1. লোক

মাগুরার লোকবাদ্য

মাগুরা জেলা লোক সঙ্গীতের জন্য একটি উর্বর ভূমি। এ জেলায় জন্মগ্রহন করেছেন লোকজ গানের অসংখ্য শিল্পী। এসব শিল্পীদের অনেকের নাম মানুষের মন থেকে ইতিমধ্যেই মুছে গেছে। শুধু বেঁচে আছে তাদের কিছু গান তাদেরই শিষ্যদের মুখে মুখে। মাগুরা কিছু লোকজ-শিল্পী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোকসঙ্গীত গেয়ে জেলার সুনাম বয়ে আনলেও আধুনিক ও পশ্চিমা গানের জয়যাত্রায় হারাতে বসেছে এ অঞ্চলের লোকজ গানের মোহিনী সুর। আর প্রবীন শিল্পীরা যারা জীবিত আছেন, তাঁরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে দিন কাটাচ্ছেন। 

মাগুরা জেলায় মূলত যে সব লোকজ গানের প্রাচুর্য রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জারিগান, ভাবগান, কবিগান, ধুয়াগান, বাউলগান, পালাগান, গাজীরগান, অষ্টকগান, মেয়েলীগীত, দেহতত্ত¡, গুরুপদি, শিষ্যপদি, আঞ্চলিক গান, গাতার গান প্রভৃতি। এসব গান পরিবেশনেও বিভিন্ন লোকবাদ্য ব্যবহার করা হয়। মাগুরা সদর উপজেলার বিভিন্ন লোকজ গানের শিল্পীর সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন মিউজিক হাউজ পরিদর্শনের মাধ্যমে নিম্নে উল্লেখিত লোক বাদ্যের পরিচয় পাওয়া যায়।

ডুগী-তবলাঃ ডুগী-তবলা বিভিন্ন ধরনের লোকজ গান ছাড়াও পল্লীগীতি, লালনগীতি, আধুনিক গান, নজরুলগীতি ও রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার অনন্য বাদ্য যন্ত্র। ডুগী বাদ্যটি বাম হাতে ব্যবহার করা হয়। এটি মাটি অথবা স্টিল দ্বারা তৈরী করা হয়। ডুগী তবলার চেয়ে আকৃতিতে বড়। খাসীর চামড়া অথবা গরুর চামড়া দ্বারা ডুগীর উপরি অংশ ছেয়ে দেওয়া হয়। চামড়ার মাঝখানে খীরন লাগিয়ে দেওয়া হয় যেটি লোহার গুড়া ও ভাত দ্বারা তৈরী করা হয়। ডান হাতে ব্যবহার করা হয় তবলা। নিম কাঠ অথবা আম কাঠ দ্বারা তবলা তৈরী করা হয়। উপরের অংশ ছাওয়া হয় গরুর চামড়া অথবা খাসীর চামড়া দ্বারা। তবলায়ও খীরন ব্যবহার করা হয়। 

একতারাঃ বাউলগান ও লালনের গানে একতারা ব্যবহার করা হয়। এখতারা তৈরী করতে খাসির চামড়া ব্যবহার করা হয়। একতারার একপাশে থাকে খোল। খোলটি লাউয়ের খোল, আমকাঠ অথবা নিমকাঠ দ্বারা তৈরী করা যায়। কোন কোন একতারায় নারিকেলের মালাও ব্যবহার করা হয়। একটি স্টিল তার ব্যবহার করা হয়। খোলটি সংযুক্ত থাকে বাঁশের চেরা দ্বারা। চেরার অপর পাশে থাকে কান। কান ঘুরিয়ে তার টাইট দেওয়া হয় এবং সুরের স্কেল নির্ধারণ করা হয় কান মুড়িয়ে।  

দোতরাঃ জারীগান ও ভাবগানে দোতরা ব্যবহার করা হয়।  দোতরা নাম হলেও এই বাদ্যটিতে তার থাকে চারটি। এবং তারগুলো স্টিলের। দোতরা তৈরী করতে নিমকাঠ অথবা আমকাঠ ব্যবহার করা হয়। দোতরার চিকন প্রান্তে হাঁস অথবা পাখির চিত্র আঁকানো থাকে। কানে তার বাধা থাকে। অন্য পাশে থাকে খোল। খোলটি চামড়া দ্বারা ঢাকা থাকে। 

ডাঙ্কাঃ প্লেনসীট বৃত্তাকার করে উভয় পাশে খাসীর চামড়া ব্যবহার করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিয়েতে, জন্মাষ্টমী ও রথযাত্রায় এই বাদ্যটি ব্যবহার করা হয়।  এছাড়াও বিভিন্ন র‌্যালীতে, খেলাধুলায় ও নির্বাচনী প্রচারণী কাজে এই বাদ্যটি ব্যবহার করা হয়। ডাঙ্কার সাথে যে সব বাদ্য বাজানো হয় সেগুলো হলো কাশি, বাঁশি, কাঠিঢোল ও সানাই। এই বাদ্যগুলোর সমন্বয়ে মাগুরার নতুন বাজার এলাকায় দুটি ব্যান্ড পার্টি রয়েছে যারা বিভিন্ন উপরোক্ত পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে জীবীকা অর্জন করে। মাগুরার শত্রæজিৎপুর এলাকায়ও এধরনের ব্যান্ড পার্টি রয়েছে। 

অন্যান্য লোকবাদ্যগুলো নিম্নরূপঃ

খোলঃ নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আধুনিক গান গান গাইতে খোল ব্যবহার করা হয়।

নালঃ  নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আধুনিক গান গান গাইতে খোল ব্যবহার করা হয়।

বাংলা ঢোলঃ জারীগান, ভাবগান গাইতে বাংলা ঢোল ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটি কাঠি দ্বারা বাঁজানো হয়। 

ঢোলকঃ অষ্টক গান গাইতে ঢোলক ব্যবহার করা হয়। 

ড্রামঃ কুচকাওয়াজের সময় ড্রাম বাজানো হয়। 

খঞ্জনীঃ ভাবগানে খঞ্জনী ব্যবহার করা হয়।

জীবসীঃ জারিগানে জীবসী বাদ্যটি ব্যবহার করা হয়। 

জুড়ী/মন্দিরাঃ সব ধরনের লোকজ গানেই জুড়ী ব্যবহার করা হয়। লোকজ গান ছাড়া অন্যান্য গানেও জুড়ী বা মন্দিরা ব্যবহার করা হয়।

বায়াঃ কোমরে বেধে শিল্পীরা লোকজ গান পরিবেশন করে থাকেন।

বাঁশের বাঁশিঃ মাগুরা লোকসঙ্গীত পরিবেশনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন মোহনীয় সুরসমৃদ্ধ বাদ্য হলো বাঁশের বাঁশি। মাগুরা অঞ্চলে বাঁশি তৈরী না হলেও পার্শবর্তী ফরিদপুর জেলা থেকে বাঁশি আমদানি করা হয় এ জেলায়। বাঁশের বাঁশি অন্যান্য গান যেমন পল্লীগীতি, নজরুল গীতি, রবীন্দ্র সংগীত ও উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশনেও এই বাঁশির ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন আকৃতির বাঁশি বাঁশি বাজানো গানের বিভিন্ন স্কেল ধরার জন্য। মাগুরার বিভিন্ন মেলায় শিশুদের খেলনা বাঁশিসহ প্রকৃত বাঁশিও বিক্রি হতে দেখা যায় প্রচুর পরিমানে। 

মাগুরা শহরের জামরুল তলা এলাকায় একটি এবং নতুন বাজার এলাকায় তিনটি লোকবাদ্য তৈরীর কারখানা রয়েছে। নতুনবাজার ও কেশবমোড় এলাকায় হারমোনিয়াম তৈরীর দোকানও রয়েছে। বনমালী মিউজিক হাউজ, জামরুলতলা, মাগুরা পরিদর্শন কালে জানা যায় এ কারখানার মালিক ৩০ বছর যাবৎ আমাদের লোকজ যন্ত্রাদি তৈরী করছেন।

তথ্যঃ 

বিমল দাস

বয়সঃ ৫০ বছর

গ্রামঃ পারনান্দুয়ালী মুন্সিপাড়া, মাগুরা। 

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন। 

জগদ্বীশ দাস 

পিতাঃ বিমল দাস

বয়সঃ ২৬ বছর

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন। 

মন্তব্য: