত

চার মোকামে চারজন আছে

আছে জিহ্বা জিবরাইল, চোখে আজরাইল

কর্ণে ইস্রাফিল রয়েছে আমি কই দেশের কাছে

আছে চার খান্দানে চারজন মুরিদগো

নাসিকায় মিকাইল আছে…

আর লাল জরত সিয়া সবেদ চার রঙের ফুল

শাস্ত্রে পাওয়া যায়

ওরে সকল বিষয় জয়নাল বিশ্বাস বলিলাম তোমায়

ওরে লাল ফুলেগো রূপবা হয়

বলে যাই তোমার কাছে

আবার সফেদ ফুরৈ নুরের ফোঁটা দলিলে প্রমান আছে

আর সিয়া ফুল নুরে ঝলক দেয়

ওরে মন বলি আমি তোর কাছে

বলি আমি দশেরও কাছে

ভেবে ওসমান বলে দেখপিরে জয়নাল 

বিনয় করে গুরুজনের কাছে…

-গীতিকার বয়াতী জয়নাল বিশ্বাস

দুই

ওরে চললো হোসেন নিরে ছাড়িয়া 

শিবিরেরই কাব উঠলেন যখন

তখন কান্দে বিবিজন করিয়া রোদন 

চেয়ে দেখ পাক পাঞ্জাতন

আমরা ভাসছি যত শৈবালের মতন

হবে না ভাবের আলাপন

মুখখানি ঘুরায়ে দেখ কছম …..

নীচে ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে রাহে চললো ধায়ে 

দেখিল ফুরাতের জল

নিয়ে দেখি এসে জলে হলো কত বল 

আর দেখে সারে জাহান

বলে পান করবো সবতো পাতালের জল

ইতলে বিতলে নিতলে সোতাল 

তলাতলে মহাতল আরই রসাতল…..

নিয়ে বারী হাতে নিয়ে দেখে পাকাইয়ে 

রে পানির ধারা…..

বলে ওহে নিষ্ঠুর পানি কি কব কাহিনী 

পানিবিনে সকলহারা

ওরে আছে যারা মরিবে তারা

ওই বলে মারে হাতে ঝাড়া

ওরে ফুরাতের পানি তুই থাক পুরা…..

ও তাই উজির বিশ্বাস বলে যা আছে কপালে

তা কি আর খন্ডানো যায়

হাসান মৃত্যু হবার কালে হোসেনকে তা বলে

মরিবা দোস্ত কারবালায়

আমায় বলে গেছেন নবী দয়াময়

ইন্তেকাল এসে নূরের হাতে লেখা

তা রয় সিফতে কালুল্লায়…..

গীতিকার ও সুরকারঃ উজির বয়াতী, পারলা, মাগুরা। সংগ্রহঃ বয়াতী কালাম, বারাশিয়া, মাগুরা।

তিন

ও একদিন ডেকে কয় হাসান আলী

ও বিবি তুই কোথায় রলি

পিপাসাতে প্রাণ গোল মোর পানি খাবো…ও..ও..ও

ওরে ঠান্ডা পানি খেয়ে আমার প্রাণটা জুড়াবো…ও..ও..ও

ওরে শুনে বিবি ধেয়ে যায়

পানিতে বিষ গুলিয়ে দেয়

ছেমায় যায়ে পানি খাওগো সাহাজী…ই..ই..ই

ওরে ঠান্ডা পানির শরবত গুলিয়ে আমি এনেছি….

পানি খেয়ে কয় হাসান আলী

ও বিবি তুই কি দিলি

কলেজা ফাটিল আমার ফেটে যায় ছাতি….

পানি বলে বিষ খাওয়ায়ে আমার করলি অখ্যাতি

ও তাই ডেকে কয় হাসান আলী

শোন ভাই হোসেন আলী

জন্মের মতো তোরে বলি আমি

যাই তোরে কয়ে…এ…এ…এ

কাশেমেরই সঙ্গে দিও দিও তোমার সখিনার বিয়ে…

গীতিকার ও সুরকারঃ বয়াতী আব্দুল জব্বার, সংগ্রহঃ  বয়াতী কালাম মোল্যা, বারাশিয়া, মাগুরা।

বিহারীদের গান

আগেকার দিনে মাগুরা অঞ্চলে বিভিন্ন স্তরে সমাজের লোকেরা পালকি ব্যবহার করতো। তারা আট অথবা ষোল বেহারার পালকি ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে বিত্তবানদের মাঝেই পালকি ব্যবহারের প্রথা ছিল। তাদের পরিবারের মহিলারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালকিতে যাতায়াত করতেন। মহিলারা পালকিতে ঢুকে পড়লে পালকিটি শাড়ি বা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো। ষোল বেহারার পালকি খুব বড় আকারের ছিল। এই পালকিতে মানুষ শুয়ে যেতে পারতো। কিন্তু পালকি সবচেয়ে আকর্ষণীয়ভাবে ব্যবহৃত হতো বিয়েতে। বলা যান্ত্রিক যুগের প্রসার ঘটার পূর্বে পালকিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিলাসবহুল বাহন। পালকিতে চড়ে বিয়ে করতে যাওয়া সেকালে বেশ রোমাঞ্চকরও ছিল। বিয়ের পালকিতে সাধারণত চার বা ছয় বেহারার পালকি ব্যবহার করা হতো। মাগুরার বেহারাদেরকে কাহারও বলা হয়। যার ফলে সদর উপজেলার কুশাবাড়িয়া গ্রামে গড়ে উঠেছিল কাহার পাড়া। এই কাহাররা ভাড়া খাটানোর জন্য পালকি রাখতো। চল্লিশ/পঞ্চাশ বছর আগে মাগুরার কাহারদের পেশাই ছিল পালকি বওয়া। পালকি বেয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো। পালকি বওয়ার তালে তালে কাহাররা তাদের স্বরচিত গান পরিবেশন করতো। গানের সঙ্গে তারা নাচতো, পালকির ছাদে উঠে নানা ধরণের শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করতো। পালকি থেকে বউ/বর নামানোর পূর্বে বকশিষের রেওয়াজও ছিল তখনকার দিনে। বেহারাদের গানে পাওয়া যেত বিভিন্ন ধরণের রসদ। নতুন বউ লক্ষী হলে তার কি লক্ষণ, অলক্ষী হলে তার কি লক্ষণ গানের সুরে বেহারা বলে যেত নির্দ্বিধায়।  কিংবা বিয়ের পর নারী নির্যাতনের চিত্রও ফুটে উঠতো গানে গানে। কন্যাকে বিদায়ের যে করুণ সুর এবং মা-বাবাকে ছেড়ে যাওয়ার নিঃশব্দ আর্তনাদ বেহারাদের গানের মাঝে সবাই বুঝে নিত।   বিয়ের  যান্ত্রিকতার দরুন এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে বর্তমানে মাগুরার কাহাররা পালকি বওয়ার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় প্রবেশ করেছে। এখন আর সেই পালকি নেই, বেহারাদের গানও শোনা যায় না পালকি বওয়ার তালে তালে। সেসব এখন শুধুই অতীত। গানগুলো এখনও ধরে রেখেছে কাহার পাড়ার প্রবীণ বয়সের কিছু  মানুষ। 

এক

যাবো গাবতলার হাটে, ও নতুন চুরি উঠেছে ওরে…

চুরিতি মন হয়ে গেলো গাটি পয়সা পাঁচ আনা

ও চুরি দাও তুলে হাতে, ও যাবো পাড়ারও পরে

হাত ঘুরায়ে কইবো কথা পাড়ার ছেমড়িগের সাথে ওরে…

চুরিতি মন হয়ে গেলো গাটি পয়সা পাঁচ আনা

চুরির মূল্য দশ আনা গাটি পয়সা পাঁচ আনা

হাত ঘুরায়ে কইবো কথা পাড়ার ছেমড়িগের সাথে ওরে…

চুরিতি মন হয়ে গেলো গাটি পয়সা পাঁচ আনা

দুই

ওরে বাপের বাড়ি তোলা শাড়িরে শামেলা

বাক্সই তুলে থুলোরে শামেলা শোনরে

সেও শাড়ী মোর রইলো ঘরে শামেলা 

কে পরিবে শাড়ি শামেলা শোনহে…

বাপের বাড়ির গলার হার ওরে শামেলা 

বাক্স্্্্্্্্্্্্ই তুলে থুলোরে শামেলা শোনরে

সেও হারও মোর রইলো ঘরে শামেলা

কে পরিবে গলেরে শামেলা শোনহে…

বাপের বাড়ির হাতের পাশারে শামেলা

বাক্সই তুলে থুলোরে শামেলা শোনরে

সেও পাশা মোর রইলো রইলো ঘরে শামেলা

কে দেবে মোর হাতেরে শামেলা শোনহে…

বাপের বাড়ির হাতের চুড়িরে শামেলা

বাক্সই তুলে থুলোরে শামেলা শোনরে

সেও চুরি মোর রইলো ঘরে শামেলা 

কে দেবে মোর হাতেরে শামেলা শোনহে…

তিন

ওরে নতুন গাছে নতুন তক্তা মাঝি

টোকা দিলে কি বাজেরে মাঝি শোন হে…

ওরে কলা গাছে কলা ধরেরে মাঝি 

খায়ে করলো চোচারে মাঝি শোন হে…

ওরে তেঁতুল গাছে তেঁতুল ধরেরে মাঝি

খায়ে করলো চোচারে মাঝি শোন হে…

ওরে ডালিম গাছে ডালিম ধরেরে মাঝি

রসে টলমল করে মাঝি শোন হে…

ওরে পাগল করলি পাগল করলি

পাগল করলি শামেলা পাগল করে চলে গেলিরে…

তথ্যসংগ্রহঃ 

বীরেন বিহারা 

বয়স ৫০ বছর 

পিতাঃ অমূল্য বিহারা 

গ্রামঃ কাহার পাড়া, কুশাবাড়িয়া

উপজেলা ও জেলাঃ  মাগুরা

বিচ্ছেদ গান

এক

পরের মানুষ পর হইয়াছেরে..এ…এ

ওরে আপন, বলি কারে

সে চিল মোর অতি আপনরে…

গেল সে পর, করে। (আপন)

দিন কেটে যায় অতি কষ্টে

থাকি পন্থ চেয়ে…

আসবে কবে বন্ধু আমার

যাবে সঙ্গে নিয়ে

এ দেহমন, জীবন যৌবন রে…

ওরে আমি, সব দিয়াছি যারে। (আপন)

আমি আমার কে বা আমি

জানি না কোথায়…

স্রোতের শেওলার মতই ভাসি

পড়ে অবহেলায়

কপালে কি এই ছিলরে…

ওরে আমি, দাড়াব কার তরে। (আপন)

প্রথম জীবনে বন্ধু

ছিল পাশাপাশি….ই…

ভালবাসার গান শুনাইয়া

(আমায়) করতো উদাসি

সেই বন্ধু পর, করল এখন রে….

ওরে দুঃখে শুকুর তাই মরে। (আপন)

-গীতিকার ঃ শুকুর আল মামুন, মাগুরা

দুই

দিনে দিনে দিন চলে যায়

মাসের পরে মাস

তোরে খুঁজে খুঁজে হলাম সারা

মিটল না মোর আশ।

তোর তালাসে পাগল বেসে

হইলাম দেশান্তর

সোনার পুরি ছাড়লাম আমি

ছাড়লঅম সুখের ঘর

আর কত কাদাইয়া নিঠুর

দুঃখ দিতে চাস।

গড়েছিলাম সোনার খাঁচা

তোরই তরে হায়

তোর বিরহে মনের বাসা 

আজ যে ভেঙ্গে যায়

তবু যে হায় খুঁজে ফিরি

তোরে বার মাস।

-গীতিকারঃ শুকুর আল মামুন, মাগুরা

তিন

আমি তোমার মনের যোগ্য নই ব্যথা কারে কই

আমি কি তোমার মনের যোগ্য নই…ঐ

ও মনরে তোমায় আমি ভালবাসি

বারে বারে ফিরে আসি

প্রতিদিন তোমার খরব লই আমার বান্ধবরে

প্রতিদিন তোমার খবর লই

তুমিতো জিগাও না মোরে আছি আমি কেমন করে ২

এ দুঃখ কেমন করে সই ব্যথা কারে কই…ঐ

ও মনরে যত খুশি কাঁদাও মোরে

আবার আমি আসবো ফিরে

তোমার স্মৃতি বুকে চেপে রই আমার বান্ধবরে

তোমার স্মৃতি বুকে চেপে রই

বুঝতে যদি মনের ব্যথা দুঃখ দিতে নাই অযথা ২

আমি তোমার কত আপন হই ব্যথা কারে কই…ঐ

ও মনরে এমন প্রেম যে করিল

জ্বলে পুড়ে সেই মরিল

বালুর চরে যেমনি ফোটে খই আমার বান্ধবরে

বালুর চরে যেমনি ফোটে খই

আলমগীর কেঁদে বলে বক্ষ ভাসে নয়ন জলে ২

তোমার লাগি সর্বহারা হই ব্যথা কারে কই…ঐ 

গীতিকারঃ আলমগীর হোসেন, বিজয়খালী, মাগুরা

মাগুরা অঞ্চলের মেয়েলী গীত

মেয়েলী গীত লোকসঙ্গীতের অন্যান্য ধারা থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহন করে। মেয়েলী গীতের জন্য কোন বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না কোন প্রশিক্ষণ। দলগতভাবে মেয়েলী-গীত পরিবেশিত হয়। মেয়েলী-গীতে ফুটে ওঠে প্রেম-বিরহ-বেদনা। মাগুরা অঞ্চলে বিবাহকেন্দ্রিক মেয়েলী-গীত এর প্রচলন রয়েছে। বৈবাহিক আচারগুলো অনুষ্ঠিত হয় বিবাহের বেশ কয়েকদিন পূর্ব থেকে এবং তা চলে বিবাহ পরবর্তী কয়েকদিন পর্যন্ত। গায়ে হলুদ, মেহেদি তোলা ও কনেকে সাজানো, ক্ষীর খাওয়ানো, বরস্নান, বরণডালা, বর বিদায়, মাড়োয়া সাজানো, কনে বিদায়, বধুবরণ, বাসর জাগা, নায়র প্রভৃতি অনুষ্ঠানগুলো পালিত হয় মেয়েলী গীতের মাধ্যমে। বিবাহ অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর করার জন্যই এখনও আচারগুলো টিকে আছে। 

মাগুরা অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজের সবচেয়ে উৎসবমুখর অনুষ্ঠান গায়ে হলুদ। এই অনুষ্ঠানটি ধনী-দরিদ্র সকল স্তরের মানুষের বিয়েতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় পাত্র-পাত্রী উভয়ের বাড়িতে বিয়ের পাঁচ/সাত দিন আগে থেকে। বর-কনের বোন, ভাবী, দাদি, নানি পর্যায়ের রমনীরা এতে অংশ নেয়। হলুদ দেয়ার পূর্বে বর বা কনেকে একটি পিঁড়ির উপর বসানো হয়। তখন পাড়ার মহিলারা গীত পরিবেশন করেঃ

এক

হাসি মনও হলুদের গুড়ো

হাসি মনও হলুদের গুড়ো

আরো বরণ কুলো নারে

আরো বরণ ডালা নারে

ছেলের মা ধন কান্দন না কান্দে

ছেলের মা ধন কান্দন না কান্দে

বউমা বুঝি কালো নারে

বউমা বুঝি কালো নারে

হেছাক বাতি জ্বালিয়ে দেখ

মমের  বাতি জ্বালিয়ে দেখ

বউমা কাঁচা সোনা নারে…

মেয়ের মা ধন কান্দন না কান্দে

মেয়ের মা ধন কান্দে না কান্দে

জামাই বুঝি কালো নারে

মেয়ে মানুষ করেরে আমি ছাইতি পানি ঢাললাম

হাসি মনও হলুদের গুড়ো আরো বরণ কুলো নারে

আরো বরণ ডালা নারে…

দুই

আমার দুলালের যেইনা রং কাচা হলুদের সেই না রং

ওই যে রোদে গেলে ঘামে দুলালের মুখ ওরে

দুলালের যদি মা ধন হও আন্চল দিয়ে মুছাও দুলালের মুখ ওরে

কাচা হলুদের যেই না রং আমার দুলালের সেই না রং

ওই যে রোদে গেলে ঘামে দুলালের মুখ ওরে

দুলালের যদি বু ধন হও আন্চল দিয়ে মুছাও দুলালের মুখ ওরে

কাচা হলুদের যেই না রং আমার দুলালের সেই না রং

দুলালের যদি নানী হও আন্চল দিয়ে মুছাও দুলালের মুখ ওরে…

কনেকে স্নান করানোর সময় যেমন এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়। তেমনি বাবা-মাকে ছেড়ে যেতে হবে বিষয়টি ভাবতেই কনের মন বেদনাকাতর হয়ে ওঠে। সে ভাবে তাকে ছেড়ে থাকতে তার বাবা-মা ভাই-বোনের অনেক কষ্ট হবে। তবুও বাবা-মাকে সান্ত¡না দিতে সে একটুও ভুল করে না। 

ইলসে মাছের বিলসে কাটা মা রঙ ফুলের ও পাংখা হরিন ফুলের ডাটি

সেইনা পাংখাচুরি না করল মা ঝিনেদারও সিপাই

পাংখার জন্য কেন্দনা মাগো কেন্দ বাচার জন্য

বাচা তোমার আললাদের ছেলে মা গোছল ভালো করে

তোমার বাচার দুটি চোখের পানিতে মা গোসলের চাড়ি ভাসে।

ইলসে মাছের বিলসে কাটা মা রং ফুলের ও পাংখা হরিন ফুলের ডাটি

সেনা পাংখা চুরি না করল মা যশোরের ওই সিপাইরে

পাংখার জন্য কেন্দ না কেন্দ পুত্রের জন্য

পুত্র তোমার আললাদের ছেলে মা গোছল ভালো করে

তোমার পুত্রের দুটি চোখের পানিতে কান্দের গামছা ভেজে

মেহেদী তোলা ও কনেকে সাজানো মূলত মুসলিম পরিবারেই দেখা যায়। বর-কনের উভয় পরিবারেই মেহেদী তোলার অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। বিশেষ করে হাত-পা-নখ-হাতের তালু  মেহেদী রঙে রাঙানো হয়। মেহেদী দেওয়ার সময়ও মেয়েরা দল বেধে গীত পরিবেশন করেঃ

মিন্দি তলায় যেয়েরে আলেয়া ওইযে ছিড়ে সোনার মিন্দি

সোনার মিন্দি ছিড়েরে আলেয়া ওইযে থয় ও সোনা কোচে

সোনার কোচে থুয়েরে আলেয়া যায়ও পাকের ঘরে

পাকের ঘরে যায়েরে আলেয়া ফেললো সোনার পাটা

সোনার পাটা ফেলেরে আলেয়া বাটলো সোনার মিন্দি

সোনার মিন্দি বেটে আলেয়া নেয় ও সোনার নখে

সোনার নখে নিয়েলো আলেয়া যায়ও গাঙগের ঘাটে

গাঙগের ঘাটে যায়েলো আলেয়া ধুলো সোনার মিন্দি

সোনার মিন্দি ধুয়েলো আলেয়া ফিরলো বাড়ির দিকে

বাড়ির দিকে ফিরেরে আলেয়া যায়ও বাসর ঘরে

বাসর ঘরে ঘরে যায়েরে আলেয়া ফেললো সোনার বিছনা

সোনার বিছনা ফেলেরে আলেয়া শোয়ও সোনার খাটে

মিন্দি তলায় যেয়েরে আলেয়া ওই য়ে সোনার মিন্দি…

বিয়ে হওয়ার পর কনে স্বামীর প্রেম-সোহাগ লাভ করলেও বাবা-মা, ভাই-বোন, আতœীয়-স্বজনের স্নেহ ও মমতা ভুলতে পারে না। তাছাড়া, কৃষক পরিবারে বিয়ে হওয়ার পর সংসারের কাজ করতে করতে কনের চেহারার লাবণ্য হারিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নানাজান নাতিকে দেখতে এলে নাতী তার শারীরিক অবস্থা ও হৃদয়ের আবেগ প্রকাশ করে নানার কাছে। এই বিষয়টি উপলব্ধিতেও মেয়েলী গীত রয়েছেঃ

বারো বারো বছর মানুষ করে নানাজান দিছলেন পরের ঘরে

ওকী আমি আমি শুনাই রোদে পুড়ে গেছি

ওকী আমি আমি শুনাই কালো হয়ে গেছি

মারে যায়ে কইও খবর নানাজান শুনাই বড়ই সুখী

মাথার কাপড় ঘুচিয়ে দেখ নানাজান কাইও চিলি বাসা

পিঠির কাপড় উল্টায়ে দেখ নানাজান জোড়া বেতের বাড়ি

ওকী আমি আমি শুনাই কালো হয়ে গেছি

বাপজানরে যায়ে কইও খবর নানাজান শুনাই বড় সুখী

বারো বারো বছর মানুষ করে নানাজান দিছলেন পরের ঘরে…

বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রায় সবটাই আনন্দের, উৎসবের ও কলরবের। গায়ে হলুদ থেকে কনে সম্প্রদান পর্যন্ত প্রতিটি আচারই উৎসবের। কিন্তু কনে বিদায়ের সময় বাবা-মা ও আতœীয়-স্বজনের হৃদয় ব্যাথাতুর হয়ে ওঠে। তখন সবই কনেকে শান্ত¡না দিয়ে থাকে। এ বিষয়েও মহিলাদের মাঝে প্রচলিত গীত রয়েছেঃ 

কাঁচায় নিমফুল পাকায় নিমফুলরে নিমফুল নিমফুল ধরেছে থোপে থোপে নারে

একটা নিমফুল ছিঁড়তে গেলেরে দরদের মা ধন বসে কান্দে নারে

আর কান্দোনা দরদের মা ধনরে তোমরাই তোমরাই হবে পর ওরে

যারাই দিবে নাকের নাকফুলরে তারাই তারাই হবে আপনরে

একটা নিমফুল ছিঁড়তে গেলেরে দরদের চাচি বসে কান্দেরে 

আর কান্দোনা দরদের চাচিরে তোমরাই তোমরাই হবে পর ওরে

যারাই দিবে কানের কানফুলরে তারাই, তারাই হবে আপনরে

কাাঁচই নিমফুল পাকায় নিমফুলরে নিমফুল ধরেছে থোপে থোপে নারে

বিয়ের দিন অথবা দু’এক দিন আগে থেকেই বরপক্ষ পান-সুপারি এবং অন্যান্য সাজ সরঞ্জামাদি পাঠিয়ে থাকে কনেপক্ষের বাড়িতে। এই পান-সুপারিকে কেন্দ্র করেও মেয়েলী গীতের প্রচলন রয়েছেঃ

ডালা ভরা কাচা সুবোরী বাটা ভরা পান রওসা খিলাওরে বাটার পান

না যদি খিলাইতে পার তোমার মাকে কর দান রওসা খিলাওরে বাটার পান

ডালা ভরা কাচা সুবোরী বাটা ভরা পান রওসা খিলাওরে বাটার পান

না যদি খিলাইেতে পার তোমার বোনকে কর দান রওসা খিলাওরে বাটার পান

না যদি খিলাইতে পার তোমার নানীরে কর দান রওসা খিলাওরে বাটার পান

কনেকে যখন বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে শ্বশুর কিংবা ভাসুর কিংবা দেবর আসে, তখন কনে বিভিন্ন অজুহাতে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু পতি যদি নিজেই নিতে আসে তাহলে কনের মন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। তখনই সে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সম্মতি প্রকাশ করে। মেয়েলী গীতে এ বিষয়টিও বাদ পড়েনিঃ 

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে

যমুনার ঘাটে যায়েরে ওহারে কতরি মুখ ও মানজন করে নারে

শীগগির করে আসরে কতরী তোমার শশুর আইছে নিতি নারে

আসকি শশুর বসুকনা শশুর মা যাবনা শশুরির সাথে নারে 

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে

শীগগির করে আসরে কতরী তোমার ভাসুর আইছে নিতি নারে

আসুক ভাসুর বসুক না ভাসুর ভাবী যাব না ভাসুরির সাথে নারে

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে

যমুনার ঘাটে যায়েরে ওহারে কতরি গাও ও মানজন করে নারে

শীগগির করে আসরে কতরি তোমার পতি আইছে নিতি নারে

আসুক পতি বসুকনা পতি মা যাব পতির সাথে নারে 

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে…

বিবাহকেন্দ্রিক বিষয়গুলো ছাড়াও স্বামী-¯ী¿র দৈনন্দিন বিরহের অন্যান্য বিষয়াবলীও ফুটে ওঠে মেয়েলী গীতেঃ 

কালা ছেমড়া বাঁজাইরে বাঁশি নারকেল গাছের আগায়রে বাঁশি কে বাঁজায়

আমার সাধু আটকাইরে রইছে বরিশালের জেলায়রে বাঁশি কে বাঁজায়

সিঁথের সিন্দুর বন্ধ করে থুয়ে সাধুরে করব খালাশরে বাঁশি কে বাঁজায়

নাকের নাকফুল বন্ধকরে থুয়ে সাধুরে করব খালাসরে বাঁশি কে বাঁজায়

আমার সাধু আটকায়ে রইছে মাগুরারও জেলায়রে বাঁশি কে বাঁজায়

কানের কানফুল বন্ধকরে থুয়ে সাধুরে করব খালাসরে বাঁশি কে বাঁজায়

হাতের চুড়ি বন্ধকরে থুয়ে সাধুরে করব খালাসরে বাঁশি কে বাঁজয়

কালো ছেমড়া বাঁজায়রে বাঁশি নারকেল গাছের আগায়রে বাঁশি কে বাজায়

মেয়েলী গীতে প্রেমের বিষয়টি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। এসব গীতে পুরুষ-রমনীকে বিভিন্ন ভাবে উস্কিয়ে তোলার বিষয়টি বেশ উপভোগ্য বিষয়। গানের মাঝে প্রেমে পড়া নারী-পুরুষকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন বিষয়ে সতর্কও করা হয়। আবার পুরুষ রমনীকে পাবার জন্য ব্যকুলতা প্রকাশ করে গানে গানেঃ

এক

আম ধরে থলি থলি পাগল আলী তেঁতুল ধরে বেঁকা

বারে বারে বারণ করি পাগল আলী যাসনে দক্ষিণ পাড়া

দক্ষিন পাড়ায় দুটি মেয়েরে পাগল আলী শুধুই রসে ভরা রে

পাগল আলী যাসনে দক্ষিণ পাড়া

কেড়ে নিবি কান্দের গামছা পাগল আলী ছিড়বে গলার মালা

যাসনে দক্ষিণ পাড়া

আম ধরে থলি থলি পাগল আলী তেঁতুল ধরে বেঁকা

বারে বারে বারণ করি পাগল আলী যাসনে উত্তর পাড়া

উত্তর পাড়ার দুটি মেয়ে পাগল আলী শুধুই রসে ভরা রে

পাগল আলী যাসনে উত্তর পাড়া

কেড়ে নেবে হাতের ঘড়ি পাগল আলী ছিড়বে গলার মালা

যাসনে উত্তর পাড়া

দুই

ওদিক সরে বান্ধরে নৌকা আমি জল ভরিবার আইছি

হারে ও ……যাও সরে………….

এত বড় হইছোরে নিলে ও তোমার সিঁতে রইছে খালি

আমার সাথে কলি কথা দেব সিঁতের সিঁদুর

হারে ও …….যাও সরে ………..

তোমার সাথে কলি কথা আমার যাবে বাপের সরমান

হারে ও …….যাও সরে…………

তোমার বাপের সরমানরে রাখবো ও নিলে আমি হাজার টাকা দিয়ে

হারে ও ……..যাও সরে…………

এত বড় হইছোরে নিলে ও তোমার নাক রইছে খালি রে

আমার সঙ্গে কইলে লো কথা দেব নাকের নাক ফুল ওরে

হারে ও ……..যাও সরে…………

তোমার সাথে কইলে লো কথা আমার যারে চাচার সরমান ওরে

হারে ও ……..যাও সরে…………

তোমার চাচার সরমান রাখবো আমি হাজার টাকা দিয়ে

হারে ও ……..যাও সরে………… ঐ

গীত সংগ্রহঃ 

মোছাঃ রেবা খাতুন                        মোছাঃ আছিরন খাতুন

বয়সঃ ৪৫ বছর                        বয়সঃ ৪৭ বছর

স্বামীঃ মোঃ খলিল বিশ্বাস                    স্বামীঃ মোঃ আতিয়ার বিশ্বাস

গ্রামঃ মাজগ্রাম                                    গ্রামঃ মাজগ্রাম

উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।                    উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।

মাগুরা অঞ্চলের মেয়েলী গীত

মেয়েলী গীত লোকসঙ্গীতের অন্যান্য ধারা থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহন করে। মেয়েলী গীতের জন্য কোন বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না কোন প্রশিক্ষণ। দলগতভাবে মেয়েলী-গীত পরিবেশিত হয়। মেয়েলী-গীতে ফুটে ওঠে প্রেম-বিরহ-বেদনা। মাগুরা অঞ্চলে বিবাহকেন্দ্রিক মেয়েলী-গীত এর প্রচলন রয়েছে। বৈবাহিক আচারগুলো অনুষ্ঠিত হয় বিবাহের বেশ কয়েকদিন পূর্ব থেকে এবং তা চলে বিবাহ পরবর্তী কয়েকদিন পর্যন্ত। গায়ে হলুদ, মেহেদি তোলা ও কনেকে সাজানো, ক্ষীর খাওয়ানো, বরস্নান, বরণডালা, বর বিদায়, মাড়োয়া সাজানো, কনে বিদায়, বধুবরণ, বাসর জাগা, নায়র প্রভৃতি অনুষ্ঠানগুলো পালিত হয় মেয়েলী গীতের মাধ্যমে। বিবাহ অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর করার জন্যই এখনও আচারগুলো টিকে আছে। 

মাগুরা অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজের সবচেয়ে উৎসবমুখর অনুষ্ঠান গায়ে হলুদ। এই অনুষ্ঠানটি ধনী-দরিদ্র সকল স্তরের মানুষের বিয়েতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় পাত্র-পাত্রী উভয়ের বাড়িতে বিয়ের পাঁচ/সাত দিন আগে থেকে। বর-কনের বোন, ভাবী, দাদি, নানি পর্যায়ের রমনীরা এতে অংশ নেয়। হলুদ দেয়ার পূর্বে বর বা কনেকে একটি পিঁড়ির উপর বসানো হয়। তখন পাড়ার মহিলারা গীত পরিবেশন করেঃ

এক

হাসি মনও হলুদের গুড়ো

হাসি মনও হলুদের গুড়ো

আরো বরণ কুলো নারে

আরো বরণ ডালা নারে

ছেলের মা ধন কান্দন না কান্দে

ছেলের মা ধন কান্দন না কান্দে

বউমা বুঝি কালো নারে

বউমা বুঝি কালো নারে

হেছাক বাতি জ্বালিয়ে দেখ

মমের  বাতি জ্বালিয়ে দেখ

বউমা কাঁচা সোনা নারে…

মেয়ের মা ধন কান্দন না কান্দে

মেয়ের মা ধন কান্দে না কান্দে

জামাই বুঝি কালো নারে

মেয়ে মানুষ করেরে আমি ছাইতি পানি ঢাললাম

হাসি মনও হলুদের গুড়ো আরো বরণ কুলো নারে

আরো বরণ ডালা নারে…

দুই

আমার দুলালের যেইনা রং কাচা হলুদের সেই না রং

ওই যে রোদে গেলে ঘামে দুলালের মুখ ওরে

দুলালের যদি মা ধন হও আন্চল দিয়ে মুছাও দুলালের মুখ ওরে

কাচা হলুদের যেই না রং আমার দুলালের সেই না রং

ওই যে রোদে গেলে ঘামে দুলালের মুখ ওরে

দুলালের যদি বু ধন হও আন্চল দিয়ে মুছাও দুলালের মুখ ওরে

কাচা হলুদের যেই না রং আমার দুলালের সেই না রং

দুলালের যদি নানী হও আন্চল দিয়ে মুছাও দুলালের মুখ ওরে…

কনেকে স্নান করানোর সময় যেমন এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়। তেমনি বাবা-মাকে ছেড়ে যেতে হবে বিষয়টি ভাবতেই কনের মন বেদনাকাতর হয়ে ওঠে। সে ভাবে তাকে ছেড়ে থাকতে তার বাবা-মা ভাই-বোনের অনেক কষ্ট হবে। তবুও বাবা-মাকে সান্ত¡না দিতে সে একটুও ভুল করে না। 

ইলসে মাছের বিলসে কাটা মা রঙ ফুলের ও পাংখা হরিন ফুলের ডাটি

সেইনা পাংখাচুরি না করল মা ঝিনেদারও সিপাই

পাংখার জন্য কেন্দনা মাগো কেন্দ বাচার জন্য

বাচা তোমার আললাদের ছেলে মা গোছল ভালো করে

তোমার বাচার দুটি চোখের পানিতে মা গোসলের চাড়ি ভাসে।

ইলসে মাছের বিলসে কাটা মা রং ফুলের ও পাংখা হরিন ফুলের ডাটি

সেনা পাংখা চুরি না করল মা যশোরের ওই সিপাইরে

পাংখার জন্য কেন্দ না কেন্দ পুত্রের জন্য

পুত্র তোমার আললাদের ছেলে মা গোছল ভালো করে

তোমার পুত্রের দুটি চোখের পানিতে কান্দের গামছা ভেজে

মেহেদী তোলা ও কনেকে সাজানো মূলত মুসলিম পরিবারেই দেখা যায়। বর-কনের উভয় পরিবারেই মেহেদী তোলার অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। বিশেষ করে হাত-পা-নখ-হাতের তালু  মেহেদী রঙে রাঙানো হয়। মেহেদী দেওয়ার সময়ও মেয়েরা দল বেধে গীত পরিবেশন করেঃ

মিন্দি তলায় যেয়েরে আলেয়া ওইযে ছিড়ে সোনার মিন্দি

সোনার মিন্দি ছিড়েরে আলেয়া ওইযে থয় ও সোনা কোচে

সোনার কোচে থুয়েরে আলেয়া যায়ও পাকের ঘরে

পাকের ঘরে যায়েরে আলেয়া ফেললো সোনার পাটা

সোনার পাটা ফেলেরে আলেয়া বাটলো সোনার মিন্দি

সোনার মিন্দি বেটে আলেয়া নেয় ও সোনার নখে

সোনার নখে নিয়েলো আলেয়া যায়ও গাঙগের ঘাটে

গাঙগের ঘাটে যায়েলো আলেয়া ধুলো সোনার মিন্দি

সোনার মিন্দি ধুয়েলো আলেয়া ফিরলো বাড়ির দিকে

বাড়ির দিকে ফিরেরে আলেয়া যায়ও বাসর ঘরে

বাসর ঘরে ঘরে যায়েরে আলেয়া ফেললো সোনার বিছনা

সোনার বিছনা ফেলেরে আলেয়া শোয়ও সোনার খাটে

মিন্দি তলায় যেয়েরে আলেয়া ওই য়ে সোনার মিন্দি…

বিয়ে হওয়ার পর কনে স্বামীর প্রেম-সোহাগ লাভ করলেও বাবা-মা, ভাই-বোন, আতœীয়-স্বজনের স্নেহ ও মমতা ভুলতে পারে না। তাছাড়া, কৃষক পরিবারে বিয়ে হওয়ার পর সংসারের কাজ করতে করতে কনের চেহারার লাবণ্য হারিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নানাজান নাতিকে দেখতে এলে নাতী তার শারীরিক অবস্থা ও হৃদয়ের আবেগ প্রকাশ করে নানার কাছে। এই বিষয়টি উপলব্ধিতেও মেয়েলী গীত রয়েছেঃ

বারো বারো বছর মানুষ করে নানাজান দিছলেন পরের ঘরে

ওকী আমি আমি শুনাই রোদে পুড়ে গেছি

ওকী আমি আমি শুনাই কালো হয়ে গেছি

মারে যায়ে কইও খবর নানাজান শুনাই বড়ই সুখী

মাথার কাপড় ঘুচিয়ে দেখ নানাজান কাইও চিলি বাসা

পিঠির কাপড় উল্টায়ে দেখ নানাজান জোড়া বেতের বাড়ি

ওকী আমি আমি শুনাই কালো হয়ে গেছি

বাপজানরে যায়ে কইও খবর নানাজান শুনাই বড় সুখী

বারো বারো বছর মানুষ করে নানাজান দিছলেন পরের ঘরে…

বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রায় সবটাই আনন্দের, উৎসবের ও কলরবের। গায়ে হলুদ থেকে কনে সম্প্রদান পর্যন্ত প্রতিটি আচারই উৎসবের। কিন্তু কনে বিদায়ের সময় বাবা-মা ও আতœীয়-স্বজনের হৃদয় ব্যাথাতুর হয়ে ওঠে। তখন সবই কনেকে শান্ত¡না দিয়ে থাকে। এ বিষয়েও মহিলাদের মাঝে প্রচলিত গীত রয়েছেঃ 

কাঁচায় নিমফুল পাকায় নিমফুলরে নিমফুল নিমফুল ধরেছে থোপে থোপে নারে

একটা নিমফুল ছিঁড়তে গেলেরে দরদের মা ধন বসে কান্দে নারে

আর কান্দোনা দরদের মা ধনরে তোমরাই তোমরাই হবে পর ওরে

যারাই দিবে নাকের নাকফুলরে তারাই তারাই হবে আপনরে

একটা নিমফুল ছিঁড়তে গেলেরে দরদের চাচি বসে কান্দেরে 

আর কান্দোনা দরদের চাচিরে তোমরাই তোমরাই হবে পর ওরে

যারাই দিবে কানের কানফুলরে তারাই, তারাই হবে আপনরে

কাাঁচই নিমফুল পাকায় নিমফুলরে নিমফুল ধরেছে থোপে থোপে নারে

বিয়ের দিন অথবা দু’এক দিন আগে থেকেই বরপক্ষ পান-সুপারি এবং অন্যান্য সাজ সরঞ্জামাদি পাঠিয়ে থাকে কনেপক্ষের বাড়িতে। এই পান-সুপারিকে কেন্দ্র করেও মেয়েলী গীতের প্রচলন রয়েছেঃ

ডালা ভরা কাচা সুবোরী বাটা ভরা পান রওসা খিলাওরে বাটার পান

না যদি খিলাইতে পার তোমার মাকে কর দান রওসা খিলাওরে বাটার পান

ডালা ভরা কাচা সুবোরী বাটা ভরা পান রওসা খিলাওরে বাটার পান

না যদি খিলাইেতে পার তোমার বোনকে কর দান রওসা খিলাওরে বাটার পান

না যদি খিলাইতে পার তোমার নানীরে কর দান রওসা খিলাওরে বাটার পান

কনেকে যখন বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে শ্বশুর কিংবা ভাসুর কিংবা দেবর আসে, তখন কনে বিভিন্ন অজুহাতে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু পতি যদি নিজেই নিতে আসে তাহলে কনের মন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। তখনই সে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সম্মতি প্রকাশ করে। মেয়েলী গীতে এ বিষয়টিও বাদ পড়েনিঃ 

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে

যমুনার ঘাটে যায়েরে ওহারে কতরি মুখ ও মানজন করে নারে

শীগগির করে আসরে কতরী তোমার শশুর আইছে নিতি নারে

আসকি শশুর বসুকনা শশুর মা যাবনা শশুরির সাথে নারে 

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে

শীগগির করে আসরে কতরী তোমার ভাসুর আইছে নিতি নারে

আসুক ভাসুর বসুক না ভাসুর ভাবী যাব না ভাসুরির সাথে নারে

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে

যমুনার ঘাটে যায়েরে ওহারে কতরি গাও ও মানজন করে নারে

শীগগির করে আসরে কতরি তোমার পতি আইছে নিতি নারে

আসুক পতি বসুকনা পতি মা যাব পতির সাথে নারে 

সাবান গামছা নিয়েলো হারে কতরি চললেন যমুনার ঘাটে নারে…

বিবাহকেন্দ্রিক বিষয়গুলো ছাড়াও স্বামী-¯ী¿র দৈনন্দিন বিরহের অন্যান্য বিষয়াবলীও ফুটে ওঠে মেয়েলী গীতেঃ 

কালা ছেমড়া বাঁজাইরে বাঁশি নারকেল গাছের আগায়রে বাঁশি কে বাঁজায়

আমার সাধু আটকাইরে রইছে বরিশালের জেলায়রে বাঁশি কে বাঁজায়

সিঁথের সিন্দুর বন্ধ করে থুয়ে সাধুরে করব খালাশরে বাঁশি কে বাঁজায়

নাকের নাকফুল বন্ধকরে থুয়ে সাধুরে করব খালাসরে বাঁশি কে বাঁজায়

আমার সাধু আটকায়ে রইছে মাগুরারও জেলায়রে বাঁশি কে বাঁজায়

কানের কানফুল বন্ধকরে থুয়ে সাধুরে করব খালাসরে বাঁশি কে বাঁজায়

হাতের চুড়ি বন্ধকরে থুয়ে সাধুরে করব খালাসরে বাঁশি কে বাঁজয়

কালো ছেমড়া বাঁজায়রে বাঁশি নারকেল গাছের আগায়রে বাঁশি কে বাজায়

মেয়েলী গীতে প্রেমের বিষয়টি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। এসব গীতে পুরুষ-রমনীকে বিভিন্ন ভাবে উস্কিয়ে তোলার বিষয়টি বেশ উপভোগ্য বিষয়। গানের মাঝে প্রেমে পড়া নারী-পুরুষকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন বিষয়ে সতর্কও করা হয়। আবার পুরুষ রমনীকে পাবার জন্য ব্যকুলতা প্রকাশ করে গানে গানেঃ

এক

আম ধরে থলি থলি পাগল আলী তেঁতুল ধরে বেঁকা

বারে বারে বারণ করি পাগল আলী যাসনে দক্ষিণ পাড়া

দক্ষিন পাড়ায় দুটি মেয়েরে পাগল আলী শুধুই রসে ভরা রে

পাগল আলী যাসনে দক্ষিণ পাড়া

কেড়ে নিবি কান্দের গামছা পাগল আলী ছিড়বে গলার মালা

যাসনে দক্ষিণ পাড়া

আম ধরে থলি থলি পাগল আলী তেঁতুল ধরে বেঁকা

বারে বারে বারণ করি পাগল আলী যাসনে উত্তর পাড়া

উত্তর পাড়ার দুটি মেয়ে পাগল আলী শুধুই রসে ভরা রে

পাগল আলী যাসনে উত্তর পাড়া

কেড়ে নেবে হাতের ঘড়ি পাগল আলী ছিড়বে গলার মালা

যাসনে উত্তর পাড়া

দুই

ওদিক সরে বান্ধরে নৌকা আমি জল ভরিবার আইছি

হারে ও ……যাও সরে………….

এত বড় হইছোরে নিলে ও তোমার সিঁতে রইছে খালি

আমার সাথে কলি কথা দেব সিঁতের সিঁদুর

হারে ও …….যাও সরে ………..

তোমার সাথে কলি কথা আমার যাবে বাপের সরমান

হারে ও …….যাও সরে…………

তোমার বাপের সরমানরে রাখবো ও নিলে আমি হাজার টাকা দিয়ে

হারে ও ……..যাও সরে…………

এত বড় হইছোরে নিলে ও তোমার নাক রইছে খালি রে

আমার সঙ্গে কইলে লো কথা দেব নাকের নাক ফুল ওরে

হারে ও ……..যাও সরে…………

তোমার সাথে কইলে লো কথা আমার যারে চাচার সরমান ওরে

হারে ও ……..যাও সরে…………

তোমার চাচার সরমান রাখবো আমি হাজার টাকা দিয়ে

হারে ও ……..যাও সরে………… ঐ

গীত সংগ্রহঃ 

মোছাঃ রেবা খাতুন                        মোছাঃ আছিরন খাতুন

বয়সঃ ৪৫ বছর                        বয়সঃ ৪৭ বছর

স্বামীঃ মোঃ খলিল বিশ্বাস                    স্বামীঃ মোঃ আতিয়ার বিশ্বাস

গ্রামঃ মাজগ্রাম                        গ্রামঃ মাজগ্রাম

উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।                    উপজেলা ও জেলাঃ মাগুরা।

মন্তব্য: