1. স্মরণীয় বরণীয়

হাসান আবদুল কাইয়ুম (১৯৪৫ – )

কবি, গবেষক, ইতিহাস বেত্তা, তাসাউফ বিশারদ, মুফাস্সিরে কুরআন, সব্যসাচী লেখক, রেডিও ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম-এর পূর্ণনাম আবুল হাসান মুহম্মদ আবদুল কাইয়ূম। জন্মগ্রহণ করেন ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন দ্বারিয়াপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম হযরত মওলানা শাহ সুফি আলহাজ্জ তােয়াজউদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম আলহাজ্জা মােসাম্মত জহুরা খাতুন রহমাতুল্লাহি আলাইহা। অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম ঢাকার ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের মাদরাসা শাখা থেকে ফাইনাল মাদ্রাসা শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কিছুদিন কুষ্টিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ এবং পরে ঢাকা জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন। এখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ বিষয় নিয়ে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। পরে এই বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি মাগুরা কলেজ ও রাজধানী ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে অধ্যাপনা করেন। বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনাকাল কাটে। পরে তিনি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে যােগদান করেন এবং পরিচালক পদে উন্নীত হন এবং প্রায় ২৩ বছর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।। তিনি দেশের প্রধান প্রধান জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। তাঁর সম্পাদনায় ৬০ দশকে উদ্কা সাহিত্য সংকলন, ১৯৭২ এ মাগুরা থেকে পাক্ষিক নবকাল নামের একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির প্রকাশক ছিলেন আঃ আজিজ (অকন)। ১৯৮৭-৯১ পর্যন্ত সাপ্তাহিক অগ্রপথিক পরবর্তীকালে ঐতিহ্য প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

তাঁর গ্রন্থরাজির মধ্যে রয়েছে : জেহাদ(১৯৬৬), কাদেরিয়া তরীকা, ফুরফুরার চাঁদ, ‘মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী,  অনুপম আদর্শ মুহম্মদ (সা.), খােকা-খুকুর ছড়া, ইসলাম ও জীবন, প্রসঙ্গ ইসলাম, অন্তরগত অনুভব মিনারে নূর প্রভৃতি। এ দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর লেখা অসংখ্য প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণকাহিনী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ইসলামী বিশ্বকোষে তার অনূদিত ও মৌলিক প্রায় দেড়শত প্রবন্ধ-নিবন্ধ রয়েছে।

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম দেশের একজন প্রখ্যাত পীর। তাঁর অসংখ্য মুরীদ ও মুতাকিদ রয়েছে। তাঁর আব্বা হুজুরকিবলা দ্বারিয়াপুর শরীফের আলা হযরত পীরসাহেব কিবলা মওলানা শাহ্ সুফি আলহাজ্ব তােয়াজ উদ্দীন আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইন্তেকালের পূর্বে তাঁকে গদ্দীনশীন করে যান। তাঁর ছােটভাই দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, ছড়াকার ও সাহিত্যিক, বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত ও একুশে পদক প্রাপ্ত আবু সালেহ, তাঁর একমাত্র পুত্র আলহাজ্ব আরিফ বিল্লাহ মিঠু এসময়ের একজন তরুণ ছড়াকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি একজন ব্যাংকারও। তাঁর ভাগিনা কাজী মাজেদ নওয়াজ একজন খ্যাতিমান তরুণ কবি। 

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম বিবাহ করেন যশোর জেলা শহরে অবস্থিত খড়কী শরীফের বর্তমান গদ্দীনশীন পীর হযরত মওলানা শাহ্ সুফি আবদুল মতিন সাহেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা আলহাজ্জা মােসাম্মাত মাহমুদা বেগম মায়াকে। এই পীর পরিবারের পূর্ব পুরুষ সুলতান আমলে ইয়েমেন থেকে দিল্লীতে আগমন করেন। পরে তাঁর এক উত্তর পুরুষ সৈয়দ সুলতানী মুঘল আমলে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে যশাের এসে খানকা স্থাপন করেন। এই পরিবারের প্রখ্যাত পীর মওলানা শাহ মােহাম্মদ আবদুল করিম বাংলাভাষায় সর্বপ্রথম মৌলিক, বিস্তারিত ও প্রামাণ্য তাসাওউফ গ্রন্থ ‘এরশাদে খালেকিয়া’ বা ‘খােদা প্রাপ্তি তত্ত্ব’ লিখে বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন।

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম ভারত, শ্রীলংকা, সৌদিআরব, পাকিস্তান, আরব-আমিরাত, কাতার, লিবিয়া, তিউনেসিয়া, নাইজার, মালি, থাইল্যান্ডসহ প্রায় ২৭টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। একাধিকবার তিনি ত্রিপলীতে অনুষ্ঠিত ১০৮ দেশের পীরগণের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে সমুদ্রপথে প্রথম হজ্জে যান।

 তিনি ছাত্রজীবনে স্কাউটিং ও ইউওটিসিতে ছিলেন এবং ১৯৬০ এর ডিসেম্বরে লাহােরে অনুষ্ঠিত স্কাউট জাম্বুরিতে যােগদান করেন। তিনি লেখালেখির জন্য জাতীয় লেখক পরিষদের নববর্ষ পুরস্কার (প্রবন্ধ) ১৩৯৭, জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ মওলানা ভাসানী স্বর্ণপদক, ১৯৯১, জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ নজরুল স্বর্ণপদক ১৩৯৬, জাতীয় আধ্যাত্মিক কবিতা পরিষদ কর্তৃক আধ্যাত্মিক সম্মাননা সাহিত্য পদক ২০০০, বাংলাদেশ মুসলিম সাহিত্য সমাজ শান্তি পদক ২০০৯ প্রভৃতি পেয়েছেন।

মন্তব্য: