1. সদর

মাগুরা সদরের মাজার ও খানকা শরীফ

হযরত পীর মোর্করম আলী শাহ (রহঃ) এর মাজার ও দরগা শরীফঃ হযরত পীর মোর্করম আলী শাহ (রহঃ) এর মাজার ও দরগা শরীফ মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামে অবস্থিত। মাগুরা শহর থেকে এটি পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এখানে আনুমানিক ১৪৪২ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত পুরনো মসজিদ (পরবর্তীতে সংস্কারকৃত), ঈদগাহ ও পীর সাহেবের খননকৃত দু’টি পুকুর রয়েছে। মসজিদটি পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট ছিল। তার ধবংসাবশেষ এর কিছু অংশ রেখে দিয়ে বাকি অংশের সংস্কার করা হয়েছে। দরগার জমিজমা সবই পীর মোর্কারম আলী শাহ সাহেবের নামে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। বিভিন্ন রোগমুক্তির আশায় ও নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান লাভের আশায় এখানে বিভিন্ন প্রকার জিনিষ যেমন ছাগল, মুরগী মানত করে। অনেকে রান্না করে নিয়ে এসে এখানে নিজেরা খায় এবং মাদ্রাসার ছেলেদের খাবার বিতরন করে। এখানে বাংলা সনের ২০ ও ২১ মাঘ দু’দিন বাৎসরিক মাহফিল হয়। এখানে একটি আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কথিত আছে ইংরেজ টুরি সাহেব ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার সময় দরগাহ শরীফকে তাচ্ছিল্য করে পায়ে ঝাড়ি মারলে তার পা অবশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি ভুল স্বীকার করে ৩.৫০ একর জমি পীর সাহেবের নামে লিখে দেন। এই জমির কোন খাজনা দেওয়া লাগতো না। 

সৈয়দ শাহ পীর কালানদার এর দরবার শরীফঃ ষোড়শ শতাব্দিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সৈয়দ শাহ কালান্দার ধর্ম প্রচারের উদ্যেশ্যে আলোকদিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এখানে আজও রয়েছে পীরের স্থাপিত দরবার শরীফ। দরবার শরীফ আর এই পীর পরিবারের রয়েছে অনেক ঐতিহ্য। অতীতে এই পীর পরিবারের সদস্যরা আরবী, ফার্সী ও উর্দু ভাষায় পন্ডিত ছিলেন। নবাব আমলে এই পরিবারের সদস্য সৈয়দ মোল্যা শের আলী মিশর আল আযহার থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জ করে পান্ডিত্য অর্জন করেন। নবাব আলীবর্দি খাঁ’র দৌহিত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাল্যকালে তাকে গৃহশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। তার সম্মানের স্বীকৃতিস্বরূপ আলোকদিয়া গ্রামকে নিস্কর গ্রাম হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এই পরিবারের কৃতি সন্তান প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসান, ড. সৈয়দ আলী আশরাফ, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হুসাইন, ড. আলী নকী জাতীয় ও আন্তার্জাতিক অঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।  আর দরবার শরীফটি একাধারে ওলি কামেলদের দরবারখানা ও জমিদারী কাচারী হিসাবে ব্যবহৃত হতো। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীও শির নত করেছে এই দরবার শরীফে। মুক্তিযোদ্ধারাও আসতেন পীর সৈয়দ জাফর সাদেক এর কাছে দেয়া চাইতে।  জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এই পীরের দোয়া নিতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতো পীরের কাছে। এখনও অনেক মানুষ রোগমুক্তির আশায় এখানে বিভিন্ন ধরনের মানত করে থাকে। লোকমুখে ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এই পরিবারের পূর্বপুরুষদের অনেক অলৌকিক কাহিনী শোনা যায়। একবার সৈয়দ শাহ পীর কালান্দার পীর কামেলদের দরবারে আমন্ত্রন পেয়েছিলেন। অন্য পীরেরা আধ্যাতিœক সাধনা বলে বিভিন্ন প্রানীকে বশ মানিয়ে কেউ ভল্লুক, কেউ বাঘ, কেউ সিংহ, কেউ অজগর সাপের পিঠে ভর করে দরবারে অংশগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু পীর কালান্দার মাটিকে বশ মানিয়ে মাটির দেওয়ালে চড়ে দরবারে অংশগ্রহন করেছিলেন। এই দৃশ্যে অন্যান্য পীরগন মুগ্ধ হয়ে তাকে ইমাম বানিয়ে তার পেছনে নামাজ পড়েন। এছাড়াও পীরের স্পর্শে তালগাছের জট তালে পরিনত হওয়া, শশা গাছ লাগিয়ে স্নান সেরে এসে শশা খাওয়া, গাছে ফল ধরে না এমন গাছ স্পর্শে ফল ধরা ইত্যাদি অনেক অলৌকিক কাহিনী শোনা যায় এলাকাবাসীর মুখে মুখে। অনেক সংস্কার করা হয়েছে দরবার শরীফকে কিন্তু হারিয়ে যেতে বসেছে পরিবারের ঐতিহ্য। বর্তমানে পরিবারের চতুর্দশতম প্রজন্ম বাস করছে এখানে।

                    তথ্যঃ সাইয়েদ ফরহাদ হুসাইন, পীর পরিবারেরে ত্রয়াদশ প্রজন্মের সদস্য

পুখরিয়া গ্রাম্য শালিশী খানকাঃ বগিয়া ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম মীর তৈয়ব হোসেন এর বাড়িতে নির্মিত খানকাটি প্রাচীন শালিশী ব্যবস্থার স্বাক্ষী হয়ে আছে। চেয়াম্যানের বড় ভাই মীর আক্তার হোসেন খানকাটি নির্মাণ করেছিলেন। এখানে জেলার বিভিন্ন গ্রাম্য শালিশ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এখনও খানকাটির প্রাচীন অবয়ব ধরে রাখা হয়েছে। পূর্বে এই খানকায় পুলিশী ক্যাম্প বসে অপরাধের তদন্ত করা হতো। যে দল ক্ষমতায় থাক না কেন অত্র অঞ্চলের গ্রাম্য শালিশ সম্পাদনে এই খানকাটিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খানকাটি ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভাজনের আগে তৈরী করা হয়। মীর তৈয়ব হোসেন ১৯৪৮ সালের ৩ মার্চ তারিখে প্রথমবারের মত বগিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু তার জনসেবার দরুণ তিনি জীবনের শেষদিন অব্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৮ মে চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।  

                    তথ্যঃ মোছাঃ রাবেয়া খানম, মীর তৈয়ব হোসেন পতিœ   

মন্তব্য: