বাংলাভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রখ্যাত লেখক ও সাহিত্যিক ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান ডা. মােহাম্মদ লুৎ্ফর রহমান ১৮৯৭ সালে মাগুরা জেলার সদর উপজেলাধীন পারনান্দুয়ালী গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহন করেন। ড. এনামুল হকের মতে, ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের জন্মতারিখ ১৮৮৭ সালে। অন্যদিকে ড. আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ আবদুল হাই, ড. আশরাফ সিদ্দিকী এবং মােল্যা ইবাদত হােসেন প্রমুখের মতে তাঁর জন্ম ১৮৮৯ সালে। আবার আলী আহমদের মতে, তাঁর জন্ম ১৮৯১ সালে এবং আবদুল কাদির ১২৯৭ বঙ্গাব্দকে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের জন্ম বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ড. খােন্দকার সিরাজুল হক সম্প্রতি প্রাপ্ত ডা, মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের পুত্র নিয়ামত উল্লাহর হস্তলিখিত সংক্ষিপ্ত জীবনীতে উল্লেখিত ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের জন্মসাল ১৮৯৭ সাল বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই মত বিশ্বাসযােগ্য বলে তিনি অভিমাত ব্যক্ত করেছেন। ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের জন্ম পারনান্দুয়ালী গ্রামে হলেও তাঁর পৈত্রিক আবাসস্থল একই জেলার হাজীপুর গ্রামে। তাঁর পিতা ময়েন উদ্দিন জোয়ারদার ও মাতা বেগম শামসুন নাহার। বাল্যকালে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান তাঁর নানাবাড়িতেই লালিত-পালিত হন। কুমার নদীর তীরে অবস্থিত পারনান্দুয়ালী গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বালক ডাঃ মােহাম্মদ লুৎফর রহমানকে মুগ্ধ করত। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সান্নিধ্যে এসে তিনি প্রথম জীবনে কবিতা রচনায় মনােযােগী হয়েছিলেন। সম্ভবত পিতার এই জ্ঞান-পিপাসা থেকেই ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হয়েছিলেন। ডাঃ মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল নিজ গ্রামের নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি মাগুরা শহরের ‘মাগুরা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি) ভর্তি হন এবং ১৯১৫ সালে তিনি উক্ত হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় যান। তিনি হুগলী মহসিন কলেজে এফ. এ. ক্লাসে ভর্তি হন। তিনি কলকাতার টেলার হােস্টেলে থেকে হুগলী কলেজে পড়াশুনা করেন। এই টেলার হােস্টেলে অবস্থানকালে তিনি সাহিত্য চর্চায় মনোযোগী হন। এই হােস্টেলের কাছেই ইন্টালী বাজারে ছিল খ্রীস্টান মিশনারিজ গির্জা, পাঠাগার এবং প্রশাসনিক অফিস। ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান পাদ্রী সাহেবদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যেমন গ্রন্থপাঠের সুযােগ করলেন, তেমনি দেখলেন সমাজ নির্যাতিত নারী- এমনকি পুরুষদের দ্বারা প্রবঞ্চিত বেশ্যাদের পর্যন্ত খ্রিস্টান সম্প্রদায় কিভাবে গ্রহণ করে সম্মানীয় আসনে প্রতিষ্ঠিত করছে। বস্তুত ডা. মােহাম্মদ লুৎ্ফর রহমান এই সময় সাহিত্য সাধনায় গভীর মনােযােগী হয়ে পড়েন। ফলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং এফ. এ. পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ১৯২১ সালে তিনি কৃষ্ণনগর হােমিওপ্যাথিক কলেজ থেকে এইচ. এম. বি. ডিগ্রি লাভ করেন। নিরলস সাহিত্যচর্চার জন্যই শুধু নয়, তিনি এফ. এ. পাঠকালেই হাজীপুর গ্রামের আয়শা খাতুন নাম্মী এক কিশােরীর প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন এবং পিতার সম্মতি ছাড়াই তাকে বিয়ে করেন। ফলে লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়। এ বিয়েতে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের পিতা আরাে অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁর পিতা লিখিতভাবে ত্যাজ্যপুত্র করে দেন বলে শােনা যায়। পরবর্তীতে প্রায় ত্যাজ্যপুত্রের মতাে কিছুদিন শ্বশুরালয়ে বসবাস করেন। পরে তিনি সিরাজগঞ্জের (বি. এল. ইনস্টিটিউশন) ভিক্টোরিয়া হাইস্কুলে অ্যাংলাে পারসিয়ান শিক্ষকের পদে চাকরি গ্রহণ করেন। এই স্কুলে তিনি ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন প্রখ্যাত পণ্ডিত ড. গােলাম মকসুদ হিলালী (১৯০০-১৯৬১) সাহেবকে। উক্ত হাইস্কুলে তিনি অতি সামান্য বেতনে কয়েক বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল ত্যাগ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম জোরারগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এই স্কুলে থাকাকালীন সময়ে তিনি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মােহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরীকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলেন। এখানে তিনি সম্ভবত ৭/৮ বছরকাল শিক্ষকতা করেন। সাহিত্য সাধনা ও সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি শিক্ষকতা পেশাকে ত্যাগ করে স্বপ্লশহর কলকাতায় চলে আসেন এবং ৫১ নং মির্জাপুর স্ট্রিটে হােমিওপ্যাথি ডাক্তারি চিকিৎসা শুরু করেন। ১৫ বছর তিনি এই চিকিৎসা পেশার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। নামের পদবিতে ডাক্তার লেখার তাৎপর্য নারীদের বিশেষ করে পতিতাদের মঙ্গলার্থে তিনি ঐ বাড়িতেই ‘নারীতীর্থ, ও ‘নারী শিক্ষালয় কেন্দ্র খােলেন। ১৯২০ সালের নভেম্বর, মাসের (কার্তিক ১৩২৭) তৃতীয় সংখ্যা থেকে তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (পরে ডক্টর) ও মােহাম্মদ মােজাম্মেল হক সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ ভার গ্রহণ করেন। পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যাতেই (মাঘ ১৩২৭) তাঁর প্রবন্ধ “উর্দু ও বাঙ্গালা সাহিত্য প্রকাশিত হয়। এর কিছুদিন পর তিনি হােমিও বিদ্যায় এইচ.এম.বি. ডিগ্রি লাভ করেন। এ সময় তিনি পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসাবিদ্যায় মনােনিবেশ করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় যথেষ্ট প্রসার হলেও সমাজসেবার আদর্শ তাঁকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।
কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় পথভ্রষ্ট ও সমাজ পরিত্যক্তা নারীদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠাদানের উদ্দেশ্যে তাঁর আবাসস্থলেই তিনি ‘নারীতীর্থ’ নামেএকটি সেবা প্রতিষ্ঠান খােলেন। এই প্রতিষ্ঠানের সভানেত্রী ছিলেন নারী মুক্তির অগ্রদূত বেগম রােকেয়া সাখাওয়াৎ (১৮২০-১৯৩২) এবং সম্পাদক ছিলেন স্বয়ং ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান। মােহাম্মদ লুৎফর পতিতাদের স্বনির্ভর করে তােলার জন্য ৫১ নং মির্জাপুর স্ট্রিটে নারী শিল্প বিদ্যালয় খুলেছিলেন। একজন দক্ষ দর্জি রেখে তিনি তাদের পােশাক তৈরি শেখাতেন। পােশাক তৈরি ছাড়াও চরকায় সুতাকাটা ও বই বাঁধার কাজশেখার ব্যবস্থাও করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি।
বস্তুত ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান সতত সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে গিয়ে অত্যাধিক অভাব অনটনে এবং শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে তাঁর শরীর ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় তিনি যক্ষ্মারােগে আক্রান্ত হন। এ সম্পর্কে ড. খােন্দকার সিরাজুল হক জানিয়েছেন : এটি সম্ভবত ১৯২৫-২৬ সালের ঘটনা। এ সময় ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের শ্বশুর মােহাম্মদ বদর উদ্দীন জোয়ারদার ফরিদপুর জেলার মাচপাড়া স্টেশনে বুকিং ক্লাকের চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি জামাতার অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁর পুত্র মােহাম্মদ আলিমউদ্দীনকে কলকাতা পাঠানাের ব্যবস্থা করলেন। হাসপাতালে রােগীর দেখাশােনার জন্য আলিমউদ্দীন তাঁর ভগ্নি আয়শা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় গেলেন। বন্ধু-বান্ধবের অক্লান্ত চেষ্টায় ও স্ত্র সার্বক্ষণিক পরিচর্যায় কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানকে নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এখানে জনৈকা সন্ন্যাসীনি প্রদত্ত গাছ-গাছড়ার ওষুধে তিনি রোগমুক্ত হন।
হাজীপুর গ্রামের জনাব গােলাম কাদের মােল্লা (৯৩) বলেন, ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান যখন কলকাতা শহর থেকে নিজগ্রাম হাজীপুরে ফিরে আসেন এর কিছুদিন পর কলকাতা থেকে যােগিনী নামে এক হিন্দু মহিলা ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানকে দেখতে আসেন। এই যােগিনী মহিলাকে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান ‘মা’ বলে ডাকতেন। তিনি ‘নারী তীর্থের’ সক্রিয় একজন কর্মী ছিলেন। তাঁরই নামানুসারে ওষুধের নাম ‘যােগিনী পাচন’ রাখেন। ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে তিনি আবার তাঁর গ্রামের পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর গ্রামে হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন। পরবর্তীতে মির্জাপুর গ্রাম ত্যাগ করে মাগুরা শহরে গিয়ে হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করেন।
ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান মাগুরা শহরে দীর্ঘদিন বেশ সুনামের সাথে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর ১৯৩১ সালে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে এসে সক্রিয়ভাবে সমাজসেবায় জড়িয়ে পড়েন। শেষ জীবনে কিছুটা গ্রাম্য রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯৩৬ সালের দিকে তিনি পুনরায় যক্ষ্মারােগে আক্রান্ত হন। তবুও তিনি লেখা বন্ধ করেননি। তখন তিনি ‘স্বর্গতােরণ নামে একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। পরবর্তীতে এ পাণ্ডুলিপিটি ডা. মােহাম্মদ লুৎ্ফর রহমানের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান একাডেমি খুলনার মুখপত্র ‘চেতনা’ নামক পত্রিকায় (জানুয়ারি-২০০১) প্রকাশিত হয়। ডা. মােহাম্মদ লুৎ্ফর রহমান ১৯৩৬ সালের ৩১ মার্চ (১৮ চৈত্র, ১৩৪২ বঙ্গাব্দ) নিজ গ্রামের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
ডা. মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের লেখা তৎকালীন বাংলাভাষার বিখ্যাত সাময়িকীগুলোতে প্রকাশ করতেন। বিশেষ করে ‘সওগাত’, ‘প্রবাসী”, ‘হিতবাদী’, ‘রঙ্গরত্ন’, ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্যপত্রিকা’, ‘মোসলেম ভারত’, ‘সাধনা’, সােলতান’, ‘সহচর’, ‘সাম্যবাদী”, ‘সাহিত্যিক’, ‘মােয়াজ্জিন’, ‘মাসিক মােহাম্মদী, মাহেনও’ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় তাঁর অধিকাংশ লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযােগ্য উপন্যাস ‘সরলা (১৯১৮)’, ‘পথহারা (১৯১৯)’, ‘রায়হান (১৯১৯)’, ‘প্রীতি উপহার (১৯২৭)’, ‘মঙ্গল ভবিষ্যৎ (১৯৩১)’, ‘বাসর উপহার (১৯৩৬)’ প্রভৃতি অন্যতম। এছাড়াও ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগাের (১৮০২-৮৫) বিখ্যাত উপন্যাস লা মিজারেবল (১৮৬২)’ অবলম্বনে ‘দুঃখের রাত্রি’ নামে তেরাে অধ্যায়ের একটি ধারাবাহিক কাহিনী লিখেছিলেন। এই উপন্যাসটি ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ থেকে ১৩৪০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় পর্যন্ত ‘মােয়াজ্জিন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর প্রবন্ধ : উন্নত জীবন (১৯১৯)’, মহতজীবন (১৯২৬)’, ‘মানবজীবন (১৯২৭)’ ‘সত্যজীবন (১৯৪০)’, উচ্চজীবন (১৯৬২)’ ‘মহাজীবন (১৯৭৫)’, ‘যুবক জীবন (১৯৮৭)’ প্রভৃতি গ্রন্থ তাঁর জীবনদ্দশায় ও মৃত্যুর পরও প্রকাশিত হয়েছে। শিশুতােষ সাহিত্যের মধ্যে ‘ছেলেদের মহত্ত্ব কথা (১৯২৮)’, ‘ছেলেদের কারবালা (১৯৩১)’, ‘রানী হেলেন (১৯৩৪) উল্লেখযাোেগ্য। যদিও তাঁর গল্পগ্রন্থগুলাে প্রকাশিত হয়নি, তবুও দেখা যায় তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অনেক ছােটগল্প লিখেছেন। তাঁর ‘পলায়ন (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্যপত্রিকা, বৈশাখ, ১৩২৮), ‘অমাবস্যা (জয়ন্তী, কার্তিক অগ্রহায়ণ, ১৩৩৭), প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযােগ্য ছােট গল্প।
প্রথম জীবনে তিনি কবিতা চর্চা করতেন। ড. খােন্দকার সিরাজুল হক এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ডা. মােহাম্মদ লুতফর রহমান স্বভাব প্রতিভার অধিকারী ছিলেন বলে অল্প বয়সেই সাহিত্য চর্চায় নিজেকে নিয়ােজিত করেছিলেন। তাঁর প্রকাশ (১৯১৬) কাব্যগ্রন্থের ‘অপেক্ষায়’ কবিতাটি হুগলী ১৯০৮ সাল, চিহ্নিত হয়ে মুদ্রিত হয়েছে। অর্থাৎ কবিতাটি লেখকের ১১ বছর বয়সের রচনা। ১৯১৬ সালে তিনিসিরাজগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা কালেই ‘প্রকাশ’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। তাঁর কাব্যগ্রন্থটির ভূমিকায় প্রখ্যাত কবি কথাশিল্পী ইসমাইল হােসেন সিরাজী লিখেছিলেন, বন উপবনে নানা জাতিয় ফুলই ফুটিয়া থাকে। কোনোটা সুগন্ধে ভরা, কোনােটা শােভায় উজ্জ্বল। গােলাপ ও বেলীর পাশে জবা ও গাঁদাও শােভা পায়। আমাদের উদীয়মান কবি মৌলবী লুৎফর রহমান সাহেবের কবিতার উদ্যানের দুই জাতিয় ফুলই ফুটিয়াছে। আমরা আজ আনন্দ ও প্রীতিভরে এই উদীয়মান কবিকে সাহিত্যকুঞ্জে অভিনন্দন করিতেছি। মােট ৪০টি কবিতার সংগ্রহ ‘প্রকাশ’ ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয়। এই কবিতাগুলাে ১৯০৮ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে লেখা। তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু সাধারণত প্রেম, মানবপ্রীতি ও নীতিবােধ। দেখা যায়, ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমান কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ ছাড়াও কথিকা, শিশুতােষ সাহিত্য রচনার পাশাপাশি বিদেশী সাহিত্যও অনুবাদ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল তাঁর অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটি ছিল অনুবাদ। তিনি ্প্যানিশ লেখক মিগুয়েল জে সাভেন্দ্রা সার ভেন্টিস (১৫৪৭-১৬১৬) রচিত ‘ডন কুইক জোট জেলা মাঞ্চা’ (১৬০৫) গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে ডন কুইক জোট ও সাঙ্কো পাঞ্জার অভিযানের কাহিনী অনুবাদ করেন। ডা. মােহাম্মদ লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর পিতার নির্মিত পারিবারিক কবরস্থানে পিতার পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।