1. স্মরণীয় বরণীয়

নৃপেন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত ওরফে ভােলাবাবু (১৯০৬- )

এই জনপদের নাট্যজগতের কিংবদন্তির নায়ক নৃপেন্দ্র কুমার সেন গুপ্ত ওরফে ভােলাবাবু ১৯০৬ সালে ঝিনাইদহ জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস মাগুরা জেলার বাটাজোড় নামক গ্রামের বিখ্যাত কবিরাজ পরিবারে। তিনি ১৯৩১ সালে কাশী (ভারত) বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবিরাজ বিদ্যায় আয়ও অধিকতর শিক্ষা ও ডিগ্রি লাভ করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাংসারিক অসচ্ছলতার কারণে তা হয়ে উঠেনি। ফলে অচিরেই তিনি তার ঝিনাইদহ জেলা শহরের বাসভবনে- কবিরাজ ব্যবসা শুরু করেন। এবং অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই অঞ্চলের নামকরা কবিরাজ হিসেবে গণ্য হন। কবিরাজ ব্যবসার পাশাপাশি তার ছােটবেলার ঝোক অনুযায়ী তিনি নাট্যজগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

ঝিনাইদহ শহরের তৎকালীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘করনেশান ড্রামেটিক ক্লাব এর একটি স্থায়ী নাট্যমঞ্চ ছিল। এই প্রতিষ্ঠানে বছরে কমপক্ষে চারটি করে নাটক মঞ্চস্থ হতাে। ভােলাবাবু নাট্যজীবনে পদার্পণের মাত্র অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিশেষ সুনাম অর্জনে সক্ষম হন। ২৩ বছর বয়স থেকে নাট্যজীবন শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৬টি নাটকে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার সংস্কৃতি জীবনের গুরু ছিলেন- তৎকালীন আইনজীবী বাবু রনেশ চন্দ্র বকশী মহাশয়। ভােলাবাবু প্রাথমিক পর্যায়ে উক্ত নাট্যসংস্থা করনেশান ড্রামেটিক ক্লাবের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তারপর থেকে পরবর্তী ৩৮ বছর যাবত তিনি তার কর্মকুশলতা ও স্বীয়কর্ম নৈপুণ্যতার প্রেক্ষিতে এক নাগাড়ে উক্ত ক্লাবের পরিচালক পদে বহাল ছিলেন।

নাটাজীবনের কঠোর সাধনা ও কর্ম কুশলতায় নৈপুণ্যতায় এই জনপদের সীমারেখা ডিঙ্গিয়ে তৎকালীন বৃহত্তর যশাের জেলা এবং সর্বোপরি দেশের নাটাজগতে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তার নাট্যজগতের অনেক ছাত্র রাজধানী ঢাকার চলচ্চিত্র জগতের কেহ অভিনতাে, কেহ পরিচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন। তন্মধ্যে যে আগুনে পুড়ি”-এর নাম করা যায় ঝিনাইদহের সন্তান তদুপরি ভােলাবাবুর শিষ্য ও তাঁরই আশীর্বাদ পুষ্ট জনাব আমির হােসেন মালিতা ঢাকার চলচ্চিত্র জগতে একদিন রীতিমতভাবে চমক জাগাতে সক্ষম হয়েছিল। জনাব আমীর হােসেন মালিতা আজও নিশ্চয়ই অকপটে স্বীকার করেন তাঁর নাট্যজীবনের দীক্ষাগুরু ভােলাবাবুর ঐকান্তিক অনুপ্রেরণাই তাঁকে সে দিন ঐ সােনার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। ভোলাবাবুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ঝিনাইদহের নাট্যজগতে আজও যারা বিচরণ করে থাকেন- তাদের মধ্যে ডা: সুধীর কুমার সমাদ্দার, এ্যাডভােকেট মােকররম হােসেন টুলু, আনছার মিয়া প্রমুখদের নাম উল্লেখ করতে হয়। যাদের কাছে ভোলাবাবুর নাম প্রাত্যহিক স্মরণের বিষয়বস্তু হয়ে আছে।

ভােলাবাবু নিজে একজন প্রখ্যাত নাট্য অভিনেতাই ছিলেন না একজন সার্থক নাট্যকার হিসেবেও তার সুনাম ছিল যথেষ্ট। তার জীবদ্দশায় তিনি সাতখানি পূর্ণাঙ্গ নাটক এবং দুইটি একাংকিকা লিখে গেছেন। তন্মধ্যে ‘রসুলপুরের খান পরিবার’, ‘মা’, ‘জমিদার খুড়াে’, ও ‘হােপলেস’ সেই আমলে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সার্থকভাবে মঞ্চস্থ হয়েছে। এছাড়াও তার লেখা নাটক ‘নিষ্কৃতি, ‘জমিদার বাড়ি’, ‘চোরকে’, ইত্যাদিও সেই আমলে সারা এলাকায় সকল স্তরের মানুষের কাছেই সমাদৃত হয়েছিল। সংস্কৃতিকে তিনি জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আমৃত্যু তিনি সংস্কৃতি তথা নাট্যজগত নিয়েই মেতে ছিলেন।

মন্তব্য: