1. সদর

মাগুরা সদর উপজেলার মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস

মাগুরা সদর উপজেলা এমন একটি অঞ্চল যেখানে  হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ অত্যন্ত সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। প্রতিটি ধর্মের মানুষ নিরবচ্ছিন্নভাবে, অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতির কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এখানে ১৬টির অধিক সম্প্রদায়ের মানুষ মানুষ বাস করে।

বুনো সম্প্রদায়ঃ বুনো (সর্দার) স¤প্রদায়ের মানুষ কচ্ছপ, কুঁচে, খরগোশ, কাঁকড়া প্রভৃতি শিকার করে জীবীকা অর্জন করে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এ সম্প্রদায়ের মানুষ অন্যান্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। মাছ ধরার কাজও এ সম্প্রদায়ের লোকেরা করে থাকে। জমিজমাহীন এ সম্প্রদায়ের লোকেরা অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসাবেও কাজ করে। নামযঞ্জ, মনসা পূজা, দুর্গা পূজা, কালী পূজা এ সম্প্রদায়ের লোকদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বুনো সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে আলিধানি, চন্দনপ্রতাপ, হাজরাপুর ও হৃদয়পুর গ্রামে।  এছাড়াও বুনো সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে চাউলিয়া, বিষ্ণুপুর, বনগ্রাম, বারোইখালী গ্রামে। বিষ্ণুপুরে ৬০/৬৫ ঘর, বনগ্রামে ১০/১২ ঘর ও বারোইখালী গ্রামে ১০/১২ ঘর বুনো সম্প্রদায়ের পরিবার বাস করে। বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের চাঁদপুর ও পুটিয়া গ্রামে বুনো (সর্দার) সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। 

রাজবংশী সম্প্রদায়ঃ রাজবংশী সম্প্রদায় বাস করে হাজীপুর গ্রামে। রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ যাদের জীবীকা মাছ ধরে বিক্রি করা, তাদের অধিকাংশ বাস করে পশ্চিম বাড়িয়ালা, আলিধানী, মালন্দ ও চন্দনপ্রতাপ গ্রামে। নবগঙ্গার ধারেই বগিয়া ইউনিয়নটির অবস্থানের কারণে আলোকদিয়া, পাতুরিয়া ও রামচন্দ্রপুর গ্রামে মালো (জেলে) সম্প্রদায়     বসতি গড়ে উঠেছে। কিন্তু নদীতে চর পড়া এবং নদীটির মৃতাবস্থার কারণে এ স¤প্রদায় ভীষণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে।     কেউ কেউ পেশা ছেড়েও দিয়েছে। মালো সম্প্রদায় বাস করে রাঘবদাইড় ইউনিয়নের সান্ধা লক্ষীপুর গ্রামে। মঘী ইউনিয়নের কেচুয়াডুবি ও নিধিপুর গ্রামে রাজবংশী সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। ইউনিয়নের নদী, খাল ও বিলে মাছ ধরে বিক্রি করে এরা জীবিকা অর্জন করে। তবে খাল বিল ও নদীতে জলের পর্যাপ্ততা না থাকায় আর আগের মত মাছের প্রাচুর্য নেই। সেই কারণে এরা অন্য পেশায় ঝুকে পড়ছে।) রাজবংশী (মালো) সম্প্রদায়ের অধিকাংশ বাস করে  জগদল, বেড় আকছি, লক্ষিপুর ও জাগলা গ্রামে। মাছ ধরে বিক্রি করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। চাউলিয়া ইউনিয়নের সিরিজদিয়া গ্রামে মালো সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। শত্রুজিৎপুর গ্রামে মালো সম্পদ্রদায়ের বাস রয়েছে। প্রায় ২০ পরিবার মালো এই গ্রামে বাস করে।  এরা পুকুর, নদী, খাল ও বিল থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে। এদের অনেকে আবার মাছের ব্যবসা করে জীবিকা অর্জন করে। পয়ারী গ্রামে প্রায় ২০ টি পরিবার নিকারী পরিবার রয়েছে। এরা মাছ কিনে মাছ বিক্রি করে। এছাড়া মাগুরা শহরতলী পারনান্দুয়ালী গ্রামে কিছু নিকারী রয়েছে। বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের বাটাজোড়, পুটিয়া ও ভাঙ্গুড়া গ্রামে মালো (রাজবংশী) সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। মালো (রাজবংশী বা জেলে)সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে কুল্লিয়া, কুচিয়ামোড়া ও আমুড়িয়া গ্রামে। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ শিমুলিয়া, আসবা, উত্তর ধর্মসীমা ও নুতনগ্রামে শতভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের বাস। মালো (রাজবংশী বা জেলে) সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে গোপালগ্রাম ইউনিয়নের শিয়ালজুড়ি ও তাড়োরা গ্রামে।

পাল সম্প্রদায়ঃ আঠারখাদা ইউনিয়নের আলিধানী গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বসতি থাকলেও তাদের পেশার পরিবর্তন হয়েছে। এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ চাষাবাদ, ব্যবসা ও চাকুরী নির্ভর। বরই গ্রামের পালদের তৈরী হাড়ি, কলসী, চাড়ি, মালসা, মাছ ধোয়া মালসা, রুটি তৈরীর তাওয়া, পিঠা বনানো ছাঁচ, পায়খানা তৈরীর চাড়ি প্রচন্ড সুনাম রয়েছে জেলাব্যাপি। এখানকার তৈরী চাড়ি অন্যান্য জেলায়ও বেশ কদর রয়েছে। মাটির তৈরী জিনিষপত্র তৈরীর পাশাপাশি এই এলাকার মৃতশিল্পীরা এগুলোতে রঙবেরঙের নকশাও করে থাকে। বিনোদ পাল, সুধীর পাল, সামনু নাথ পাল এ গ্রামের উল্লেখযোগ্য মৃতশিল্পী। রাঘবদাইড় ইউনিয়নের বেরোইল গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। এছাড়া রাঘবদাইড় গ্রামেও পাল সমপ্রদায়ের বসতি রয়েছে। মঘী ইউনিয়নের কেচুয়াডুবি গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। চাউলিয়া ইউনিয়নের সিরিজদিয়া গ্রামে মৃতশিল্পীদের বাস রয়েছে। মাটির তৈরী জিনিষপত্রে রকমারী নকশায় ভরিয়ে তোলায় এদের বেশ সুনাম রয়েছে। বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে। 

তাতী সম্প্রদায়ঃ বগিয়া ইউনিয়নের গৃহগ্রাম ও সিরিজদিয়া গ্রামে তাঁতী সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। ক্রম নিম্নমুখি এ ব্যবসায় মন্দার কারণে এ সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করছে। রাঘবদাইড় ইউনিয়নের বেরোইল গ্রামে তাঁতী সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। এখানে কর্ম্মকার ও পাল সম্প্রদায়ের বাসও রয়েছে। এছাড়া রাঘবদাইড় গ্রামেও পাল সমপ্রদায়ের বসতি রয়েছে। বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া ও দীঘলকান্দি গ্রামে তাঁতী স¤প্রদায় এর বাস রয়েছে। 

কর্মকারঃ কর্মকার স¤প্রদায় বাস করে বগিয়া ইউনিয়নের পাতুরিয়া গ্রামে। এ সব কর্মকার লোহার তৈরী দা, বটি, শাবল, কুড়োল, কোদাল, কাঁচি, নিড়ানী, পাশী প্রভৃতি তৈরী করে এলাকার বাজারে বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করে। হাজরাপুর ইউনিয়নের ইছাখাদা গ্রামে কামার সম্প্রদায় বাস করে। রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটকেলবাড়িয়া গ্রামে বাস করে কিছু কর্ম্মকার পরিবার। এছাড়া এই ইউনিয়নের ধনপাড়া গ্রামেওকর্মকার সমপ্রদায়ের বাস রয়েছে। শত্রæজিৎপুর ইউনিয়নের পয়ারী ও বারোইখালী গ্রামে কর্মকার সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। কামারশালায় লোহার বটি, দা, কাঁচি, কুড়োল, কোদাল, খুন্তা, শাবল, খুন্তি, লাঙলের ফলা, পাসি, নিড়ানি প্রভৃতি সরঞ্জামাদি তৈরী করে। দুই গ্রামে ৮/১০ ঘর     কর্মকার সম্প্রদায়ের লোকের বসতি রয়েছে। বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের বাটাজোড় গ্রামে কর্মকার সম্প্রদায়ের মানুষের বাস রয়েছে। 

ঋষি সম্প্রদায়ঃ হাজরাপুর গ্রামে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের মানুষ বাঁশ ও বেতের তৈরী হস্তশিল্পের জন্য জেলাব্যাপি খ্যাতি রয়েছে। মঘী ইউনিয়নের আঙ্গারদাহ গ্রামে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। এরা বেতের ধামা, বাঁশের কুলা, খাচা, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরী করে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে। ঋষি সমপ্রদায় বাস করে মাধবপুর ও জগদল গ্রামে। বয়োবৃদ্ধরা ছাড়া অন্য সবাই অন্যান্য পেশায় ঢুকে পড়ছে। বেতের ধামা ও কাঁঠা, বাঁশের তৈরী চালন, কুলো, ডালা, মোড়া, পলো ইত্যাদি জিনিষের জন্য এদের সুনাম রয়েছে। কছুন্দি ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে ঝুড়ি, ঝাটা, ঘুনি, ধামা, কাঁঠা, কুলা, ধোয়াইড়, বানে তৈরীর কারিগর বাস করে। এসমস্ত পণ্য জেলার বিভিন্ন বাজারে ও মেলায় বিক্রি করা হয়। ঝুড়ি তৈরিতে বিশেষ অবস্থান থাকার কারণে বরই গ্রামের একটি পাড়ার নাম হয়েছে ঝুড়িপাড়া। বাঁশের তৈরী ঝুড়ি এখান থেকে মাগুরাসহ অন্যান্য জেলায়ও পাঠানো হয়। এছাড়া বরই আর গৃহগ্রামে বাঁশ দিয়ে তৈরী করা মাছ ধরা ঘুনি, ধোয়াইড়, বানে, টুবোসহ অন্যান্য উপাদান।  ঋষি সমপ্রদায় বাস করে চাউলিয়া গ্রামে। বয়োবৃদ্ধরা ছাড়া অন্য সবাই অন্যান্য পেশায় ঢুকে পড়ছে। বেতের ধামা ও কাঁঠা, বাঁশের তৈরী চালন, কুলো, ডালা, মোড়া, পলো ইত্যাদি জিনিষের জন্য এদের সুনাম রয়েছে।  শত্রæজিৎপুর ইউনিয়নের বনগ্রাম, পয়ারী ও বারোইখালী গ্রামে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। এরা বেত ও বাঁশের ডালা, কুলো, চালন, দোলনা তৈরী করে বিভিন্ন গ্রামে, মেলায় ও হাটে বাজারে বিক্রি করে। বনগ্রামে ৮/১০ পরিবার, পয়ারী গ্রামে ৪/৫ পরিবার এবং বারোইখালী গ্রামে ১০/১২ পরিবার ঋষি বাস করে। বেরোইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। গোপালগ্রাম ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামে ঋষি স¤প্রদায় বাস করে।

ঘোষ সম্প্রদায়ঃ রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটকেলবাড়িয়া গ্রামে ঘোষ সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের মানুষ দুধের গাভী পালন করে এবং সেই দুধ মাগুরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেরী করে দুধ বিক্রি করে থাকে। এই সম্প্রদায়ের মানুষ দুগ্ধজাত পণ্যসামগ্রি ও মিষ্টিও তৈরী করে। এসব মিষ্টি জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়।

হাজাম সম্প্রদায়ঃ   হাজাম সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে মঘী ইউনিয়নের মাজগ্রামে। সুন্নতে খাতনার মাধ্যমে এরা জীবিকা নির্বহ করে। এলাকার উল্লেখযোগ্য হাজামরা হলেন রাশেদ মোল্যা, মান্নান বিশ্বাস  প্রমুখ। হাজাম সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে রূপাটি ও জগদল গ্রামে। সুন্নতে খাতনার মাধ্যমে এরা জীবিকা নির্বহ করে। এলাকার উল্লেখযোগ্য হাজামরা হলেন মরহুম আবুল কাশেম, মরহুম মোকদ্দেস আলী, নওশের আলী আহমদ আলী বিশ্বাস প্রমুখ। ২৫ ঘর হাজামের বাস রয়েছে এই দুই গ্রামে।

বিহারী সম্প্রদায়ঃ কুশাবাড়িয়া গ্রামে বিহারা সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। নিকট অতীতে এই সম্প্রদায়ের লোকজন পালকীতে নববিবাহিত বর-কনেকে  বহন করে জীবিকা নর্বাহ করতো। স্বরচিত গান গেয়ে এসব বিহারা গ্রাম থেকে গ্রামে পালকীতে বহন করে নিয়ে যেত বর-বধু। পালকীতে মিশে থাকতো তাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ আর তার     সভ্যতা যান্ত্রিক হওয়ার কারণে বিলুপ্ত হয়েছে পালকীতে বিবাহ প্রথা। এখন আর একটিও পালকী পাওয়া যায়না এই সম্প্রদায়ের  বসতি এলাকায়। জীবিকার প্রয়োজনে তারা বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। এখন কেউ চুল কাটে, কেউ মাছ বিক্রি করে, কেউ টিনের ঘরের মিস্ত্রি, কেউ কাঠমিস্ত্রি, কেউ আবার কৃষি কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছে। এই গ্রামের সুনামধন্য বিহারাদের মধ্যে অমূল্য বিহারা, গৌর বিহারা, নিতাই বিহারা, প্রফুল্ল বিহারা, মন্টু বিহারা, স্বপন বিহারা প্রমুখ। এলাকায় এরা কাহার সম্প্রদায় হিসাবে পরিচিত। এই বিহারাদের পূর্বপুরুষ বাবুরাম বিহারা, শতীষ বিহারা, নীলমনি বিহারা ও লক্ষিকান্ত বিহারা জমিদার ছিলেন। [তথ্যÑ অজিৎ বিহারা (৭০), পিতা- গোপাল বিহারা, কুশাবাড়িয়া, মাগুরা।]

বাগদী সম্প্রদায়ঃ বাগদী সম্প্রদায় মাগুরা অঞ্চলের একটি আদিবাসি সম্প্রদায়।বাগদী সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে জগদল গ্রামে। সৈয়দ রূপাটি গ্রামেও কিছু বাগদি বাস করে। বাগদীরা নেল, কুঁচে, কাঁকড়া,বাঁদর, কাছিম প্রভৃতি শিকার করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বাগদী মহিলারা বনজ ফলাদিও সংগ্রহ করে থাকে। কেউ কেউ মাছ ধরে বিক্রি করে। এদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়ার কারণে এরা অন্য পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করছে।

বাদ্যকার সম্প্রদায়ঃ বিবাহ, পূজা, খেলাধুলা, সরকারী র‌্যালী ও নির্বাচনীপ্রচার সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্য বাজিয়ে এই সম্প্রদায়ের মানুষ জীবিকা অর্জন করে। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ড্রাম/ডাঙ্কা, ঝুমকো, কাশি, বাঁশি, কার্তালী, জুড়ি, খঞ্জরী প্রভৃতি। শত্রæজিৎপুর, বিষ্ণুপুর গ্রামে বাদ্যকার (বাজনদার) সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে।  এলাকার উল্লেখযোগ্য বাদ্যকার হলো জলিল বাদ্যকার, রাজ্জাক বাদ্যকার, জাকির আলী বাদ্যকার, ছালাম বাদ্যকার প্রমুখ। উপরোক্ত দুই গ্রামে প্রায় ১৫০ টি পরিবার বাদ্যকার রয়েছে। মাগুরা শহরের জজকোর্ট পাড়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীর তীরে কিছু বাদ্যকার পরিবার রয়েছে। দলনেতা আনন্দ কুমার দাসের নেতৃত্বে বাদ্যকার দলে রয়েছে ছয়জন সদস্য। 

নলুয়া বাঁশের তৈরী চাটাই, ঢোল, আউড়ি প্রভৃতি তৈরী করে জীবিকা অর্জন করাই নলুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাজ। মাগুরা সদরের বিভিন্ন অঞ্চলে নলুয়া সম্প্রদায়ের বসতি থাকলেও শত্রæজিৎপুর গ্রামে এই সম্প্রদায়ের বসতি বেশি। সিদ্দিক বিশ্বাস, ইয়াসিন মন্ডল, বিলয় মন্ডল, সালাম বিশ্বাস ও জালাল মন্ডল এই অঞ্চলের সুনামধন্য নলুয়া। গ্রামে প্রায় ২০০ পরিবার নলুয়া রয়েছে। মাগুরা পৌর এলাকার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে কিছু নলুয়া পরিবার রয়েছে।  

কলু সম্প্রদায়ঃ এক সময় প্রচুর পরিমানে দেখা যেত গরু ঘুরিয়ে ঘানি ভাঙিয়ে তৈল বের করার দৃশ্য। কিন্তু গরু চালিত ঘানি বিলুপ্ত হতে চলেছে। শত্রুজিৎপুর প্রায় ১০০ পরিবার কলু থাকলেও গরু চালিত ঘানি দেখা যায় একটি ঐ গ্রামের ইনছার বিশ্বাস (৬০) এর বাড়িতে। এছাড়া অন্যান্য বাড়িতে ম্যশিনচালিত ঘানি দেখা যায়। এসব ঘানিতে সরিষা, মষনে, রায়, নারকেল, গুজি ও তিল ভাঙিয়ে তৈল বের করা হয়। এই তৈল কলু সম্প্রদায়ের লোকেরা মাথায় করে বিভিন্ন বাজারে, হাটে, গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ফেরী করে বিক্রি করে। এলাকার উল্লেখযোগ্য কলুরা হলেন মতলেফ কলু, আজাদ কলু, মান্নাফ কলু, ওলিয়ার কলু, হামিদ কলু প্রমুখ। গরু চালিত ঘানিতে জাট, ঢেহা, জোমাল, ভারা ও আলেবাড়ি নামক উপাদান ব্যবহৃত হয়। খাটুনি অনেক, মজুরি কম, সময়ও লাগে প্রচুর। তাইতো গরুর ঘানির বদলে কলুরা ম্যাশিন চালিত ঘানির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।  

ছুতোরÑ পয়ারী ও ভাটপাড়া গ্রামে প্রায় ৮০ পরিবার ছুতোর সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। কাঠ কিনে জলচৌকি, কাঠের বিভিন্ন খেলনা, খেলনা ঢেকি, পিঁড়ি, বেলুন, বটির পটনে, দা ও কাঁচির আছাড়ী, টেবিল, চেয়ার প্রভৃতি তৈরী করে বিভিন্ন হাট, বাজার ও মেলায় বিক্রি করে ছুতোর সম্প্রদায়ের মানুষ জীবিকা অর্জন করে। 

রাজমিস্ত্রি- শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুরকে রাজমিস্ত্রির গ্রাম বলা যায়। এখানে দেড়শাধিক রাজমিস্ত্রি পরিবার বাস করে। ইট, বালু, সিমেন্ট এর ভবন তৈরী করে জীবিকা অর্জন করে। এই গ্রাম একদা জলাবদ্ধ হয়ে পড়তো। গ্রামটিতে অভাব লেগে থাকতো সারাবছর। পরবর্তীতে নইম মিস্ত্রির মাধ্যমে এই গ্রামটিতে রাজমিস্ত্রি সম্প্রদায়  বাড়তে থাকে। শত্রজিৎপুরে গোষ্ঠিবদ্ধ হয়ে রাজমিস্ত্রি সম্প্রদায়ের মানুষের বাস থাকলেও জেলার সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু রাজমিস্ত্রি পরিবার দেখা যায়। 

প্রামানিক- শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের পয়ারী, বনগ্রাম, ভাটপাড়া ও শত্রুজিৎপুর গ্রামে প্রামানিক সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে। এছাড়া মাগুরা পৌরসভাধীন ছোটফালিয়া গ্রামে প্রামানিক সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রামানিক সম্প্রদায়ের বসতি ব্যাপব হলেও মাগুরা সদরের অন্য এলাকায়ও প্রামানিক সম্প্রদায়ের কিছু বসতি রয়েছে। এ সম্প্রদায়ের মানুষ চুল দাড়ি কেটে জীবীকা অর্জন করে। শীল বা পরামানিক স¤প্রদায় বাস করে গোপালগ্রাম ইউনিয়নের বাহারবাগ গ্রামে ও বাওয়াতি স¤প্রদায় বাস করে শিয়ালজুড়ি গ্রামে। বরই গ্রামেও শীল সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ বাস করে। 

তথ্যপ্রদানকারীঃ 

লিয়াকত আলী মুন্সী, চেয়ারম্যান, গোপালগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ 

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, চেয়ারম্যান, কুচিয়ামোড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মাগুরা 

খন্দকার মহব্বত আলী,  চেয়ারম্যান, বেরোইল পলিতা ইউনিয়ন পরিষদ, মাগুরা

মোঃ.কেছমত আলী ও মোঃ ছেকেন্দার আলী, সদস্য চাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ

মোঃ অলিয়ার রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, জগদল ইউনিয়ন পরিষদ 

আঃ লতিফ বিশ্বাস চেয়ারম্যান, মঘী ইউনিয়ন পরিষদ

মোঃ বকুল মুন্সী (৬০), দক্ষিণ মির্জাপুর, গ্রামপুলিশ

মোঃ রেজাউল করিম, প্রাক্তন ইউপি মেম্বর, হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ

মোঃ খবির আহমেদ, সচিব, কছুন্দি ইউনিয়ন পরিষদ

প্রফেসর মুন্সি আজীজুল হক (অব), হাজীপুর, মাগুরা

মন্তব্য: