1. স্মরণীয় বরণীয়

অমলা নন্দী শংকর (১৯১৮ -)

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষয়িত্রী অমলা নন্দী ১৯১৮ সালের ২৭ জুন, মাগুরা জেলার বাটাজোড় গ্রামের প্রসিদ্ধ নন্দী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অক্ষয় কুমার নন্দী। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাটাজোড় গ্রামের পাঠশালায় দ্বারকনাথ সিকদারের তত্ত্বাবধানে। পরবর্তীতে তিনি খুলনা ও কলকাতায় উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন। রিপন কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে আই.এ ও ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বি.এ পাস করেন। বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিতা অক্ষয় কুমার নন্দীর সঙ্গে প্যারিসে অবস্থানকালেই কলােনিয়াল একজিবিশনে বিশ্বনন্দিত নৃত্যশিল্পী উদয় শংকরের সঙ্গে অমলা নন্দীর প্রথম পরিচয় ঘটে। উদয় শংকরের আমন্ত্রণে অমলানন্দী তাঁর ট্রুপে যােগদান করেন। উদয় শংকরের নির্দেশনায় পরিচালিত নৃত্যে অংশগ্রহণ করে ইউরােপের একাধিক মঞ্চে তিনি যশস্বী হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ এক বছর ইউরােপ সফর শেষে অমলানন্দী কলকাতায় ফিরে নৃত্যচর্চায় নিমগ্ন হন। এ সময় উদয় শংকর ও কথাকলির নৃত্য গুরু শংকরণ নাম বুদ্রির কাছে নৃত্যের তালিম নিতে থাকেন। অমলানন্দীকে নৃত্যলােকের রাজপুত্র উদয় শংকর গড়ে তােলেন এবং ১৯৩৮ সালে তাঁকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দান করেন। পরবর্তীতে উত্তর প্রদেশের আলমােড়ায় ইন্ডিয়ান কালচার সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হলে অমলানন্দী শংকর এখানে এসে যােগদান করেন। এখানে তাঁর নৃত্যচর্চার সাথে সাথে চলতে থাকে চিত্রকলার চর্চা। এভাবে ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনার সঙ্গে শিক্ষা সমাপ্ত করে অমলানন্দী শংকর স্বামী উদয় শংকরের সংগে তাঁর নৃত্যদলের প্রধান নৃত্যশিল্পী হিসেবে বেরিয়ে পড়লেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সেই সময়কার অনুষ্ঠানগুলােতে তাঁর অসাধারণ নৃত্য দর্শককুলের হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে

আছে। নৃত্যশিল্পী অমলানন্দী শংকরের আর একটি বিশেষ শিল্পীসত্তার পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর অংকিত চিত্রকলার মাধ্যমে। বিশেষ করে কলকাতা ইডেন গার্ডেনের মধঞ্চে উদয় শংকরের ‘লর্ডবুদ্ধ’ রঙ্গিন ছায়া নূত্যে তাঁর অংকিত সুন্দর সুন্দর স্নাইডগুলাে দর্শকের আকৃষ্ট করেছিল এবং পরবর্তীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ নৃত্যনাট্যেও তাঁর আঁকা স্লাইডগুলােও ব্যাপক প্রশংসিত হয়। নৃত্যশিল্পী অমলানন্দী শংকর একজন প্রখ্যাত লেখিকা ও তার বেশ কয়েকটি গ্রন্থ মুদ্রিত হলেও ‘সাত সাগরের পাড়ে’ পুস্তিকাটি এখন ভ্রমণবৃত্তান্তমূলক গ্রন্থরূপে বহুল পঠিত। অমলানন্দী শংকর তাঁর এই কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন প্রচুর সম্মান ও ভূষিত হয়েছেন একাধিক পুরস্কারে। ১৯৯১ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে ভারতের অন্যতম উচ্চ সম্মান ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন। দিল্লীতে এক রাষ্ট্রীয় সাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আর. ভেঙ্কটরমন তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন। অমলানন্দী শংকরের একমাত্র পুত্র আনন্দ শংকর সংগীতজগতে এক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাঁর সেতারের সুর বিশ্বনন্দিত। তিনি বেশ কয়েকটি ছায়াছবিতে সুর সংযােজন ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রখ্যাত পরিচালক মূনাল সেনের ‘কোরাস’ ছবিতে সুরারােপের

জন্য তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী শংকর ও একজন নামকরা নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী। অমলানন্দী শংকরের একমাত্র মেয়ে মমতা শংকরও নামকরা অভিনেত্রী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্যশিল্পী। মমতা শংকর প্রখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়, মূনাল সেনসহ অনেক খ্যাতিমান পরিচালকের পরিচালিত ছায়াছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে যশের অধিকারী হয়েছেন। 

মন্তব্য: